নওগাঁ ১২:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

নওগাঁর রাজনীতি : আওয়ামী লীগের আধিপত্য : বিএনপিতে বিভক্তি

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, লোকমান আলী, নওগাঁ, ৭ নভেম্বর ২০১৯ :

ছয়টি সংসদীয় আসন, ১১টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। জেলাজুড়ে রাজনীতির মাঠ দখল করে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী এ জেলায় ক্ষমতার তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য গড়ে উঠেছে। জেলার সর্বত্র একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামী লীগের।


অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজনীতির মাঠে নেই দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বিএনপি। ফলে নওগাঁর কোথাও বিএনপির শক্ত অবস্থান নেই। একই সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে রয়েছে বিভক্তি। সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জোহা খানকে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত করার সময় থেকেই বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সেই অন্তদ্বন্দ কোনোভাবেই বিএনপি এখন পর্যন্ত নিরসন করতে পারেনি। অন্যদিকে মাঠে নেই জাতীয় পাটি। জাতীয় পার্টি দায়সারাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে থাকে।


আওয়ামী লীগ: নওগাঁর ৬টি সংসদীয় আসনের ছয়টিই মহাজোটের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ-১ (পোরশা-সাপাহার ও নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, নওগাঁ-২ (পতœীতলা-ধামইরহাট) আসনের সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দীন দরফদার এমপি, নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক, নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন এমপি ও নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি।


তিনটি উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-১ আসন গঠিত। সীমান্তবর্তী এলাকায় এ আসনে পরপর তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তার নির্বাচিত এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সবার কাছে তিনি কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে। তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অভিযোগ হলো সব উন্নয়ন তিনি তার নিজ এলাকায় করছেন।


জেলার বৃহৎ উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। ২০০৫ সালের ১১ মে সিলেকশনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আলহাজ মোল্লা এমদাদুল হককে সভাপতি ও স ম জসিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই এক কমিটি দিয়ে গত ১৪ বছর ৫ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এ কমিটির কয়েকজন মারাও গেছেন। আবার নিয়মবহিভর্‚তভাবে এ কমিটিতে কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবীও রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে এক কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর ফলে সংগঠনই অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সবকিছু কুক্ষিগত করে রেখেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ইতোপূর্বে দুইবার সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তা স্থগিত হয়ে যায়।


নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন এমপি। বয়সের দিক থেকে তিনি সর্বকনিষ্ট সংসদ সদস্য। তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরপর দুই বারের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে মাঠে তেমন আর দেখা যায় না। তার নির্বাচনি ওয়াদা তিনি অনেক অংশেই পূরণ করতে পারেননি। নিজের মতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করাসহ নানা কারণে তিনি বিতর্কিত। এসব কাজের জন্য তিনি দলে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এমনকি তার পরিবারের কাজে এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছিল। তার এমন বিতর্কিত কাজের জন্য তিনি দলে এবং এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।


এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘সন্ধ্যায় অফিসে এলে কথা বলব’ বলে ফোন কেটে দেন। বিএনপি আমলে নওগাঁ-৬ আসন রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের এলাকা বলে পরিচিত এটি। মানুষকে জবাই করা হত গরু-ছাগলের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এলাকায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেখানে এখন শান্তির বাতাস বইছে।

বিএনপি : মামলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জেলা বিএনপির রাজনীতি এক প্রকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। জেলা ও উপজেলা কমিটি নিয়ে বিতর্ক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয়তা ও দীঘদিন ধরে উপজেলা কাউন্সিল না হওয়ার কারণে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে দলটিতে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও অস্তিত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপি চলছে আহবায়ক কমিটি দিয়ে।


জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। নওগাঁ-১ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে কোনো উপজেলায়ই বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সালেক চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দুটি গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়ামতপুরে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওয়াহেদ আলী নিহত হন। এ ঘটনায় ডা. সালেক চৌধুরীর সমর্থক থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাদরুল আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।


নওগাঁ-২ আসনের উপজেলায় টাকার বিনিময়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে আহবায়ক মাস্টার হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২৯ আগস্ট সংযোজন ও সংশোধন করে আহŸায়ক হাফিজুর রহমান তার একক স্বাক্ষরে চ‚ড়ান্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি গঠন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলে নানা সমালোচনা। যোগ্য নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে নতুনদের স্থান পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে থাকেন।


