নওগাঁ ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ :

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে বর্তমান মেয়র নজমুল হক সনি, জাতীয় পার্টির নাঙ্গল প্রতীকে ইফতারুল ইসলাম বকুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাত পাখা প্রতীকে আতিকুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকে নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ জানুয়ারী। প্রচারে পিছিয়ে নেই কেউ। পৌরসভা জুড়ে ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেটের সমারোহ। তবে এ আসনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে অভিজ্ঞদের ধারনা।

নওগাঁ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ তে। নওগাঁ সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। মাষ্টার প্ল্যান অনুসারে পৌরসভার আয়তন ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৭ সালে মূল শহরের সঙ্গে আরও শতাধিক মহল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। মোট ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ হাজার ২৩৯ জন ও নারী ৫৯ হাজার ১ জন।

সবশেষ ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে ৩৪ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় বার মেয়র নির্বাচিত হন নজমুল হক সনি। সেবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণের চেয়ে ২ হাজার ২শ’ ভোট বেশী পান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটে পরপর দুবার নির্বাচিত পৌর মেয়র। পৌরবাসীর দোয়া ও সমর্থনের কারণেই তা সম্বব হয়েছে।’

কি কারণে পৌরবাসী আপনাকে আবার ভোট দিবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীকে আধুনিক ও মানসম্মত পৌরসভা উপহার দিতে মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা প্রসস্থকরণ, ড্রেন নির্মাণ কাজকে তরান্বিত করেছি। নওগাঁ পৌরসভায় ২টির বেশি আরডিসি ছিলনা। আমি বর্তমানে সকল রাস্তার পাশাপাশি আরডিসি ড্রেন নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। পৌর এলাকা আলোকিত করতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এর ব্যবস্থা করেছি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এখন পৌরবাসীর দোড়গোড়ায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে পুরো পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করছি।’

নজমুল হক সনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ফুটপাত নির্মাণ করেছি। শহরের মুক্তির মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে। সিডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে ঘনবসতীপূর্ণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দরিদ্র এলাকায় সকল অলিগলি পাকাকরণ, ড্রেন নির্মাণ, পাকা পায়খানা নির্মাণ নিশ্চিত করেছি। এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের জরিপে নওগাঁ পেরৈসভা প্রথম স্থান অধিকার করায় বিদেশে ইংল্যান্ড, চীন, ও জাপান সফরে হয়েছে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন। গরীব অসহায় জনগোষ্ঠীর মাঝে যথাযথভাবে ভিজিএফ চাল, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা, শিশু খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত করেছি। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা অব্যহত আছে। ইতোমধ্যে ময়লা আর্বজনা থেকে কমপোষ্ট সার তৈরি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যার কার্যক্রম আগামী দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি পৌরসভায় যে সব কাজ করেছি এগুলোর জন্য প্রিয় পৌরবাসী আমাকে পূণরায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি আবারও জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে সার্বিকভাবে একটি উন্নত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আমি আশা করছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

নির্বাচনের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বললেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন করবো বলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে আসছিলাম। মনোনয়ন উত্তোলনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। যাচাই বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে বৈধতা পাই। ফলে মাঠে নামতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারনায় বিভিন্নভাবে বাঁধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। ভোটারদের কাছে আমার প্রতাশ্যা প্রতীক না, ব্যক্তি দেখে ভোট দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে, সবার আগে প্রমাণ করবো, আমি এই পৌরবাসির লোক। আমার অফিস হবে আপনাদের অফিস। আর পৌর ভবন হবে আপনাদের বাড়ি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেন পৌরবাসী আপনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তি উদ্যোগে শহরের কোমাইগাড়ীতে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, পৌর একালায় দুটি মসজিদ নির্মাণ, নওগাঁ সদর হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার মেশিন প্রদান, একটি ময়লা ফেলার গাড়ি প্রদান, অস্বচ্ছল ও দু:স্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে পৌর এবং নওগাঁ সদর উপজেলার ৫০০ জনকে সেলাই মেশিন প্রদান, নওগাঁ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ ও মন্দিরের উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন সময় অনুদান প্রদান, নওগাঁ কেডি ও বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অভিবাবক ছাউনি নির্মাণ, শহর পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে শহরে ৫টি ডাস্টবিন প্রদান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনকে ক্রীড়াসামগ্রী ও অনুদান প্রদান, দু:স্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, আওয়ামী লীগের নির্মাণে সয়েল টেষ্ট বাবদ অনুদান, বিগত ৮বছর যাবৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংর্বধনা, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বিতরণসহ নানা সামাজিক সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি যা পৌরবাসী অবগত আছেন। আমার সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রিয় ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশাবাদী।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের আদর্শে গড়া এই নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। প্রবীণ এই নেতাকে মেয়র করার লক্ষ্যে প্রতিদিন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে গিয়ে গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় করছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষদের কাছে।

মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নওগাঁ পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির বিধানে তিনি আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। তার স্বপ্নও মাটি হয়ে গেছে। নওগাঁ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হবার পরেও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। বিশেষ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে অচল। এর অন্যতম কারণ নওগাঁর পৌর মেয়র অন্য মতাদর্শের হওয়ার ফলে সহযোগিতার অভাব।’

তিনি বলেন, এই প্রথম দল থেকে আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। তাই নওগাঁ পৌরবাসী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেতা আব্দুল জলিলের স্বপ্ন আধুনিক পৌরসভা গঠনে সহায়তা করবেন, এবং দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। তার প্রমাণ দেশবাসী পেয়েছে। যদি আমি জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে মাদক, সান্ত্রাসমুক্ত ও আধুনিক ডিজিটাল মডেল পৌরসভা হিসেবে পৌরবাসীকে উপহার দিব।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৪১টি কেন্দ্রে ৩৩২টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে প্রচণ্ড শীত ও করোনার প্রভাবকে পিছনে ফেলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারের বাড়ি বাড়ি। পাড়া-মহল্লা, চায়ের স্টলে আড্ডাসহ সবখানে এখন নির্বাচনি আলাপ। পৌর বাসীর মুখে-মুখে এখন নির্বাচনই যেন এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে করছেন কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেই সাথে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নিজেদের তুলে ধরতে লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিজেদের জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণায় যেন দম ফেলার সময় নেই কোন প্রার্থীর। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পুরো পৌর এলাকা জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করছেন। সব কিছু মিলে নওগাঁ শহরের সবখানে এখন মূল আলোচ্য বিষয় নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে কে হবেন পৌর পিতা।#

আপলোডকারীর তথ্য

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ০৫:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ :

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে বর্তমান মেয়র নজমুল হক সনি, জাতীয় পার্টির নাঙ্গল প্রতীকে ইফতারুল ইসলাম বকুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাত পাখা প্রতীকে আতিকুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নারিকেল গাছ প্রতীকে নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ জানুয়ারী। প্রচারে পিছিয়ে নেই কেউ। পৌরসভা জুড়ে ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেটের সমারোহ। তবে এ আসনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে অভিজ্ঞদের ধারনা।

নওগাঁ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ তে। নওগাঁ সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। মাষ্টার প্ল্যান অনুসারে পৌরসভার আয়তন ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮৭ সালে মূল শহরের সঙ্গে আরও শতাধিক মহল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। মোট ভোটার ১ লাখ ১৬ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৭ হাজার ২৩৯ জন ও নারী ৫৯ হাজার ১ জন।

সবশেষ ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে ৩৪ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় বার মেয়র নির্বাচিত হন নজমুল হক সনি। সেবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণের চেয়ে ২ হাজার ২শ’ ভোট বেশী পান তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটে পরপর দুবার নির্বাচিত পৌর মেয়র। পৌরবাসীর দোয়া ও সমর্থনের কারণেই তা সম্বব হয়েছে।’

কি কারণে পৌরবাসী আপনাকে আবার ভোট দিবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীকে আধুনিক ও মানসম্মত পৌরসভা উপহার দিতে মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা প্রসস্থকরণ, ড্রেন নির্মাণ কাজকে তরান্বিত করেছি। নওগাঁ পৌরসভায় ২টির বেশি আরডিসি ছিলনা। আমি বর্তমানে সকল রাস্তার পাশাপাশি আরডিসি ড্রেন নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। পৌর এলাকা আলোকিত করতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এর ব্যবস্থা করেছি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এখন পৌরবাসীর দোড়গোড়ায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে পুরো পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করছি।’

