নওগাঁ ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

আজকের সম্পাদকীয় : বিএনপির অফিস উদ্বোধন রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ :

গত শুক্রবার বিকেলে নওগাঁর মহাদেবপুরে উপজেলা বিএনপির অফিস উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এ অফিস উদ্বোধন শুধু বিএনপি নয়, মহাদেবপুরের অন্যসব রাজনৈতিক দলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মহাদেবপুরের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দীর্ঘদিন ধরে দলগুলোর মধ্যে একাধিক ধারা উপধারার সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে বিবাদ, সংঘর্ষ, মামলা মোকদ্দমার উদ্ভব হয়েছে। এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ এসবের অবসান চান। চান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

এরশাদ আমলে মহাদেবপুরের হোটেলপট্টিতে প্রয়াত বিএনপি নেতা সরদার মোকসেদ আহমেদের মালিকানাধীন একটি ঘরকে বিএনপির অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে দেন। প্রকৃতপক্ষে সেসময় যারা বিএনপির নেতৃত্ব দিতেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। একারণেই বিনা ভাড়ায় তার ঘর ব্যবহার করতে দেন।

সেসময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন শ্রদ্ধেয় আব্দুল মান্নান। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত কিসমত আলী মাষ্টার। সরদার মোকসেদ, জিল্লুর রহমান, নাসির উদ্দিন তখন তুখোর বিএনপি নেতা। এদের বেশীরভাগেরই আগমন ঘটেছে বাম দল ভাষানী ন্যাপ থেকে। স্বাভাবিকভাবে প্রগতিশীল রাজনীতির একটি ধারা তাঁরা বিএনপিতেও চালু করেন।

এরই দৃষ্টান্ত হিসাবে বিএনপি অফিসে প্রতি হাটবারে নেতাকর্মীদের ভীড় জমে যেত। সেখানে নেতাকর্মীদেরকে শিখানো হতো, বিএনপির ১৯ দফা। শিখানো হতো সংগঠনের সংবিধান। শিখানো হতো বক্তব্য দেয়া। শিখানো হতো উপস্থাপনা।

এখানে কোন কেরাম বোর্ড বা তাস ছিলনা খেলার জন্য। বাট পড়ার জন্য ছিল অনেক বই।

নিয়মিত এখানে সভা সমাবেশ হতো। দলের যে কোন বিষয় এখানে সবাই বসে বিস্তারিত আলোচনা করে নেয়া হতো সিদ্ধান্ত। এখানে কারোরই একক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ছিলনা। বরং ছিল কৈফিয়ৎ দেয়ার একটা সুন্দর পরিবেশ।

কিন্তু এ ব্যবস্থাটা বেশীদিন টিকেনি। ১৯৯১ এর নির্বাচন এ অফিস থেকেই পরিচালিত হয়েছে। নির্বাচনে মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকী এমপি নির্বাচিত হবার পর সরদার মোকসেদ আহমেদকে ইনএকটিভ করেন। ফলে পার্টির অফিস হিসাবে তার ঘর আর ব্যবহার করা হয়নি।

কিছুদিন কিসমত মাষ্টার সাহেবের বাসা, আবার কিছুদিন আনিছুর চেয়ারম্যানের বাসায় চলে দলের কাজ। এরপর এমপি সাহেব মহাদেবপুরে বাড়ী নির্মাণ করলে তখন থেকে তার বাড়ীতেই চলতে থাকে বিএনপির সব রকম কর্মকান্ড।

দলের অফিস নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকলেই যে পুরো দল তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটা কখনোই হতে পারেনা। বাট এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে অফিস নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকলে বিরোধী মতকে দমন করা খুব সহজ। এই ব্যবস্থা মাইনাসের রাজনীতিকে উসকে দেয়। দলের কোন পর্যায়ের নেতাকে পছন্দ না হলে তাকে শুধু বাড়ীতে আসতে নিষেধ করলেই হলো। ব্যাস, সে নেতার রাজনীতি শেষ তখনই। বরং এখানে হয়েছে তার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা। এই সেদিনও এক তুখোর নেতাকে বলা হয়েছে “ইউ মে গো নাও”। সে নেতা কোন উচ্চ বাচ্চ করার সুযোগ পাননি। মাথা নীচু করে বের হয়ে আসতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু একটা সার্বজনীন অফিসে বসে কোন নেতা কোন কর্মীকেও এ ধরনের কটুক্তি করার সাহস পাবেননা কখনো।

