মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ :
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় উৎসব পালন করলেও নওগাঁয় দুই দিন পর পাক বাহিনী মিত্র বাহিনীর কছে আত্মসমর্পন করে। ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ দিনটিকে ঘিরে জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ‘নওগাঁ হানাদার মুক্ত’ দিবস পালন করে আসছে।
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ রাণীনগর থানা হানাদার মুক্ত হয় এবং ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়। এর ফলে পার নওগাঁয় বসবাসকারী সকল অবাঙ্গালীরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে নওগাঁ কেডি স্কুলে নিরাপত্তাজনিত কারণে আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, সাবেক থানা চত্ত্বর, আদালত পাড়া ও এসডিও বাসভবন চত্ত্বরে আত্মরামূলক প্রতিরা বেষ্টনী গড়ে তোলেন। ফলে ১৫, ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর শাখা যমুনা নদীর পূর্ব অংশ অর্থাৎ পার-নওগাঁ এলাকায় এই তিন দিন জনমানবশুণ্য ছিল।
১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ শীতের সকাল। জালাল বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট জেলার পাক সেনারা অত্মসমর্পন করবেনা ঘোষণা দেয়ায় চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নওগাঁ শহর আক্রমণ করে। সকাল থেকে রাত্রী ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। যুদ্ধে ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
ক্যাপ্টেন গিয়াস অপেক্ষা করছেন নওগাঁ শহরে পাক আর্মিদের স্যারেন্ডার করানোর জন্য। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর কিছু করার ছিল না। ফলে প্রায় দুই হাজার পাক সেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল ও সরকারী গার্লস স্কুল থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অবনতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।
তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান।
নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে “জয় বাংলা-জয় বাংলা” ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্ত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।
সেই থেকে নওগাঁ হানাদারমুক্ত ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা হয়। #