নওগাঁ ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

সমস্যায় জর্জরিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে নেই দর্শনার্থী

মহাদেবপুর দর্পণ, এমদাদুল হক দুলু, বদলগাছী (নওগাঁ), ১০ অক্টোবর ২০২০ :

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার।

করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘ ৬ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপরেও করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন সকাল হলেই যেখানে হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো বিহার প্রাঙ্গন। এখন সেই ভীড় নেই।

কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার ও শনিবার পাঁচ থেকে ছয়শ’ দর্শনার্থী আসেন। অন্যান্য দিন আরো কম। শুক্রবার তথ্য সংগ্রহকালে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে শতাধিক দর্শনার্থী ভিতরে প্রবেশ করেন। তারা জানালেন, নানা সমস্যার কথা।

মাদারীপুর থেকে রোমান ও তার বন্ধু দেখতে আসেন পাহাড়পুর। সঙ্গে ছিলেন পাঁচবিবির বন্ধু মাহমুদুল হাসান ও রুহুল আমীন। তারা জানালেন, দূর থেকে আসলাম দেখার জন্য। এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বৌদ্ধ বিহার দেখতে পেলাম না। উপরে উঠতে পারলাম না। উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি রয়েছে তা ভাঙ্গা ও তাঁরকাঁটা দিয়ে ঘেরা। দেখতে পেলাম না এসে লাভ কী!

ঝালকাঠি জেলার রাজপুর থেকে এসেছেন রিয়াজুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তারা জানান, বই পুস্তকে পড়েছি পাহাড়পুরের কথা। এখন স্বচক্ষে দেখতেছি অনেক ভাল লাগছে। তবে যেটা মেইন আকর্ষণ বৌদ্ধ বিহার, সেটা দেখতে পেলাম না। কষ্ট থেকেই গেল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গন নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বিহার অবকাঠোমোতে পারাপারে যে কাঠের ব্রিজ রয়েছে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীরা হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। বিহারের উত্তর দিকে ১টি ব্রিজ রয়েছে সেই ব্রিজের কাঠ পচে খুলে পড়ছে। দক্ষিণ দিকে ১টি ব্রিজ রয়েছে তার অবস্থা একই।

এছাড়া প্রধান সমস্যা বিহার বা মন্দিরের উপরে ওঠার জন্য যে কাঠের সিঁড়ি তা পচন ধরে খুলে খুলে পড়ছে। ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সিঁড়ি তাঁরকাঁটা দিয়ে ঘেরাও করে দুর্ঘটনার আশংকায় দর্শনার্থীদের উপরে ওঠা নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এতে ভ্রমণ পিয়াসী দর্শনার্থীরা পাহাড়পুরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ সংগঠনের লোকজন পাহাড়পুর এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকলেও রান্না করে খাওয়ার জন্য জায়গা নেই। আগে ভিতরে ফাঁকা জায়গায় রান্না করতেন দর্শনার্থীরা। এখন তা নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ভিতরে দর্শনার্থীদের বসার ছাউনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটি ক্যানটিন নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিনেও তা চালু করা হয়নি। বাইরের হোটেলে খাবার থাকলেও দাম বেশি। আগ্রহ নিয়ে আসার পরে নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে দর্শনর্থীরা পাহাড়পুরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এ বিষয়ে পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর জানান, পাহাড়পুর সংস্কারের সময় ঠিকাদার যে কাজ করেছে তা খুবই নিম্নমানের। অল্প সময়ের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কাস্টডিয়ান মো. ফজলুল করিম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হান্নান মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, পাহাড়পুরের সমস্যার কথা আমি জেনেছি কিন্তু এ মুহুর্তে সমস্যা যদি সমাধান করি তাহলে যে ঠিকাদার এই নিম্নমানের কাজ করেছে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে যাবে। আমি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি লিখেছি। নিম্নমানের কাজ করার জন্যে তার বিরুদ্ধে যেন একটা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে দর্শনার্থীরা পাহাড়পুরে ঘুরতে এসে যদি সমস্যায় পড়েন তাহলে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।#

আপলোডকারীর তথ্য

সর্বোচ্চ পঠিত

সমস্যায় জর্জরিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে নেই দর্শনার্থী

