নওগাঁ ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

যারা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ : আত্রাইয়ের বৈঠাখালির নাট্যাভিনেতা আখতারুজ্জামান মণ্ডল ও ওরা ১১জন

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, নওগাঁ, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ :

নওগাঁর নাট্যজন, সাংস্কৃতিক সংগঠক আখতারুজ্জামান মণ্ডল ছিলেন সজ্জন ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। নাট্য পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিল তাঁর বিপুল উৎসাহ। ষাটের দশকে নিজ এলাকায় নিয়মিত নাট্যোৎসবের আয়োজন করতেন। এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নাটকের দল নাটক পরিবেশন করত।

একাত্তরে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদঘেঁষা বৈঠাখালী গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেই গ্রামেরই সন্তান আখতারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী তরুণদের অস্ত্র চালানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিতেন। আরও প্রশিক্ষণের জন্য তাঁদের ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। আখতারুজ্জামান ও আরেক শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক আহাদ আলী সরদারের নেতৃত্বে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতেন।

এ খবর স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে জেনে যায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা। একাত্তরের ২৪ জুলাই সকালে আত্রাই ও নাটোরের সিংড়া ক্যাম্প থেকে ৫০-৬০ জন হানাদার সেনা বৈঠাখালী গ্রামে হামলা করে। তারা মণ্ডলবাড়িতে হানা দিয়ে পাঁচটি বন্দুক লুটে নেয়। আখতারুজ্জামানের বোনের স্বামী আবুল কাশেমকে স্বজনদের সামনেই বাড়ির দোতলা থেকে নামার সময় সিঁড়িতে গুলি করে হত্যা করে। আখতারুজ্জামানকে ধরে নিয়ে গ্রামের অদূরে সমসপাড়া বাজারে আত্রাই নদের তীরে আরও কয়েকজনের সঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ সময় অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরা। সে দিন আখতারুজ্জামান ও তাঁর ভগ্নিপতিসহ গ্রামের ১১ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানি সেনার দল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে আখতারুজ্জামান মণ্ডল সম্পর্কে তথ্য ও ছবি পাঠান নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা-আল-মেহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এই গবেষকের মাঠপর্যায়ের গবেষণাগ্রন্থ রক্তঋণ ১৯৭১ : নওগাঁতে শহীদ আখতারুজ্জামানকে নিয়ে তথ্য রয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আখতারুজ্জামানের স্ত্রী আখতারী বেগমের কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আত্রাই উপজেলা সদরে নির্মিত শহীদ স্মৃতিফলকে তাঁর নাম রয়েছে।

শহীদ আখতারুজ্জামান মণ্ডলের জন্ম ১৯৩৯ সালে আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদঘেঁষা বৈঠাখালী গ্রামে। তাঁর বাবা নাসিমুজ্জামান মণ্ডল ও মা ফতেমুন নেছা। আখতারুজ্জামান তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার সময় চার সন্তানকে রেখে যান তিনি। স্ত্রী আখতারী বেগম ২০১১ সালে মারা যান। বড় ছেলে কামারুজ্জামান মণ্ডল গত বছর মারা গেছেন। এখন এক ছেলে ও দুই মেয়ে বেঁচে আছেন।

শহীদ আখতারুজ্জামানের ছেলে আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা ও দাদা ষাটের দশকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আত্রাইয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তরুণ নেতা হিসেবে আখতারুজ্জামান বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি আত্রাই উপজেলা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে বৈঠাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমসপাড়া হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।#

গ্রন্থনা : ওমর ফারুক, নওগাঁ, প্রথম আলো ১০.৯.২০২১, অনুলিখন : কিউ, এম, সাঈদ টিটো

আপলোডকারীর তথ্য

যারা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ : আত্রাইয়ের বৈঠাখালির নাট্যাভিনেতা আখতারুজ্জামান মণ্ডল ও ওরা ১১জন

প্রকাশের সময় : ০৫:১০:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, নওগাঁ, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ :

নওগাঁর নাট্যজন, সাংস্কৃতিক সংগঠক আখতারুজ্জামান মণ্ডল ছিলেন সজ্জন ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। নাট্য পরিচালনা ও অভিনয়ে ছিল তাঁর বিপুল উৎসাহ। ষাটের দশকে নিজ এলাকায় নিয়মিত নাট্যোৎসবের আয়োজন করতেন। এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নাটকের দল নাটক পরিবেশন করত।

একাত্তরে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদঘেঁষা বৈঠাখালী গ্রামটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেই গ্রামেরই সন্তান আখতারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহী তরুণদের অস্ত্র চালানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিতেন। আরও প্রশিক্ষণের জন্য তাঁদের ভারতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। আখতারুজ্জামান ও আরেক শহীদ বুদ্ধিজীবী চিকিৎসক আহাদ আলী সরদারের নেতৃত্বে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতেন।

এ খবর স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে জেনে যায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা। একাত্তরের ২৪ জুলাই সকালে আত্রাই ও নাটোরের সিংড়া ক্যাম্প থেকে ৫০-৬০ জন হানাদার সেনা বৈঠাখালী গ্রামে হামলা করে। তারা মণ্ডলবাড়িতে হানা দিয়ে পাঁচটি বন্দুক লুটে নেয়। আখতারুজ্জামানের বোনের স্বামী আবুল কাশেমকে স্বজনদের সামনেই বাড়ির দোতলা থেকে নামার সময় সিঁড়িতে গুলি করে হত্যা করে। আখতারুজ্জামানকে ধরে নিয়ে গ্রামের অদূরে সমসপাড়া বাজারে আত্রাই নদের তীরে আরও কয়েকজনের সঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এ সময় অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরা। সে দিন আখতারুজ্জামান ও তাঁর ভগ্নিপতিসহ গ্রামের ১১ জন নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করে বর্বর পাকিস্তানি সেনার দল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে আখতারুজ্জামান মণ্ডল সম্পর্কে তথ্য ও ছবি পাঠান নওগাঁর স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা-আল-মেহমুদ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এই গবেষকের মাঠপর্যায়ের গবেষণাগ্রন্থ রক্তঋণ ১৯৭১ : নওগাঁতে শহীদ আখতারুজ্জামানকে নিয়ে তথ্য রয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আখতারুজ্জামানের স্ত্রী আখতারী বেগমের কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আত্রাই উপজেলা সদরে নির্মিত শহীদ স্মৃতিফলকে তাঁর নাম রয়েছে।

শহীদ আখতারুজ্জামান মণ্ডলের জন্ম ১৯৩৯ সালে আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদঘেঁষা বৈঠাখালী গ্রামে। তাঁর বাবা নাসিমুজ্জামান মণ্ডল ও মা ফতেমুন নেছা। আখতারুজ্জামান তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার সময় চার সন্তানকে রেখে যান তিনি। স্ত্রী আখতারী বেগম ২০১১ সালে মারা যান। বড় ছেলে কামারুজ্জামান মণ্ডল গত বছর মারা গেছেন। এখন এক ছেলে ও দুই মেয়ে বেঁচে আছেন।

শহীদ আখতারুজ্জামানের ছেলে আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা ও দাদা ষাটের দশকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আত্রাইয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তরুণ নেতা হিসেবে আখতারুজ্জামান বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি আত্রাই উপজেলা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে বৈঠাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমসপাড়া হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।#

গ্রন্থনা : ওমর ফারুক, নওগাঁ, প্রথম আলো ১০.৯.২০২১, অনুলিখন : কিউ, এম, সাঈদ টিটো