নওগাঁ ০১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

নিয়ামতপুরে কামলা খেটে পড়াশুনা চলছে তিন আদিবাসী ভাইবোনের<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কাজী রওশন জাহান, নওগাঁ, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ :

আদিবাসী দরিদ্র পরিবারে জন্ম ওদের। তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাই সুম চড়ে বড়। সে রাজশাহী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। মেঝ বোন শিউলী চড়ে নিয়ামতপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোন শিল্পী চড়ে গাংগোর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী।

অন্যের জমিতে কামলা খেটে শ্রম বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় তিন ভাই-বোনের শিক্ষা গ্রহণের অদম্য এ ইচ্ছা শক্তির কথা এখন এলাকায় সবার মুখে মুখে। দরিদ্র আদিবাসী পরিবারে জন্ম হওয়ায় শ্রম বিক্রি করেই চলছে তাদের অনিশ্চিত শিক্ষা গ্রহণের এ পথচলা। তারা জানেনা কেউ এত পথ চলা কতদিনের?

অদম্য শিক্ষানুরাগী এ তিন ভাই-বোন হলো নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের পাড়ইল গ্রামের আদিবাসী বর্ণ চড়ের ছেলে-মেয়ে। মা ধনপতি মার্ডি। খুব কষ্ট করেই সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন এ দম্পত্তি। দিন-রাত পরিশ্রম করে সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন বুনছেন মনে মনে।

সম্প্রতি বর্ণ চড়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর সাড়ে বারোটা। প্রতিবেশীরা জানান, তারা সবাই গেছেন অন্যের জমিতে কাজ করতে। তারা শ্রম বিক্রি করে বোরোর মাঠে কাজ করছে অন্যের জমিতে।

দু’বোন শিউলী চড়ে ও শিল্পী চড়ে মায়ের সাথে বোরোর মাঠে ধান রোপনের কাজে ব্যস্ত। তাদের শিক্ষা গ্রহণের এ সংগ্রামের কথা জানালেন মা ধনপতি মার্ডি। তিনি জানান, সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নের কথা। জানান, অর্থ সংকটের মধ্য দিয়েও তিন সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা।

তিনি বলেন, অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় রোজগার হয় তা দিয়েই সংসারের খরচসহ সন্তানদের পিছনে লেখাপড়ায় খরচ করেন তিনি। সন্তানদের যুগোপযোগী ডিজিটাল যুগের চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা শিক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই খুব হিমশিম খেতে হয় তাদের।

তিনি ভেজা গলায় বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় তখন, যখন সন্তানরা লেখা-পড়া ছেড়ে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে। মা হয়ে এ দৃশ্য দেখার কষ্ট কত যে বেদনা বিধুর তা তিনিই জানেন।’ এমন সময় লক্ষ্য করা গেল শিক্ষানুরাগী এ মা’র চোখের কোনে চিকচিক করছে জল।

শিউলী চড়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও শিক্ষা-দীক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি দেশের জন্য, এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চান। তাই কষ্ট করেই তার এ লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া।

বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার তাদের এগিয়ে নিতে যে সহায়তা করছেন তার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জন্য নিয়ামতপুরে একটি আদিবাসী কালচারাল সেন্টার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান কলেজ পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী।#

আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ামতপুরে কামলা খেটে পড়াশুনা চলছে তিন আদিবাসী ভাইবোনের<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ০২:৩০:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কাজী রওশন জাহান, নওগাঁ, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ :

আদিবাসী দরিদ্র পরিবারে জন্ম ওদের। তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাই সুম চড়ে বড়। সে রাজশাহী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। মেঝ বোন শিউলী চড়ে নিয়ামতপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোন শিল্পী চড়ে গাংগোর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী।

অন্যের জমিতে কামলা খেটে শ্রম বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় তিন ভাই-বোনের শিক্ষা গ্রহণের অদম্য এ ইচ্ছা শক্তির কথা এখন এলাকায় সবার মুখে মুখে। দরিদ্র আদিবাসী পরিবারে জন্ম হওয়ায় শ্রম বিক্রি করেই চলছে তাদের অনিশ্চিত শিক্ষা গ্রহণের এ পথচলা। তারা জানেনা কেউ এত পথ চলা কতদিনের?

অদম্য শিক্ষানুরাগী এ তিন ভাই-বোন হলো নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের পাড়ইল গ্রামের আদিবাসী বর্ণ চড়ের ছেলে-মেয়ে। মা ধনপতি মার্ডি। খুব কষ্ট করেই সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন এ দম্পত্তি। দিন-রাত পরিশ্রম করে সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন বুনছেন মনে মনে।

সম্প্রতি বর্ণ চড়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর সাড়ে বারোটা। প্রতিবেশীরা জানান, তারা সবাই গেছেন অন্যের জমিতে কাজ করতে। তারা শ্রম বিক্রি করে বোরোর মাঠে কাজ করছে অন্যের জমিতে।

দু’বোন শিউলী চড়ে ও শিল্পী চড়ে মায়ের সাথে বোরোর মাঠে ধান রোপনের কাজে ব্যস্ত। তাদের শিক্ষা গ্রহণের এ সংগ্রামের কথা জানালেন মা ধনপতি মার্ডি। তিনি জানান, সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নের কথা। জানান, অর্থ সংকটের মধ্য দিয়েও তিন সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা।

তিনি বলেন, অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় রোজগার হয় তা দিয়েই সংসারের খরচসহ সন্তানদের পিছনে লেখাপড়ায় খরচ করেন তিনি। সন্তানদের যুগোপযোগী ডিজিটাল যুগের চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা শিক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই খুব হিমশিম খেতে হয় তাদের।

তিনি ভেজা গলায় বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় তখন, যখন সন্তানরা লেখা-পড়া ছেড়ে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে। মা হয়ে এ দৃশ্য দেখার কষ্ট কত যে বেদনা বিধুর তা তিনিই জানেন।’ এমন সময় লক্ষ্য করা গেল শিক্ষানুরাগী এ মা’র চোখের কোনে চিকচিক করছে জল।

শিউলী চড়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও শিক্ষা-দীক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি দেশের জন্য, এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চান। তাই কষ্ট করেই তার এ লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া।

বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার তাদের এগিয়ে নিতে যে সহায়তা করছেন তার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জন্য নিয়ামতপুরে একটি আদিবাসী কালচারাল সেন্টার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান কলেজ পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী।#