নওগাঁ ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

আত্রাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্তি শীতা তলার জামাই মেলা

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, রওশন আরা পারভীন শিলা, আত্রাই (নওগাঁ), ১৫ জানুয়ারী ২০২০ :

নওগাঁর আত্রাইয়ে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী শীতা তলার মেলা। প্রকৃতপক্ষে এক দিনের মেলা হলেও মেলার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এবং পৌষ মাসের শেষ দিন হয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা। পরের দিন বৌ মেলা হিসেবে কেনা বেঁচা হয়।

প্রতিবছর এ মেলা পৌষ মাসের শেষ ও মাঘের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার ভোঁ-পাড়া ইউপির জামগ্রাম মাঠে একটি বটগাছের নীচে।

যুগ যুগ থেকে সাজ সাজ রবে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। জনশ্রুতি রয়েছে কয়েক যুগ আগে নারায়ণ চন্দ্র তার স্ত্রী শীতাকে জামগ্রামের এ মাঠে বনবাস দিয়েছিলেন। আর এ বনবাসে শীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন এ বটগাছের নীচে।

এখানে সেই প্রাচীন যুগের একটি ইন্দারা (কুয়া) স্মৃতি হিসেবে আজও বিদ্যমান। আর এ ইন্দারার (কুয়া) জলে নাকি শীতা স্নান করতেন।

তারই স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় পরবর্তীতে এই জামগ্রামে মেলা বসিয়ে পূঁজা অর্চনার মধ্য দিয়ে এই দিনটিকে স্মরণ করে আসছেন।

ইতিপূর্বে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এ মেলাতে এখন হিন্দু মুসলিম সকলেই অংশগ্রহণ করেন। মেলাটি এখন সকলের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। মেলাকে ঘিরে এখানে দিন ব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করেছে।

জামাই মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন সহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। জামগ্রাম সহ আশে-পাশের গ্রাম গুলো প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই অতিথিদের সন্মানে পিঠা-পুলি, মিঠাই-মিষ্টান্ন সহ রকমারি খাবারের ধুম পড়ে যায়।

এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায় সব বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটেছে। গত মঙ্গলবারের মধ্যেই অনেকেরই জামাই-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন প্রতিটি বাড়িতে এসে গেছেন।

দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এ মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেঁচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা।

জামগ্রামের আশ-পাশের গ্রামে যাঁরা বিয়ে করেছেন, সে সব জামাই হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সব চেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে।

একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের ভীষণ জটলা। মাছের নাম চিতল। বিক্রেতা দাম হাঁকান ১২শ’ টাকা কেজি। একটি মাছের ওজন ৬/৭ কেজি। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় জামগ্রাম এলাকার জামাই আলীমুদ্দিন শেখ মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮হাজার ৪শ’ টাকা বলেছেন কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতার সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতার ভিড় মাছটি দেখার জন্য।

বুধবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জাম গ্রামের শিতা তলার মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই এর বাহির থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলা সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়।

বগুড়ার শেরপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা থেকে এ মেলা উপলক্ষেই আত্রাইয়ের জামাগ্রাম শীতা তলার মেলায় এসেছেন।

এবারও মেলায় শতাধীক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টান্ন ইত্যাদির দোকান বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক, চিতল, বাঘা আইর, আইড়, বোয়াল, কাতল, রুই, সিলভার কাপ, গলদা চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন রকমের দেশীয় মাছ।

জামগ্রাম শীতা তলা মেলার আয়োজকরা জানান, এ মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হত খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হত। প্রায় ১শ’ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে।

সময়ের সাথে সাথে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মোসলেম উদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হানিফ জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া জামগ্রামের শীতা তলার মেলা এখন ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে রূপ নিয়েছে। এ মেলা আত্রাই উপজেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

মাছের মেলা সংলগ্ন ভোঁ-পাড়া ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মৃধা জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচা কেনা যতই হোক এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।

মেলার সকল আয়োজন মঙ্গলবারের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মেলা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোসলেম উদ্দিন বলেন, মেলায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। #

আপলোডকারীর তথ্য

আত্রাইয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্তি শীতা তলার জামাই মেলা