নেতার বাড়ীকে পার্টি অফিস বানানোর শুরু থেকেই শুরু হয় মাইনাসের রাজনীতি। এর প্রথম শিকার সরদার মোকসেদ। এর পর রবিউল আলম বুলেট, জিল্লুর রহমান, শাহজাহান, মিরাজ, কাদের, মমতাজ আরও অনেকেই।

শুরু হয় টাকা দিয়ে পদ বিক্রি। একনায়কতন্ত্র। স্বজনপ্রীতি। রাজনীতি হয় কলুশিত। আর রাজনীতিকরা হন সাধারণের কাছে ঘৃণার পাত্র।

এ অবস্থা চলতে পারেনা। চলতে দেয়া যায়না। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিএনপিকে এখন ঘরের বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছেন কয়েকজন তরুণ নেতা। তারাই তরিঘড়ি করে উপহার দিয়েছেন অফিস।

২৮ বছর পর নিজেদের অফিস পেয়ে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। শুরু হয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য।

এ অবস্থাকে ধরে রাখতে হবে। এখন হয়েছে ভাড়া ঘরে অফিস। আগামী দিনে একদম নিজস্ব অফিস চাই।

এই অফিস উদ্বোধন অন্য দলের জন্যও রেফারেন্স, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। একজন নেতা দলের কাছে স্বচ্ছ থাকলে তার প্রতি ভরষা রাখতে পারবে সবাই। এজন্য অবাধে অফিস ঘর ব্যবহারের সুযোগ থাকা চাই। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেতার বাড়ীতে বসে এককভাবে গ্রহণ না করে, সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে, সবার মনমত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব।

এই অফিস নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিরোধ মিমাংসার সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করুক এই আমাদের প্রত্যাশা। #
——–কিউ,এম,সাঈদ টিটো ২২.৯.২০১৯।

আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সম্পাদকীয় : বিএনপির অফিস উদ্বোধন রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

প্রকাশের সময় : ০১:৩১:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ :

গত শুক্রবার বিকেলে নওগাঁর মহাদেবপুরে উপজেলা বিএনপির অফিস উদ্বোধন করা হয়েছে। এটা একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এ অফিস উদ্বোধন শুধু বিএনপি নয়, মহাদেবপুরের অন্যসব রাজনৈতিক দলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মহাদেবপুরের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দীর্ঘদিন ধরে দলগুলোর মধ্যে একাধিক ধারা উপধারার সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে বিবাদ, সংঘর্ষ, মামলা মোকদ্দমার উদ্ভব হয়েছে। এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ এসবের অবসান চান। চান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

এরশাদ আমলে মহাদেবপুরের হোটেলপট্টিতে প্রয়াত বিএনপি নেতা সরদার মোকসেদ আহমেদের মালিকানাধীন একটি ঘরকে বিএনপির অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে দেন। প্রকৃতপক্ষে সেসময় যারা বিএনপির নেতৃত্ব দিতেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। একারণেই বিনা ভাড়ায় তার ঘর ব্যবহার করতে দেন।

সেসময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন শ্রদ্ধেয় আব্দুল মান্নান। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত কিসমত আলী মাষ্টার। সরদার মোকসেদ, জিল্লুর রহমান, নাসির উদ্দিন তখন তুখোর বিএনপি নেতা। এদের বেশীরভাগেরই আগমন ঘটেছে বাম দল ভাষানী ন্যাপ থেকে। স্বাভাবিকভাবে প্রগতিশীল রাজনীতির একটি ধারা তাঁরা বিএনপিতেও চালু করেন।

এরই দৃষ্টান্ত হিসাবে বিএনপি অফিসে প্রতি হাটবারে নেতাকর্মীদের ভীড় জমে যেত। সেখানে নেতাকর্মীদেরকে শিখানো হতো, বিএনপির ১৯ দফা। শিখানো হতো সংগঠনের সংবিধান। শিখানো হতো বক্তব্য দেয়া। শিখানো হতো উপস্থাপনা।