প্রকাশের সময় : ০২:১৯:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০

মহাদেবপুর দর্পণ, এমদাদুল হক দুলু, বদলগাছী (নওগাঁ), ১০ অক্টোবর ২০২০ :

এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার।

করোনা সংক্রমণ রোধে দীর্ঘ ৬ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপরেও করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি দর্শনার্থীরা। প্রতিদিন সকাল হলেই যেখানে হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো বিহার প্রাঙ্গন। এখন সেই ভীড় নেই।

কর্তৃপক্ষ জানান, শুক্রবার ও শনিবার পাঁচ থেকে ছয়শ’ দর্শনার্থী আসেন। অন্যান্য দিন আরো কম। শুক্রবার তথ্য সংগ্রহকালে সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে শতাধিক দর্শনার্থী ভিতরে প্রবেশ করেন। তারা জানালেন, নানা সমস্যার কথা।

মাদারীপুর থেকে রোমান ও তার বন্ধু দেখতে আসেন পাহাড়পুর। সঙ্গে ছিলেন পাঁচবিবির বন্ধু মাহমুদুল হাসান ও রুহুল আমীন। তারা জানালেন, দূর থেকে আসলাম দেখার জন্য। এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। বৌদ্ধ বিহার দেখতে পেলাম না। উপরে উঠতে পারলাম না। উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি রয়েছে তা ভাঙ্গা ও তাঁরকাঁটা দিয়ে ঘেরা। দেখতে পেলাম না এসে লাভ কী!

ঝালকাঠি জেলার রাজপুর থেকে এসেছেন রিয়াজুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা থেকে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তারা জানান, বই পুস্তকে পড়েছি পাহাড়পুরের কথা। এখন স্বচক্ষে দেখতেছি অনেক ভাল লাগছে। তবে যেটা মেইন আকর্ষণ বৌদ্ধ বিহার, সেটা দেখতে পেলাম না। কষ্ট থেকেই গেল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গন নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বিহার অবকাঠোমোতে পারাপারে যে কাঠের ব্রিজ রয়েছে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীরা হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। বিহারের উত্তর দিকে ১টি ব্রিজ রয়েছে সেই ব্রিজের কাঠ পচে খুলে পড়ছে। দক্ষিণ দিকে ১টি ব্রিজ রয়েছে তার অবস্থা একই।

এছাড়া প্রধান সমস্যা বিহার বা মন্দিরের উপরে ওঠার জন্য যে কাঠের সিঁড়ি তা পচন ধরে খুলে খুলে পড়ছে। ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সিঁড়ি তাঁরকাঁটা দিয়ে ঘেরাও করে দুর্ঘটনার আশংকায় দর্শনার্থীদের উপরে ওঠা নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এতে ভ্রমণ পিয়াসী দর্শনার্থীরা পাহাড়পুরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ সংগঠনের লোকজন পাহাড়পুর এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকলেও রান্না করে খাওয়ার জন্য জায়গা নেই। আগে ভিতরে ফাঁকা জায়গায় রান্না করতেন দর্শনার্থীরা। এখন তা নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ভিতরে দর্শনার্থীদের বসার ছাউনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একটি ক্যানটিন নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘদিনেও তা চালু করা হয়নি। বাইরের হোটেলে খাবার থাকলেও দাম বেশি। আগ্রহ নিয়ে আসার পরে নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে দর্শনর্থীরা পাহাড়পুরে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

এ বিষয়ে পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর জানান, পাহাড়পুর সংস্কারের সময় ঠিকাদার যে কাজ করেছে তা খুবই নিম্নমানের। অল্প সময়ের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কাস্টডিয়ান মো. ফজলুল করিম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হান্নান মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, পাহাড়পুরের সমস্যার কথা আমি জেনেছি কিন্তু এ মুহুর্তে সমস্যা যদি সমাধান করি তাহলে যে ঠিকাদার এই নিম্নমানের কাজ করেছে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে যাবে। আমি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি লিখেছি। নিম্নমানের কাজ করার জন্যে তার বিরুদ্ধে যেন একটা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে দর্শনার্থীরা পাহাড়পুরে ঘুরতে এসে যদি সমস্যায় পড়েন তাহলে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।#