নজমুল হক সনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ফুটপাত নির্মাণ করেছি। শহরের মুক্তির মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে। সিডিসি প্রকল্পের মাধ্যমে ঘনবসতীপূর্ণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দরিদ্র এলাকায় সকল অলিগলি পাকাকরণ, ড্রেন নির্মাণ, পাকা পায়খানা নির্মাণ নিশ্চিত করেছি। এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের জরিপে নওগাঁ পেরৈসভা প্রথম স্থান অধিকার করায় বিদেশে ইংল্যান্ড, চীন, ও জাপান সফরে হয়েছে আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন। গরীব অসহায় জনগোষ্ঠীর মাঝে যথাযথভাবে ভিজিএফ চাল, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা, শিশু খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত করেছি। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা অব্যহত আছে। ইতোমধ্যে ময়লা আর্বজনা থেকে কমপোষ্ট সার তৈরি প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যার কার্যক্রম আগামী দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি পৌরসভায় যে সব কাজ করেছি এগুলোর জন্য প্রিয় পৌরবাসী আমাকে পূণরায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি আবারও জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে সার্বিকভাবে একটি উন্নত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আমি আশা করছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

নির্বাচনের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বললেন, ‘পৌরসভা নির্বাচন করবো বলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে আসছিলাম। মনোনয়ন উত্তোলনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছি। যাচাই বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল করা হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে বৈধতা পাই। ফলে মাঠে নামতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারনায় বিভিন্নভাবে বাঁধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। ভোটারদের কাছে আমার প্রতাশ্যা প্রতীক না, ব্যক্তি দেখে ভোট দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে, সবার আগে প্রমাণ করবো, আমি এই পৌরবাসির লোক। আমার অফিস হবে আপনাদের অফিস। আর পৌর ভবন হবে আপনাদের বাড়ি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেন পৌরবাসী আপনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তি উদ্যোগে শহরের কোমাইগাড়ীতে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, পৌর একালায় দুটি মসজিদ নির্মাণ, নওগাঁ সদর হাসপাতালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার মেশিন প্রদান, একটি ময়লা ফেলার গাড়ি প্রদান, অস্বচ্ছল ও দু:স্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে পৌর এবং নওগাঁ সদর উপজেলার ৫০০ জনকে সেলাই মেশিন প্রদান, নওগাঁ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ ও মন্দিরের উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন সময় অনুদান প্রদান, নওগাঁ কেডি ও বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অভিবাবক ছাউনি নির্মাণ, শহর পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে শহরে ৫টি ডাস্টবিন প্রদান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনকে ক্রীড়াসামগ্রী ও অনুদান প্রদান, দু:স্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, আওয়ামী লীগের নির্মাণে সয়েল টেষ্ট বাবদ অনুদান, বিগত ৮বছর যাবৎ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংর্বধনা, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বিতরণসহ নানা সামাজিক সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছি যা পৌরবাসী অবগত আছেন। আমার সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রিয় ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশাবাদী।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের আদর্শে গড়া এই নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। প্রবীণ এই নেতাকে মেয়র করার লক্ষ্যে প্রতিদিন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে গিয়ে গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় করছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষদের কাছে।

মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নওগাঁ পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির বিধানে তিনি আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। তার স্বপ্নও মাটি হয়ে গেছে। নওগাঁ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হবার পরেও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। বিশেষ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে অচল। এর অন্যতম কারণ নওগাঁর পৌর মেয়র অন্য মতাদর্শের হওয়ার ফলে সহযোগিতার অভাব।’

তিনি বলেন, এই প্রথম দল থেকে আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। তাই নওগাঁ পৌরবাসী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেতা আব্দুল জলিলের স্বপ্ন আধুনিক পৌরসভা গঠনে সহায়তা করবেন, এবং দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। তার প্রমাণ দেশবাসী পেয়েছে। যদি আমি জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে মাদক, সান্ত্রাসমুক্ত ও আধুনিক ডিজিটাল মডেল পৌরসভা হিসেবে পৌরবাসীকে উপহার দিব।’

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৪১টি কেন্দ্রে ৩৩২টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে প্রচণ্ড শীত ও করোনার প্রভাবকে পিছনে ফেলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারের বাড়ি বাড়ি। পাড়া-মহল্লা, চায়ের স্টলে আড্ডাসহ সবখানে এখন নির্বাচনি আলাপ। পৌর বাসীর মুখে-মুখে এখন নির্বাচনই যেন এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে করছেন কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেই সাথে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নিজেদের তুলে ধরতে লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিজেদের জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণায় যেন দম ফেলার সময় নেই কোন প্রার্থীর। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পুরো পৌর এলাকা জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করছেন। সব কিছু মিলে নওগাঁ শহরের সবখানে এখন মূল আলোচ্য বিষয় নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচনে কে হবেন পৌর পিতা।#