নওগাঁ ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

নওগাঁয় গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উধাও স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মাহমুদুন নবী বেলাল, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ, ৯ মার্চ ২০২১ :

নওগাঁয় ‘স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ঋণ দেয়ার নামে গ্রাহকদের নিকট থেকে সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনার পর সংস্থাটির কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। অহসায় ভুক্তভোগীরা দিশেহারা হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। সংস্থার কার্যালয়ের বাসভবনের মালিক নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় সাধারন ডায়েরি করেছেন।

জেলা সমাজসেবা ও সমবায় অফিসে খোঁজ নিয়ে এ নামের কোন সংস্থার রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়নি। প্রতারণার শিকার হয়েছেন গ্রামের অসহায় মানুষরা। আর কেউ যেন এমন প্রতারণার শিকার না হয় এব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারির দাবী করছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার বটতলা মোড় সংলগ্ন শামসুল হক নামে এক ব্যক্তির বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ)’ এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। সংস্থার পরিচালক পরিচয় দেন খুলনা জেলার সাইফ হোসেন এবং ম্যানেজার সিরাজগঞ্জ জেলার তাজবীর জুয়েল। এরপর তারা নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর, রামজীবনপুর, আদমদূর্গাপুর, কাদোয়া, ফতেপুর, চন্ডিপুর ও নগরকুসুম্বিসহ কয়েকটি গ্রামে নারীদের জীবন মানোন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচী চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই অংশ হিসেবে গ্রামের নারীদের হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, সেলাই, বেঁতের কাজ ও মৎস্য খামার অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দিতে থাকে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণদান হিসেবে ২ বছর মেয়াদী ১ লাখ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় ও ১৫ হাজার টাকা সুদ নেয়া হবে বলে স্থানীদের বুঝানো হয়। গ্রামের অসহায় মানুষ তাদের চটকদার কথা বিশ্বাস করে। ঋণ নেয়ার জন্য কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪০ জন অসহায় মানুষের নিকট থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। ঋণ নেয়ার জন্য গ্রাহকদের গত ৩ মার্চ অফিসে আসতে বলা হলেও গ্রাহকরা অফিস বন্ধ পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে অফিস তালাবদ্ধ ও সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলপুর গ্রামের ভুক্তভোগী আশিক হোসেন বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের এলাকায় এসে স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) এর সাইফ হোসেন নিজেকে পরিচালক ও তাজবীর জুয়েল ম্যানেজার পরিচয় দেন। তারা একটি প্রজেক্টর এর মাধ্যমে আমাদের এলাকায় একটি কেন্দ্র তৈরী করে নারীদের ৫৪ ধরনের কাজ শেখাবেন বলে জানায়। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন নারীর জীবন মানোন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণদান দেয়া হবে বলে জানানো হয়। আমি ১ লাখ টাকা ঋণ নিবো বলে স্ত্রীর মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তাদের সঞ্চয় দিয়েছি। কিন্তু ৩ মার্চ ঋণ নেয়ার জন্য অফিসে গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ ও তাদের ফোনও বন্ধ। আমরা বুঝতেই পারিনি এভাবে প্রতারণার শিকার হবো।

রামজীবনপুর গ্রামের গৃহবধূ পাখি, নুরুপ ও পাপিয়া বলেন, আমাদের সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ দিতে চাওয়া হয়েছিল। এজন্য ফরম ৫০ টাকা ও সঞ্চয় বাবদ ২০০ টাকা নেয়া হয়। তারা টাকা নেয়ার পর থেকে আমাদের এলাকায় আর আসেনি। পরে শুনছি এনজিওটি উধাও হয়ে গেছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ইন্টিতলা মোড়ের বাসিন্দা শারমিন। তিনি স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) এর অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, ওই অফিসে আমি ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে অফিস সহায়কের চাকরি করতাম। ৮ দিন ওই অফিসে কাজ করেছি। গত ৩ মার্চ অফিসে গিয়ে দেখি বন্ধ। তারপর থেকে অফিস বন্ধ ও তাদের ফোনও বন্ধ পাচ্ছি।

বাসার মালিক শামসুল হক বলেন, ওই এনজিও গত ২৩ ফেব্রুয়ারী সাড়ে ৭ হাজার টাকায় ভাড়া এবং ২ লাখ টাকা সিকিউরিটি হিসেবে বাসায় উঠে। অফিসের কাগজপত্রসহ চেয়ার টেবিল নিয়ে আসে। গত ৩ মার্চ সিকিউরিটি, বাসা ভাড়ার টাকা এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপর থেকে তাদের ফোন নম্বর বন্ধ এবং অফিসে কেউ আসছে না। নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারন ডায়েরি করেছি।

নওগাঁ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।#

আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁয় গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে উধাও স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ০২:০৮:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মার্চ ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মাহমুদুন নবী বেলাল, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ, ৯ মার্চ ২০২১ :

