মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২৩ জানুয়ারী ২০২১ :
গত ২০ বছর ধরে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন রিনা বেগম। দিনমজুর স্বামী রাশেদুল ইসলামের আয়ে চলে পাঁচ সদস্যের পরিবার। দিন এনে দিন খাওয়া এ পরিবারটির নিজের জায়গা জমি কিছুই নেই। জমি কিনে ঘর বানানোর স্বপ্নও তারা কখনো দেখেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া আধাপাকা গৃহে জীবনের সেই কষ্ট দূর হচ্ছে রিনা বেগমের। এখন সন্তানদের নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে হতদরিদ্র এ পরিবারটি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের হতদরিদ্র এ পরিবারটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন। তার মতো জেলার এক হাজার ৫৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে এমন আধাপাকা গৃহে।
জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়। সে মোতাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সেগুলো তৈরি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পূনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় জেলার ১১টি উপজেলায় এক হাজার ৫৬টি পরিবার ঘর পেয়েছেন শনিবার (২৩ জানুয়ারী)। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১০টি, বদলগাছীতে ৪৮টি, মহাদেবপুরে ৩৪টি, আত্রাইয়ে ১৭৫টি, রানীনগরে ৯০টি, মান্দায় ৯০টি, সাপাহারে ১২০টি, নিয়ামতপুরে ৭১টি, পোরশায় ৫৪টি, ধামইরহাটে ১৫০টি এবং পত্নীতলায় ১১৪টি।
এগুলোর মধ্যে ভিক্ষুক পরিবার ৩১টি, প্রতিবন্ধী ১৫টি, অন্যের বাড়িতে-রাস্তার পাশে ও খোলা জায়গায় ঝুপড়ি ঘরে থাকা ১১টি, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা ৫৫টি, দিনমজুর ১২টি, আদিবাসী ৯১টি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার রয়েছে ৭৩টি।
আধাপাকা প্রতিটি গৃহ নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতিটি গৃহ একই ধরনের। যেখানে আছে দুইটি শয়ন কক্ষ, একটি টয়লেট, রান্নাঘর, কমনস্পেস ও একটি বারান্দা। এসব গৃহ প্রত্যেক পরিবারের জন্য আলাদা করে নির্মাণ করা হয়েছে।
শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনের হাত থেকে জমি ও বাড়ির কবুলিয়ত দলিল, খারিজের পরচা, ডিসিআরসহ যাবতীয় কাগজের ফাইল হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হতদরিদ্র গৃহবধূ রিনা বেগম বলেন, ২০ বছর আগে এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর কয়েক বছর বোনের বাড়িতে ছিলেন। সেখানে জায়গা না হওয়ায় বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। তবে গত পাঁচ বছর থেকে কুমুরিয়া গ্রামে অন্যের জমিতে এক আম বাগানের ভিতর টিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন। আম বাগান দেখাশোনা করার শর্তে মালিক সেখানে থাকতে দিয়েছেন। দিনমজুর স্বামী কখনো ট্রাকে, কখনো ভ্যান ও রিকশা চালানোর কাজ করেন।
তিনি বলেন, ‘কখনো জমি কিনে বাড়ি করার স্বপ্ন দেখিনি। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি আমাদের মতো দরিদ্রদের থাকার জন্য একটা ভাল বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন।’
একই এলাকার হতদরিদ্র ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। আগে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থাকতেন। এখন বোনের জায়গায় টিনের বেড়ার ঘর দিয়ে বসবাস করছেন। সরকার তার নামে একটা বাড়ির বরাদ্দ দিয়েছেন। বাড়ির মধ্যে রান্নাঘর, গোসলখানা ও টয়লেট আছে। ঘরগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘খাই বা না খাই, এখন আল্লাহর রহমতে নিশ্চিন্তে সে বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতে পারব।’
নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নি:সন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ঘরের বরাদ্দ আরেকটু বাড়ানো গেলে আরো ভালো হতো। বাড়ির ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে ঘরের যে ভীত দেড় ফুট আছে, সেটা আরেকটু বাড়াতে হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৯৩টি। প্রথম পর্যায়ে জেলার এক হাজার ৫৬টি পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে গৃহ প্রদান করা হয়েছে। গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার, বিশেষ করে অন্যের বাড়িতে ও রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে বাস করা পরিবার, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা, দিনমজুর, ভিক্ষুক ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টি আর ঝড় নিয়েই এতদিন তারা অন্যের জায়গায় বসবাস করত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এসব অসহায়রা ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।’ #