মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২৬ নভেম্বর ২০২০ :
সরকারি খাদ্যগুদামে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ চাল সরবরাহ করতে মিল মালিকরা প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি মিল মালিকদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিন ঘন্টাব্যাপী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চলতি মওসুমে আমন সংগ্রহ উপলক্ষে রাজশাহী ও রংপুর খাদ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে খাদ্যমন্ত্রীর এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মিল মালিক নেতারা এই প্রস্তাব দেন। খাদ্যমন্ত্রী এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভা চলাকালীন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে সভাকক্ষের বাইরে যান চালকল মালিকরা। পরে তারা ফিরে এসে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের প্রস্তাব দেন। খাদ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিক তাদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই চালের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে আসছিলাম। বাজারে ধানের দাম বেশি। বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করে গুদামে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু তারপরও লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশ চাল গুদামে সরবরাহ করতে খাদ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।’
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘বাজারে নতুন আমন ধানের দাম বেশি। গুদামে চাল সরবরাহ করতে যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে তা চলমান থাকলে মিল মালিকদের জন্য সুবিধা হবে। যখন ধানের বাজার স্বাভাবিক হবে তখন মিলাররা চাহিদা মতো গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে মিলারদের কাছ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহে সহযোগিতা না করায় মিলারদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিলাররা ধান-চাল সংগ্রহে সহযোগিতা না করলে আগামীতে ভারতীয় সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। যেখানে প্রতিটি মিলের জন্য চাল বরাদ্দের পরিমান উল্লেখ করে দেয়া হবে। যা ওইসব মিলকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিশোধ করতে হবে।
অবৈধ মজুদের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অনেক মিলার সরকারকে চাল দিতে পারেনা। অথচ তাদের গুদামে হাজার হাজার টন ধান মজুদ থাকে। এসব মিলারদের বিরুদ্ধে সরকার বরাবরের মতই সোচ্চার থাকবে বলেও জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, কেউ ধান চাল মজুত করে শান্তিতে থাকতে পারবে না। আজ কেজিতে এক টাকা ২ টাকা লাভের চিন্তা করছেন তখন কিন্তু আপনে থাকবেন না, মিলার থাকবে না ও লেবার থাকবে না একদিনে সব লুট হয়ে চলে যাবে।
মন্ত্রী চালকল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারকে সহযোগিতা করেন, আপনার বাঁচেন, কৃষককে সহযোগিতা করেন। অনাকাঙ্কিত কোন ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য মিল মালিকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, যেখানে ৬ লাখ মেট্রিক টন কিনতাম সেখানে আমি যদি এখন এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন নিয়ে আপোষ করে ফেলে, চাউল কিনছি না তাহলে কালকে বাজার পড়ে যাবে কৃষকরা নায্যমূল্য পাবে না। তাই আমি এত বড় কৃষকের ক্ষতি করতে চাই না বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক কোন ধরনের দূর্যোগ না হলে কৃষকরা আমন আবাদে লাভবান হন। এবারে আমনের যে বন্যায় ক্ষতির কথা বলা হয়েছে তেমন ক্ষতি হয়নি। এছাড়া আম্পান দুর্যোগেও ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার রেশন ও খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি এবং দুর্যোগ ও আপদকালিনের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। কৃষকরা যেন ধানের ন্যায্য মুল্য পায় সরকার সেই চেষ্টা করছেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সারাদেশে প্রতি বছরের ন্যায় আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে থাকে। গত ৭ নভেম্বর আমন সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয়। ১৫ নভেম্বরে চুক্তির শেষ সময় থাকলেও পরে মিলমালিকদের অনুরোধে ২৫ নভেম্বর ধার্য করা হয়। বোরোতে যারা সরকারকে চাল দিয়ে সহযোগীতা করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান খাদ্যমন্ত্রী।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশিদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, মহা পরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো: আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী, নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন, জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি ও নওগাঁ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার, খাদ্য বিভাগের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা ও মিল মালিক নেতৃবৃন্দ এবং সুধীজনরা এতে উপস্থিত ছিলেন।#