মহাদেবপুর দর্পণ, মাহবুবুজ্জামান সেতু, মান্দা (নওগাঁ), ১৪ জানুয়ারী ২০২০ :
অসংখ্য বিলে ভরা নওগাঁর মান্দায় ছোট মাছের শুটকি তৈরীর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার বিলগুলোতে প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যায়। এলাকার চাহিদা মিটিয়েও মাছ বিক্রি করা হয় দূরদূরান্তে। এখানকার স্থানীয় পুঁটি মাছের শুকটি তৈরী করে অনেকে আয় করছেন মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এদেরই একজন নুহু মন্ডল (৬০)। দীর্ঘ কুড়ি বছর থেকে শুটকি তৈরী করছেন তিনি।
নুহু মন্ডল চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর কাজিগ্রামের মুঞ্জুর হোসেনের ছেলে। বাবা মায়ের ৩ ছেলের মধ্যে তিনিই সবার বড়। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে তার সংসারে। ছোট ভাই এবং ছেলেরা সকলেই ব্যাবসার সাথে। গরীব পরিবারের সন্তান কিন্তু পরিশ্রমী।
নুহুর বাবা নুহুর উৎপাদিত শুঁটকি মাছ বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করার জন্য সহযোগিতা করেন। অনেক সময় তিনি নিজেই এসব মাছ বিক্রির জন্য পিকআপ গাড়িতে করে নিয়ে যান।
নুহু মন্ডল গত ৩ বছর থেকে মান্দার ভাঁরশো ইউপির চৌবাড়িয়া এলাকায় শীবু নদীর তীরে অস্থায়ীভাবে পুঁটি মাছ থেকে শুটকি তৈরী করে আসছেন। তিনি বলেন, তার বাবাও একজন মাছ ব্যাবসায়ী। তার বাবার হাত ধরেই এপর্যন্ত আসা। তিনি যখন অনেক ছোট তখন থেকেই মাছ ব্যাবসার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। সেই সময় মান্দা থেকে তাদের এলাকায় মৎস্যজীবিরা মাছ বিক্ররি জন্য যেতেন।
মান্দার বিলের মাছের দাম কম হওয়ায় এসব মাছ অনেক সময় বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিয়ে আসতো। আর এখন এসব মাছ মান্দার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়। মাছগুলো লবণ দিয়ে মাছের ভেতরের নোংরা রক্ত পরিস্কার করে নাড়িভূড়ি বের করে ফেলতে হয়। এভাবে প্রক্রিয়াজাত করার পর তা থেকে এসব শুটকি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এসব শুটকি মাছ উৎপাদন করতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ দিন।
এরপর মাছগুলো বাঁশের তৈরী চড়াটে রোদে শুকাতে হয়। তার ১০৬ টি বাঁশের চড়াট রয়েছে। যেগুলোতে মাছ শুকানোর সময় যেন দূর্গন্ধ না হয় সেজন্য তিনি এ স্থান নির্বাচন করেছেন। রাতে পাহারা দিতে না হলেও অস্থায়ীভাবে তাবু গেরে এখানে থাকতে হয়। মাছগুলো পলেথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এক কেজি মাছ থেকে আধা কেজি শুটকি মাছ উৎপাদন করা যায়। প্রতি কেজি শুটকি মাছ বিক্রি হয়ে থাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।
প্রতি সপ্তাহে এখান থেকে ৫০ থেকে ৬০ মণ শুটকি মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। যা শুকানোর পরে নীলফামারী, সৈয়দপুরের মেসার্স শেখ এন্টারপ্রাইজ ও অন্যান্য আড়তে সরবরাহ করা হয়। প্রতি পিক আপের ভাড়া ৪ হাজার ১শ’ টাকা। প্রতিবারে ৪০ থেকে ৪৫ মণ শুটকি মাছ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এসব মাছ বিক্রি করে যে লাভ আসে তা দিয়ে খাওয়া পরার পর প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে।
এতে করে স্থানীয়রা এসব মাছ বিক্রি করে নায্য মূল্য পাচ্ছে। আর সেইসাথে নিজেরও জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
মান্দা উপজেলায় বিলের সংখ্যা বেশী। তাই এই এলাকার বিলের মাছ যতদিন, শুটকি মাছের ব্যাবসাও ততদিন। মাছও নেই ব্যাবসাও নেই বলে জানান নুহু।
ইতোমধ্যে এসব এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এসব শুটকি মাছ সুস্বাদু হওয়ায় দেশে-বিদেশে এর চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
মান্দা উপজেলার অসংখ্য খালবিল নদী-নালা থেকে দেশি কাঁচা মাছের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ছোট মাছ প্রক্রিয়াজাত করে রোদে শুকিয়ে শুটকির চাহিদা পূরণ করছেন শুটকি উৎপাদনকারী এবং মৎস্যব্যবসায়ী নুহু মন্ডল। চলতি বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই শুটকি প্রক্রিয়ার কার্যক্রম বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ভাঁরশো ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। পাশাাশি চৌবাড়িয়া এলাকায় শীবু নদীর তীরে অস্থায়ীভাবে পুঁটি মাছ থেকে শুটকি তৈরী করার ব্যাপারে সাধারণ ব্যাবসায়ী ও শুটকী মাছ সরবরাহকারী নুহু মন্ডলকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। শুটকি মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তিনি কোন সমস্যায় পড়লে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। #