মহাদেবপুর দর্পণ, বাবুল আকতার, সাপাহার (নওগাঁ), ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ :
নওগাঁর সাপাহারে প্রতিবন্ধি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানো প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়টি অর্থাভাবে এখন নিজেই প্রতিবন্ধি হয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।
এলাকার এক শিক্ষিতি বেকার যুবক মো: লুৎফর রহমান এক সময় উপজেলা সদরে একটি কোচিং সেন্টার খুলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছেলে মেয়েদের লোখা পড়া শেখাত। ২০১৭ সালে তার মাথায় একটি ব্যতিক্রমী চিন্তা আসে। সেই থেকে তিনি উপজেলার অবহেলিত প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। তিনি উপজেলা সদরে অবস্থিত তার কোচিং সেন্টারে কোচিং বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে ওই ভাড়া বাসায় একটি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন তার এই মহতি উদ্যোগেক সহযোগিতা করতে।
বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিবন্ধি ছেলেমেয়েদের খুজতে থাকেন তিনি।
স্বল্প সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নজরে আসে। শুরু হয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারী প্যাটান্ট পুরণের অভিযান। এক সময়ে প্যাটান্টটি পূর্ণও হয়।
চলতে থাকে তার ভাড়া করা কোচিং সেন্টারে প্রতিবন্ধি বিদ্যলয়ে প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েদের পরিচর্যা ও লেখাপড়া শেখানোর কাজ।
শুরু থেকে বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে কোন প্রকার চার্জ বা ফি না নিয়েই ওই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারী নিজ উদ্যোগে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালা করে আসছেন। এমন কি তারা তাদের দেয়া চাঁদার টাকা ও সমাজের বিভিন্ন লোকের দেয়া আর্থিক সহযোগিতা হতে প্রতিদিন প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীদের টিফিনেরও ব্যাবস্থা করে থাকেন।
প্রতিবন্দ্বী ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সমস্যা হলে সাপাহার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আকবর আলী ও তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামসুল আলম শাহ্ চৌধুরীর উদ্যোগে পরিষদ হতে তিনটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান অনুদান দেয়া হয় বিদ্যালয়টিতে। এতে শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার সমস্যা দূর হয়।
বর্তমানে বিদ্যালয়টি সেই ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে আলহাজ্ব শামসুল আলম শাহ চৌধুরীর উদ্যোগে উপজেলা সদরের মহিলা কলেজ রোডে অবস্থিত মাহবুব উজ্জামান পাবলিক গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের আর বাসা ভাড়ার টাকা গুনতে হয়না। কর্মরত শিক্ষক মন্ডলী ভবিষ্যৎ বেতন ভাতাদির আশায় বিনা বেতনে নিজের টাকা খরচ করে প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের ভ্যান গাড়ীগুলো বিকল হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাভাবে তারা বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণ ও বিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী ভ্যানগুলো মেরামত করতে পারছেন না।
ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবন্ধি বিদ্যালয়টি চরম অর্থ সংকটে পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। উপজেলার প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েদের অভিভাবক ও বিনা বেতনে পাঠদানকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী সমাজের অবহেলীত ও অসহায় প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েদের যতেœ এবং তাদের লেখা পড়া শিখিয়ে দেশের কাজে লাগানোর জন্য সমাজের বিত্তবান ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। #