নওগাঁয় ‘স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ঋণ দেয়ার নামে গ্রাহকদের নিকট থেকে সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। ঘটনার পর সংস্থাটির কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। অহসায় ভুক্তভোগীরা দিশেহারা হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। সংস্থার কার্যালয়ের বাসভবনের মালিক নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় সাধারন ডায়েরি করেছেন।

জেলা সমাজসেবা ও সমবায় অফিসে খোঁজ নিয়ে এ নামের কোন সংস্থার রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়নি। প্রতারণার শিকার হয়েছেন গ্রামের অসহায় মানুষরা। আর কেউ যেন এমন প্রতারণার শিকার না হয় এব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারির দাবী করছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার বটতলা মোড় সংলগ্ন শামসুল হক নামে এক ব্যক্তির বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ)’ এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। সংস্থার পরিচালক পরিচয় দেন খুলনা জেলার সাইফ হোসেন এবং ম্যানেজার সিরাজগঞ্জ জেলার তাজবীর জুয়েল। এরপর তারা নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর, রামজীবনপুর, আদমদূর্গাপুর, কাদোয়া, ফতেপুর, চন্ডিপুর ও নগরকুসুম্বিসহ কয়েকটি গ্রামে নারীদের জীবন মানোন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচী চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই অংশ হিসেবে গ্রামের নারীদের হস্তশিল্প, কুটির শিল্প, সেলাই, বেঁতের কাজ ও মৎস্য খামার অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দিতে থাকে। এছাড়াও ক্ষুদ্র ঋণদান হিসেবে ২ বছর মেয়াদী ১ লাখ টাকার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় ও ১৫ হাজার টাকা সুদ নেয়া হবে বলে স্থানীদের বুঝানো হয়। গ্রামের অসহায় মানুষ তাদের চটকদার কথা বিশ্বাস করে। ঋণ নেয়ার জন্য কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪০ জন অসহায় মানুষের নিকট থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। ঋণ নেয়ার জন্য গ্রাহকদের গত ৩ মার্চ অফিসে আসতে বলা হলেও গ্রাহকরা অফিস বন্ধ পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এরপর থেকে অফিস তালাবদ্ধ ও সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলপুর গ্রামের ভুক্তভোগী আশিক হোসেন বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের এলাকায় এসে স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) এর সাইফ হোসেন নিজেকে পরিচালক ও তাজবীর জুয়েল ম্যানেজার পরিচয় দেন। তারা একটি প্রজেক্টর এর মাধ্যমে আমাদের এলাকায় একটি কেন্দ্র তৈরী করে নারীদের ৫৪ ধরনের কাজ শেখাবেন বলে জানায়। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন নারীর জীবন মানোন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণদান দেয়া হবে বলে জানানো হয়। আমি ১ লাখ টাকা ঋণ নিবো বলে স্ত্রীর মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা তাদের সঞ্চয় দিয়েছি। কিন্তু ৩ মার্চ ঋণ নেয়ার জন্য অফিসে গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ ও তাদের ফোনও বন্ধ। আমরা বুঝতেই পারিনি এভাবে প্রতারণার শিকার হবো।

রামজীবনপুর গ্রামের গৃহবধূ পাখি, নুরুপ ও পাপিয়া বলেন, আমাদের সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ দিতে চাওয়া হয়েছিল। এজন্য ফরম ৫০ টাকা ও সঞ্চয় বাবদ ২০০ টাকা নেয়া হয়। তারা টাকা নেয়ার পর থেকে আমাদের এলাকায় আর আসেনি। পরে শুনছি এনজিওটি উধাও হয়ে গেছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের ইন্টিতলা মোড়ের বাসিন্দা শারমিন। তিনি স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা (সুখ) এর অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, ওই অফিসে আমি ৫০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে অফিস সহায়কের চাকরি করতাম। ৮ দিন ওই অফিসে কাজ করেছি। গত ৩ মার্চ অফিসে গিয়ে দেখি বন্ধ। তারপর থেকে অফিস বন্ধ ও তাদের ফোনও বন্ধ পাচ্ছি।

বাসার মালিক শামসুল হক বলেন, ওই এনজিও গত ২৩ ফেব্রুয়ারী সাড়ে ৭ হাজার টাকায় ভাড়া এবং ২ লাখ টাকা সিকিউরিটি হিসেবে বাসায় উঠে। অফিসের কাগজপত্রসহ চেয়ার টেবিল নিয়ে আসে। গত ৩ মার্চ সিকিউরিটি, বাসা ভাড়ার টাকা এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপর থেকে তাদের ফোন নম্বর বন্ধ এবং অফিসে কেউ আসছে না। নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারন ডায়েরি করেছি।

নওগাঁ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।#