মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৮ জানুয়ারী ২০২০ :
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার পৌর সদর নজিপুরে ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ বন্ধ করে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজনে জনমনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় শিশু-কিশোর ও খেলোয়াড়দের খেলাধূলার অন্যতম স্থান শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম দখল করে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য মেলা বসানোয় ক্রীড়ামোদী মানুষসহ সর্বমহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য যখন ফাঁকা জায়গা দিন দিন কমছে সে সময়ে খোদ খেলার মাঠ দখল করে বাণিজ্য মেলা আয়োজন কতটা যৌক্তিক তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারী হতে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে মেলার আয়োজন নিয়ে চরম শংশয় প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। মেলায় উচ্চ স্বরে গান বাজনার মধ্যে কীভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবেন সেটাই এখন তাদের চিন্তার বিষয়। এ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক নওগাঁ ৯ জানুয়ারি হতে নজিপুর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে। মেলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্নের জন্য ১মাস পূর্ব হতেই আয়োজক কর্তৃপক্ষ সাজ-সজ্জার কাজ শুরু করেছে। আর এ সময় হতেই খেলাধুলার স্থান হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে ক্রীড়ামোদিরা।
ইতিমধ্যেই মাঠের অবকাঠামোতে ব্যপক পরিবর্তন করা হয়েছে। ইটের ওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মেলার প্রবেশ ও নির্গমন পথ। মাঠ খুঁড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানির ফোয়ারা। মাঠের অধিকাংশ স্থানেই বিছানো হয়েছে ইট।
গত ১১ জানুয়ারি ধামইরহাট-পত্নীতলা আসনের সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন বিসিক এর আঞ্চলিক পরিচালক উপ-সচিব আবুল হায়াত মো. রফিক, পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো, লিটন সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল গাফফার প্রমুখ।
এ বিষয়ে মাঠে দলবদ্ধভাবে নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলনকারী সুজন কুমার জানান, মাঠে আমরা নিয়মিত খেলাধুলা অনুশীলন করে থাকি। এর আগে হাতিম ফার্ণিচারের মেলার জন্য ৮দিন আমরা খেলতে পারিনি। বাণিজ্য মেলার জন্য গত প্রায় ১মাস ধরে আমাদের অনুশীলন বন্ধ আছে। খেলার জন্য আমরা বিকল্প কোনো জায়গা না পাওয়ায় বর্তমানে প্রাকটিস পুরোপুরি বন্ধ। এলাকায় এত ফাঁকা জায়গা রেখে মাঠ দখল করে মেলা বসানোয় তিনি তীব্র নিন্দা জানান।
এ বিষয়ে কয়েক জন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, মেলায় উচ্চ শব্দে বক্স বাজানো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েরা পাঠে মনোনিবেশ করতে পারছে না। ২/৪দিন সময়ের জন্য হলে না হয় বিরক্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু আসন্ন এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে মাস ব্যাপী বাণিজ্য মেলার অনুমোদন স্থানীয় প্রশাসন কীভাবে দিলো সে নিয়ে তারা বিষ্ময় প্রকাশ করেন। একই সাথে মেলা বন্ধে উর্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক উপ-সচিব আবুল হায়াত মো: রফিক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মেলার উদ্বোধনীতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আমি সেখানে অতিথি হিসাবে গেছি। এর বেশি কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: লিটন সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মেলার প্রসঙ্গ তুলতেই ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো: হারুন অর-রশিদ জানান, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মেলা আয়োজন করা যাবে এমন শর্ত সাপেক্ষে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের জন্য বিসিককে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। মেলার জন্য বিসিক কোনো ভাবেই মাঠের অবকাঠামো পরিবর্তন করতে পারবে না। পাবলিক মাঠের নামে মেলার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সেখানে নিয়মিত খেলাধুলা হয় এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিলনা। #