প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২০
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, রওশন আরা পারভীন শিলা, আত্রাই (নওগাঁ), ১৫ জানুয়ারী ২০২০ :

নওগাঁর আত্রাইয়ে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী শীতা তলার মেলা। প্রকৃতপক্ষে এক দিনের মেলা হলেও মেলার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এবং পৌষ মাসের শেষ দিন হয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা। পরের দিন বৌ মেলা হিসেবে কেনা বেঁচা হয়।

প্রতিবছর এ মেলা পৌষ মাসের শেষ ও মাঘের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার ভোঁ-পাড়া ইউপির জামগ্রাম মাঠে একটি বটগাছের নীচে।

যুগ যুগ থেকে সাজ সাজ রবে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। জনশ্রুতি রয়েছে কয়েক যুগ আগে নারায়ণ চন্দ্র তার স্ত্রী শীতাকে জামগ্রামের এ মাঠে বনবাস দিয়েছিলেন। আর এ বনবাসে শীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন এ বটগাছের নীচে।

এখানে সেই প্রাচীন যুগের একটি ইন্দারা (কুয়া) স্মৃতি হিসেবে আজও বিদ্যমান। আর এ ইন্দারার (কুয়া) জলে নাকি শীতা স্নান করতেন।

তারই স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় পরবর্তীতে এই জামগ্রামে মেলা বসিয়ে পূঁজা অর্চনার মধ্য দিয়ে এই দিনটিকে স্মরণ করে আসছেন।

ইতিপূর্বে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে এ মেলাতে এখন হিন্দু মুসলিম সকলেই অংশগ্রহণ করেন। মেলাটি এখন সকলের উৎসবে পরিণত হয়েছে।

মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। মেলাকে ঘিরে এখানে দিন ব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করেছে।

জামাই মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন সহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। জামগ্রাম সহ আশে-পাশের গ্রাম গুলো প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই অতিথিদের সন্মানে পিঠা-পুলি, মিঠাই-মিষ্টান্ন সহ রকমারি খাবারের ধুম পড়ে যায়।

এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায় সব বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটেছে। গত মঙ্গলবারের মধ্যেই অনেকেরই জামাই-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন প্রতিটি বাড়িতে এসে গেছেন।

দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এ মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেঁচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা।

জামগ্রামের আশ-পাশের গ্রামে যাঁরা বিয়ে করেছেন, সে সব জামাই হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সব চেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে।

একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের ভীষণ জটলা। মাছের নাম চিতল। বিক্রেতা দাম হাঁকান ১২শ’ টাকা কেজি। একটি মাছের ওজন ৬/৭ কেজি। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় জামগ্রাম এলাকার জামাই আলীমুদ্দিন শেখ মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৮হাজার ৪শ’ টাকা বলেছেন কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতার সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতার ভিড় মাছটি দেখার জন্য।

বুধবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জাম গ্রামের শিতা তলার মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই এর বাহির থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলা সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়।

বগুড়ার শেরপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা থেকে এ মেলা উপলক্ষেই আত্রাইয়ের জামাগ্রাম শীতা তলার মেলায় এসেছেন।

এবারও মেলায় শতাধীক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টান্ন ইত্যাদির দোকান বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক, চিতল, বাঘা আইর, আইড়, বোয়াল, কাতল, রুই, সিলভার কাপ, গলদা চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন রকমের দেশীয় মাছ।

জামগ্রাম শীতা তলা মেলার আয়োজকরা জানান, এ মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হত খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হত। প্রায় ১শ’ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে।

সময়ের সাথে সাথে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মোসলেম উদ্দিন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হানিফ জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া জামগ্রামের শীতা তলার মেলা এখন ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে রূপ নিয়েছে। এ মেলা আত্রাই উপজেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

মাছের মেলা সংলগ্ন ভোঁ-পাড়া ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মৃধা জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচা কেনা যতই হোক এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।

মেলার সকল আয়োজন মঙ্গলবারের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মেলা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোসলেম উদ্দিন বলেন, মেলায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এজন্য সার্বক্ষণিক সেখানে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। #