
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২৪ জানুয়ারী ২০২০ :
জীবনের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে কোনক্রমেই এঘটনা মেনে নেয়া যায়না। একটা জীবনের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িয়ে থাকে। একটি জীবনের অকাল পরিসমাপ্তি, অনেক জীবনকে ভোগান্তিতে ফেলে। অনেক সময় এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে অনেক ভাল জীবন নষ্ট হয়ে যায়।
যে কাজে জীবন চলে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা থাকে, তেমন কাজ আমরা কেন করতে যাবো?
যে পেশায় যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে জেনে শুনে এমন পেশায় মানুষকে কেন নিয়োগ করবো?
পেশাটিকে বৈধ, নিষ্কন্টক করছিনা কেন? যারা দায়িত্বে তাদের কি কিছুই করার নেই?
এ পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে নওগাঁর যারা মারা গেছেন তাদের সবাই ছাপোষা গরীব রাখাল। মহাজনেরা টাকা খাটিয়ে মোটা কামাই করেন। ভারতে গিয়ে কোন দিনই গরু তারা কেনেন না। তাদের টাকা নিয়ে রাখাল দল ভারতের হাটে গরু কিনে এনে দেন। এর বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক পান, তা নিতান্তই নগন্য।
কিন্তু মৃত্যু ঝুকিটা নিতে হয় তাদেরই। সামান্য কামলা খেটে টাকা কামাই করতে তাদের যেতে হয় এটা জেনেই যে, যে কোন সময় বিএসএফের হাতে ধরা পড়তে হতে পারে। হতে পারে তাদের হাতে পিটন খেয়ে অথবা গুলি খেয়ে মৃত্যু।
এমন পেশায় যারা পাঠাচ্ছে, চোরাকারবারী তারাই। তারা এমন পেশায় অসহায় মানুষদের নিয়োগ করতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায় কার?
রাখালরা গরু কেনার জন্য ভারতে ঢুকছেন অবৈধ পথে। তারা সেখানকার হাট থেকে টাকা দিয়ে, হাটের খাজনা পরিশোধ করে গরু কিনছেন। তারা সেখান থেকে চুরি করে গরু আনছেন না। তাহলে শুধু যাবার বিষয়টি কেন বৈধ পথে হচ্ছেনা?
এ পর্যন্ত অবৈধ পথে গরু কিনতে যাবার সময় কখনোই বিএসএফ বাংলাদেশী রাখালদের বাধা দেয়নি। প্রতিবার টাকা দিয়ে গরু কিনে ফিরে আসার সময় তাদের উপর হামলা করে সর্বস্বান্ত করা হয়। ভারতের পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে বাংলাদেশে গরু চোরাচালানে বিএসএফ জড়িত।
ভারতে অবৈধভাবে গিয়ে বাংলাদেশী রাখালরা গরু কিনে আবার অবৈধ পথেই ফিরে আসেন। এতে ভারত সরকারের কর ফাঁকি দিলেও বাংলাদেশ সরকারের বৈধতার সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে ঠিকই। কড়িডোরে কর দিতে হচ্ছে ঠিকই। অভিযোগ করা হয়েছে যে, পোরশার নিতপুর কড়িডোরে একজোড়া গরুর বৈধতার সার্টিফিকেট নিতে সরকার নির্ধারিত ফি এক হাজার টাকা। ক্যাশ মেমোতেও এক হাজার টাকাই লেখা হয়। কিন্তু বাস্তবে দিতে হয় নগদ দশ হাজার টাকা।
এমন ঝুকিপূর্ণ পেশা বন্ধ করতে হবে সরকারকেই। এজন্য বিভিন্ন সময় সীমান্তগুলোতে রাখালরা যাতে অবৈধ পথে ভারত না যায় সে ব্যাপারে একাধিকবার সচেতনতামূলক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এতেই দায়িত্ব শেষ করলে চলবেনা।
সরকারকে বৈধ পথে গরু আনার সহজ সিস্টেম চালু করতে হবে।
মৃত্যু ঝুকি নিয়ে কেউ যাতে গরু আনতে না যায় তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে সরকারী যন্ত্রকেই এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে একশ’ ভাগ।
যে কোন অযুহাতই দেখানো হোক না কেন, কোন সভ্য দেশে এমন চলতে পারেনা। একদিনে শুধু নওগাঁতেই ৩ জন, আর সারাদেশে ২৪ ঘন্টায় বিএসএফের গুলিতে ৫ বাংলাদেশী রাখালের মৃত্যুকে কোন ক্রমেই মেনে নেয়া যায়না।
আমরা ওদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। কামনা করি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে এ কষ্ট বয়ে বেড়াবার শক্তি দিন।
আগামীতে এ ধরনের আর কোন ঘটনার খবর আমরা লিখতে চাইনা। যেন লিখতে না হয়, তার দায়িত্ব নিতে হবে, যাদের উপর দায়িত্ব দেয়া আছে তাদেরকেই। #