নওগাঁ ০১:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

নিয়ামতপুর ইউএনও’র মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন : বালাইনাশক দিয়ে কৃষকের সাথে প্রতারণা

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৩ অক্টোবর ২০২০ :

মঙ্গলবার নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জয়া মারিয়া পেরেরা নকল বালাইনাশক বিক্রির সময় আরিফুল নামে এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। ওই নকল বালাইনাশক বিক্রেতা যে কত কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করেছেন সে সম্পর্কে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইউএনও জয়া মারিয়া পেরেরা তাঁর ফেসবুক আইডিতে এক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটি যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মহাদেবপুর দর্পণের অগণিত পাঠকের জন্য তাাঁর লেখা প্রতিবেদনটি নীচে হুবহু প্রকাশ করা হলো :

‘‘কোটান ৫০ ডব্লিউ জি। এটা মিমপেক্স এগ্রোকেমিক্যালস লিমি. এর একটি বালাইনাশক। ধানের ক্ষতিকারক পোকা এবং বাদামী গাছ ফড়িং দমনে এটি কার্যকরী।

ছবিতে দেখুন আমার দু হাতে কোটানের দুটো কৌটা। দেখতে হুবুহু এক। কোথাও কোন তফাৎ নেই। প্রতিটি লেখা পর্যন্ত হুবুহু একইরকম। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিগণ পর্যন্ত বিষ্মিত হয়ে গেছে তাদের প্রডাক্টের এত নিখুঁত নকল দেখে! আমিও হতবাক! এটাতো আসলেই বুঝার কোন উপায় নেই।

পরে কোম্পানির প্রতিনিধি পার্থক্যটা ধরিয়ে দিলেন। আসলটিতে যে ধানের ছড়া এবং লোগোর ছবি আছে সেটি একটু হালকা সবুজ রংয়ের। কিন্তু নকলটাতে তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল সবুজ (হলুদাভ সবুজ) রংয়ের। তবে আসল পার্থক্যটা ধরা পরে কৌটা খোলার পর। আসলটার দানা একদম সাদা। আর নকলটার দানার রং কিছুটা বাদামী রংয়ের। অর্থাৎ কেনার সময় কৌটা দেখে দৃশ্যত তেমন কোন তফাৎ চোখে পড়েনা। ফলে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ওয়াহিদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রফিকুল ইসলাম এবং কোম্পানির আরএমসহ অন্যান্য প্রতিনিধি এবং সচেতন কৃষকদের সহায়তায় আজ (মঙ্গলবার) হাতেনাতে ধৃত হন আরিফুল নামের ভ্রাম্যমাণ এ বালাইনাশক বিক্রেতা। তার বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলায়।
এ ধরণের নকল বালাইনাশক কোথায় তৈরি হচ্ছে এ সম্পর্কে ধৃত ব্যক্তি কিছু বলতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী বালাইনাশক/কীটনাশক বিক্রির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং লাইসেন্সে বর্ণিত শর্ত মেনে বিক্রয় করতে হবে।

আমাদের অল্পশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা কৃষককে ভুলিয়ে ভালিয়ে কম দামে গছিয়ে দিচ্ছিল এ নকল বালাইনাশক। একটিবার বেচারা কৃষকের ক্ষতির কথা ভাবুন। তার কাছে প্রাণাধিক প্রিয় তার ক্ষেতের ফসল। নকল বালাইনাশক দিয়ে তার সে ফসলের ক্ষেতের কি হাল হতো!

জমির ফসল তুলে তার কিস্তি পরিশোধ, সংসার খরচ, হয়তো সন্তানের বিয়ে অথবা চিকিৎসা.. কত হিসেবে নিকেশ থাকে একজন কৃষকের।
বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্নগুলো সবই তার ফসলকে ঘিরে! সেই কৃষকের সাথে এত নির্মম প্রতারণা!

খুব খারাপ লেগেছে আজ। প্রচন্ড রাগও হচ্ছিল!

যাই হোক আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্টে তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। তার কাছে রক্ষিত ১৭ কৌটা নকল বালাইনাশক জব্দ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউশন দাখিল করেছেন মিমপেক্স এগ্রো. কেমি. লিমি. এর এসএমও মো: ইউনূস আলী।

কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। কৃষকের কষ্ট লাঘবের জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে বিনামূল্যে সার বীজ সরবরাহ করাসহ প্রান্তিক কৃষকদের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এর কারণ একটাই কৃষক হাসলে হাসবে দেশ। কৃষিতে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমরা অর্জন করেছি খাদ্য নিরাপত্তা। এ করোনা বিপর্যয় এবং ভয়াবহ বন্যার মাঝেও কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে গেছে বলেই আমাদের কোন খাদ্য ঘাটতি হয়নি। আর সেই কৃষকের ভাগ্য নিয়েই তামাশা করছেন সমাজের কিছু বিবেকহীন, লোভী মানুষ।
কৃষকবৃন্দকে অনুরোধ করব অনুমোদিত দোকান থেকে বালাইনাশক কিনুন। কম দামে অপরিচিত লোকজনের কাছ থেকে নকল বালাইনাশক কিনে প্রতারিত হবেননা। এরকম আরো প্রতারকের তথ্য জানা থাকলে উপজেলা কৃষি অফিসার অথবা আমাকে জানাতে পারেন। কঠোর ব্যবস্হা নেয়া হবে।

আজকের এ অভিযানে সহযোগিতার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার, নিয়ামতপুর থানার পুলিশ সদস্যবৃন্দ, মিমপেক্স এগ্রো. কেমি. লিমি. কোম্পানির আরএমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’’#

আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ামতপুর ইউএনও’র মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন : বালাইনাশক দিয়ে কৃষকের সাথে প্রতারণা

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৬:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর ২০২০

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৩ অক্টোবর ২০২০ :

মঙ্গলবার নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জয়া মারিয়া পেরেরা নকল বালাইনাশক বিক্রির সময় আরিফুল নামে এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন। ওই নকল বালাইনাশক বিক্রেতা যে কত কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করেছেন সে সম্পর্কে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ইউএনও জয়া মারিয়া পেরেরা তাঁর ফেসবুক আইডিতে এক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেদনটি যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। মহাদেবপুর দর্পণের অগণিত পাঠকের জন্য তাাঁর লেখা প্রতিবেদনটি নীচে হুবহু প্রকাশ করা হলো :

‘‘কোটান ৫০ ডব্লিউ জি। এটা মিমপেক্স এগ্রোকেমিক্যালস লিমি. এর একটি বালাইনাশক। ধানের ক্ষতিকারক পোকা এবং বাদামী গাছ ফড়িং দমনে এটি কার্যকরী।

ছবিতে দেখুন আমার দু হাতে কোটানের দুটো কৌটা। দেখতে হুবুহু এক। কোথাও কোন তফাৎ নেই। প্রতিটি লেখা পর্যন্ত হুবুহু একইরকম। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিগণ পর্যন্ত বিষ্মিত হয়ে গেছে তাদের প্রডাক্টের এত নিখুঁত নকল দেখে! আমিও হতবাক! এটাতো আসলেই বুঝার কোন উপায় নেই।

পরে কোম্পানির প্রতিনিধি পার্থক্যটা ধরিয়ে দিলেন। আসলটিতে যে ধানের ছড়া এবং লোগোর ছবি আছে সেটি একটু হালকা সবুজ রংয়ের। কিন্তু নকলটাতে তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল সবুজ (হলুদাভ সবুজ) রংয়ের। তবে আসল পার্থক্যটা ধরা পরে কৌটা খোলার পর। আসলটার দানা একদম সাদা। আর নকলটার দানার রং কিছুটা বাদামী রংয়ের। অর্থাৎ কেনার সময় কৌটা দেখে দৃশ্যত তেমন কোন তফাৎ চোখে পড়েনা। ফলে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ওয়াহিদুজ্জামান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রফিকুল ইসলাম এবং কোম্পানির আরএমসহ অন্যান্য প্রতিনিধি এবং সচেতন কৃষকদের সহায়তায় আজ (মঙ্গলবার) হাতেনাতে ধৃত হন আরিফুল নামের ভ্রাম্যমাণ এ বালাইনাশক বিক্রেতা। তার বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলায়।
এ ধরণের নকল বালাইনাশক কোথায় তৈরি হচ্ছে এ সম্পর্কে ধৃত ব্যক্তি কিছু বলতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

বালাইনাশক (পেস্টিসাইডস) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী বালাইনাশক/কীটনাশক বিক্রির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং লাইসেন্সে বর্ণিত শর্ত মেনে বিক্রয় করতে হবে।

আমাদের অল্পশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা কৃষককে ভুলিয়ে ভালিয়ে কম দামে গছিয়ে দিচ্ছিল এ নকল বালাইনাশক। একটিবার বেচারা কৃষকের ক্ষতির কথা ভাবুন। তার কাছে প্রাণাধিক প্রিয় তার ক্ষেতের ফসল। নকল বালাইনাশক দিয়ে তার সে ফসলের ক্ষেতের কি হাল হতো!

জমির ফসল তুলে তার কিস্তি পরিশোধ, সংসার খরচ, হয়তো সন্তানের বিয়ে অথবা চিকিৎসা.. কত হিসেবে নিকেশ থাকে একজন কৃষকের।
বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্নগুলো সবই তার ফসলকে ঘিরে! সেই কৃষকের সাথে এত নির্মম প্রতারণা!

খুব খারাপ লেগেছে আজ। প্রচন্ড রাগও হচ্ছিল!

যাই হোক আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্টে তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। তার কাছে রক্ষিত ১৭ কৌটা নকল বালাইনাশক জব্দ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউশন দাখিল করেছেন মিমপেক্স এগ্রো. কেমি. লিমি. এর এসএমও মো: ইউনূস আলী।

কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। কৃষকের কষ্ট লাঘবের জন্য সহজ শর্তে কৃষি ঋণ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে বিনামূল্যে সার বীজ সরবরাহ করাসহ প্রান্তিক কৃষকদের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এর কারণ একটাই কৃষক হাসলে হাসবে দেশ। কৃষিতে অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমরা অর্জন করেছি খাদ্য নিরাপত্তা। এ করোনা বিপর্যয় এবং ভয়াবহ বন্যার মাঝেও কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে গেছে বলেই আমাদের কোন খাদ্য ঘাটতি হয়নি। আর সেই কৃষকের ভাগ্য নিয়েই তামাশা করছেন সমাজের কিছু বিবেকহীন, লোভী মানুষ।
কৃষকবৃন্দকে অনুরোধ করব অনুমোদিত দোকান থেকে বালাইনাশক কিনুন। কম দামে অপরিচিত লোকজনের কাছ থেকে নকল বালাইনাশক কিনে প্রতারিত হবেননা। এরকম আরো প্রতারকের তথ্য জানা থাকলে উপজেলা কৃষি অফিসার অথবা আমাকে জানাতে পারেন। কঠোর ব্যবস্হা নেয়া হবে।

আজকের এ অভিযানে সহযোগিতার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার, নিয়ামতপুর থানার পুলিশ সদস্যবৃন্দ, মিমপেক্স এগ্রো. কেমি. লিমি. কোম্পানির আরএমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’’#