এখানে কোন কেরাম বোর্ড বা তাস ছিলনা খেলার জন্য। বাট পড়ার জন্য ছিল অনেক বই।

নিয়মিত এখানে সভা সমাবেশ হতো। দলের যে কোন বিষয় এখানে সবাই বসে বিস্তারিত আলোচনা করে নেয়া হতো সিদ্ধান্ত। এখানে কারোরই একক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ছিলনা। বরং ছিল কৈফিয়ৎ দেয়ার একটা সুন্দর পরিবেশ।

কিন্তু এ ব্যবস্থাটা বেশীদিন টিকেনি। ১৯৯১ এর নির্বাচন এ অফিস থেকেই পরিচালিত হয়েছে। নির্বাচনে মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকী এমপি নির্বাচিত হবার পর সরদার মোকসেদ আহমেদকে ইনএকটিভ করেন। ফলে পার্টির অফিস হিসাবে তার ঘর আর ব্যবহার করা হয়নি।

কিছুদিন কিসমত মাষ্টার সাহেবের বাসা, আবার কিছুদিন আনিছুর চেয়ারম্যানের বাসায় চলে দলের কাজ। এরপর এমপি সাহেব মহাদেবপুরে বাড়ী নির্মাণ করলে তখন থেকে তার বাড়ীতেই চলতে থাকে বিএনপির সব রকম কর্মকান্ড।

দলের অফিস নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকলেই যে পুরো দল তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটা কখনোই হতে পারেনা। বাট এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে অফিস নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকলে বিরোধী মতকে দমন করা খুব সহজ। এই ব্যবস্থা মাইনাসের রাজনীতিকে উসকে দেয়। দলের কোন পর্যায়ের নেতাকে পছন্দ না হলে তাকে শুধু বাড়ীতে আসতে নিষেধ করলেই হলো। ব্যাস, সে নেতার রাজনীতি শেষ তখনই। বরং এখানে হয়েছে তার চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থা। এই সেদিনও এক তুখোর নেতাকে বলা হয়েছে “ইউ মে গো নাও”। সে নেতা কোন উচ্চ বাচ্চ করার সুযোগ পাননি। মাথা নীচু করে বের হয়ে আসতে হয়েছে তাকে।

কিন্তু একটা সার্বজনীন অফিসে বসে কোন নেতা কোন কর্মীকেও এ ধরনের কটুক্তি করার সাহস পাবেননা কখনো।

নেতার বাড়ীকে পার্টি অফিস বানানোর শুরু থেকেই শুরু হয় মাইনাসের রাজনীতি। এর প্রথম শিকার সরদার মোকসেদ। এর পর রবিউল আলম বুলেট, জিল্লুর রহমান, শাহজাহান, মিরাজ, কাদের, মমতাজ আরও অনেকেই।

শুরু হয় টাকা দিয়ে পদ বিক্রি। একনায়কতন্ত্র। স্বজনপ্রীতি। রাজনীতি হয় কলুশিত। আর রাজনীতিকরা হন সাধারণের কাছে ঘৃণার পাত্র।

এ অবস্থা চলতে পারেনা। চলতে দেয়া যায়না। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিএনপিকে এখন ঘরের বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছেন কয়েকজন তরুণ নেতা। তারাই তরিঘড়ি করে উপহার দিয়েছেন অফিস।

২৮ বছর পর নিজেদের অফিস পেয়ে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। শুরু হয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য।

এ অবস্থাকে ধরে রাখতে হবে। এখন হয়েছে ভাড়া ঘরে অফিস। আগামী দিনে একদম নিজস্ব অফিস চাই।

এই অফিস উদ্বোধন অন্য দলের জন্যও রেফারেন্স, অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। একজন নেতা দলের কাছে স্বচ্ছ থাকলে তার প্রতি ভরষা রাখতে পারবে সবাই। এজন্য অবাধে অফিস ঘর ব্যবহারের সুযোগ থাকা চাই। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেতার বাড়ীতে বসে এককভাবে গ্রহণ না করে, সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে সবার মতামতের ভিত্তিতে, সবার মনমত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব।

এই অফিস নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিরোধ মিমাংসার সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করুক এই আমাদের প্রত্যাশা। #
——–কিউ,এম,সাঈদ টিটো ২২.৯.২০১৯।