নওগাঁ জেলা বিএনপির আহবায়ক মাস্টার হাফিজুর রহমান বলেন, ভালোই চলছে নওগাঁ জেলা বিএনপি। আমার বিরুদ্ধে যেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর অর্থ নিয়ে কমিটি দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। কেন্দ্রে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। নিয়ামতপুরে নিহতের ঘটনায় দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহাদেবপুরে পাল্টাপাল্টি কমিটির বিষয়ে আমার জানা নেই।


নওগাঁ-৩ আসন নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। এই আসনে তিনটি গ্রুৃপ। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আলহাজ্ব মো: রবিউল আলম বুলেট। অন্যটির নেতৃত্ব দেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও ফজলে হুদা বাবুল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ফজলে হুদা বাবুলকে আর মাঠে তেমন দেখা যায় না।

১১ সেপ্টেম্বর রিয়াছাৎ হায়দার টগরকে আহবায়ক ও জাহিরুল ইসলামকে যুগ্ম আহŸায়ক করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। অন্যদিকে এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে দলের অন্য গ্রুপের নেতারা ১৩ অক্টোবর এসএম আখতার হামিদকে আহবায়ক ও শহিদুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।


জাতীয় পাটি : জেলা জুড়েই কোনো আলোচনা নেই জাতীয় পাটির। উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচিও নেই তাদের। নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন। জাতীয় পার্টির কমিটি থাকলেও সাংগঠনিকভাবে দলটি কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও নেই তৃণমূলের কর্মীদের। এসব কারণেই রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাটি। #

কৃতজ্ঞতা : সময়ের আলো ৬.১১..১৯কৃতজ্ঞতা : সময়ের আলো ৬.১১..১৯

আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁর রাজনীতি : আওয়ামী লীগের আধিপত্য : বিএনপিতে বিভক্তি

প্রকাশের সময় : ১২:০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, লোকমান আলী, নওগাঁ, ৭ নভেম্বর ২০১৯ :

ছয়টি সংসদীয় আসন, ১১টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। জেলাজুড়ে রাজনীতির মাঠ দখল করে আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী এ জেলায় ক্ষমতার তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য গড়ে উঠেছে। জেলার সর্বত্র একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামী লীগের।


অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজনীতির মাঠে নেই দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বিএনপি। ফলে নওগাঁর কোথাও বিএনপির শক্ত অবস্থান নেই। একই সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে রয়েছে বিভক্তি। সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জোহা খানকে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত করার সময় থেকেই বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। সেই অন্তদ্বন্দ কোনোভাবেই বিএনপি এখন পর্যন্ত নিরসন করতে পারেনি। অন্যদিকে মাঠে নেই জাতীয় পাটি। জাতীয় পার্টি দায়সারাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে থাকে।


আওয়ামী লীগ: নওগাঁর ৬টি সংসদীয় আসনের ছয়টিই মহাজোটের দখলে রয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ-১ (পোরশা-সাপাহার ও নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, নওগাঁ-২ (পতœীতলা-ধামইরহাট) আসনের সংসদ সদস্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দীন দরফদার এমপি, নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক, নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন এমপি ও নওগাঁ-৬ (রানীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি।


তিনটি উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-১ আসন গঠিত। সীমান্তবর্তী এলাকায় এ আসনে পরপর তিন বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি এলাকায় জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। তার নির্বাচিত এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সবার কাছে তিনি কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়েছে। তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের অভিযোগ হলো সব উন্নয়ন তিনি তার নিজ এলাকায় করছেন।


জেলার বৃহৎ উপজেলা মান্দা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। ২০০৫ সালের ১১ মে সিলেকশনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে আলহাজ মোল্লা এমদাদুল হককে সভাপতি ও স ম জসিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই এক কমিটি দিয়ে গত ১৪ বছর ৫ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এ কমিটির কয়েকজন মারাও গেছেন। আবার নিয়মবহিভর্‚তভাবে এ কমিটিতে কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবীও রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে এক কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর ফলে সংগঠনই অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সবকিছু কুক্ষিগত করে রেখেছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ইতোপূর্বে দুইবার সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তা স্থগিত হয়ে যায়।


নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন এমপি। বয়সের দিক থেকে তিনি সর্বকনিষ্ট সংসদ সদস্য। তিনি তার পিতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।


বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরপর দুই বারের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে মাঠে তেমন আর দেখা যায় না। তার নির্বাচনি ওয়াদা তিনি অনেক অংশেই পূরণ করতে পারেননি। নিজের মতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করাসহ নানা কারণে তিনি বিতর্কিত। এসব কাজের জন্য তিনি দলে এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এমনকি তার পরিবারের কাজে এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছিল। তার এমন বিতর্কিত কাজের জন্য তিনি দলে এবং এলাকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।


এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘সন্ধ্যায় অফিসে এলে কথা বলব’ বলে ফোন কেটে দেন। বিএনপি আমলে নওগাঁ-৬ আসন রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। সর্বহারা ও বাংলা ভাইয়ের এলাকা বলে পরিচিত এটি। মানুষকে জবাই করা হত গরু-ছাগলের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এলাকায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেখানে এখন শান্তির বাতাস বইছে।

বিএনপি : মামলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জেলা বিএনপির রাজনীতি এক প্রকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। জেলা ও উপজেলা কমিটি নিয়ে বিতর্ক, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয়তা ও দীঘদিন ধরে উপজেলা কাউন্সিল না হওয়ার কারণে নেতৃত্ব শূন্যতা দেখা দিয়েছে দলটিতে। এ অবস্থায় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও অস্তিত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপি চলছে আহবায়ক কমিটি দিয়ে।


জেলা বিএনপির আহবায়ক হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। নওগাঁ-১ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে কোনো উপজেলায়ই বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সালেক চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দুটি গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়ামতপুরে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওয়াহেদ আলী নিহত হন। এ ঘটনায় ডা. সালেক চৌধুরীর সমর্থক থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছাদরুল আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।


নওগাঁ-২ আসনের উপজেলায় টাকার বিনিময়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে আহবায়ক মাস্টার হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২৯ আগস্ট সংযোজন ও সংশোধন করে আহŸায়ক হাফিজুর রহমান তার একক স্বাক্ষরে চ‚ড়ান্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি গঠন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলে নানা সমালোচনা। যোগ্য নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে নতুনদের স্থান পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে থাকেন।


নওগাঁ জেলা বিএনপির আহবায়ক মাস্টার হাফিজুর রহমান বলেন, ভালোই চলছে নওগাঁ জেলা বিএনপি। আমার বিরুদ্ধে যেসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর অর্থ নিয়ে কমিটি দেওয়ার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। কেন্দ্রে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। নিয়ামতপুরে নিহতের ঘটনায় দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহাদেবপুরে পাল্টাপাল্টি কমিটির বিষয়ে আমার জানা নেই।


নওগাঁ-৩ আসন নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। এই আসনে তিনটি গ্রুৃপ। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আলহাজ্ব মো: রবিউল আলম বুলেট। অন্যটির নেতৃত্ব দেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও ফজলে হুদা বাবুল। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে ফজলে হুদা বাবুলকে আর মাঠে তেমন দেখা যায় না।

১১ সেপ্টেম্বর রিয়াছাৎ হায়দার টগরকে আহবায়ক ও জাহিরুল ইসলামকে যুগ্ম আহŸায়ক করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। অন্যদিকে এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে দলের অন্য গ্রুপের নেতারা ১৩ অক্টোবর এসএম আখতার হামিদকে আহবায়ক ও শহিদুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।


জাতীয় পাটি : জেলা জুড়েই কোনো আলোচনা নেই জাতীয় পাটির। উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচিও নেই তাদের। নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন। জাতীয় পার্টির কমিটি থাকলেও সাংগঠনিকভাবে দলটি কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকায় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও নেই তৃণমূলের কর্মীদের। এসব কারণেই রাজনীতির মাঠ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাটি। #

কৃতজ্ঞতা : সময়ের আলো ৬.১১..১৯কৃতজ্ঞতা : সময়ের আলো ৬.১১..১৯