নওগাঁ ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

ইতিহাস কথা কয় : ধামইরহাটে বালু খননে বেরিয়ে আসছে মধ্যযুগের স্থাপনা

মহাদেবপুর দর্পণ, এম, এ, মালেক, স্টাফ রিপোর্টার, ধামইরহাট (নওগাঁ), ৬ অক্টোবর ২০২০ :

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা ৬ নং জাহানপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর জাহানপুর গ্রামে হেলাল মেম্বারের বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার পূর্বদিকে আবাদি জমিতে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে পলিমাটির নীচে অন্তত তিনটি ইটের কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পাগল দেওয়ান বিজিবি মোড় ও পাগল দেওয়ান পীরের মাজার থেকে শুরু করে উত্তর দিকে ধামইরহাট-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের নানাইচ বাজার হয়ে দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ এলাকার ভিটে-মাটি খুঁড়ে উৎকৃষ্ট মানের বালির সন্ধান পাওয়া যায়।

জমির মালিকরা এইসব বালি প্রায় তিন দশক ধরে বিক্রিয় করে আসছেন। বালি উত্তোলনের জন্য খনন করতে গিয়ে পলিমাটির নীচে তিনটি ইটের কক্ষ বেরিয়ে আসলে সেখানে মাটির তৈরি জিনিস পত্রের অনেক নিদর্শন পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সব নিদর্শন দেখে অনুমান করা যায় এটি অনেক মধ্যযুগের পুরনো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খননকরা ৭২ শতক সরকারের এই জমিটি নানাইচ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হলে তার চার মেয়ে ও স্ত্রী পলিমাটি খুঁড়ে চাষাবাদের জন্য জমিটি তৈরি করছিলেন ।

২ নম্বর জাহানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক ও লুৎফর রহমান বলেন, আমরা ছোট বেলায় দেখেছি যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এর আশেপাশে অনেক বাংকার খনন করেছিল। তবে ইট এবং তার গাঁথুনী দেখে মনে হচ্ছে এই স্থাপনা অনেক পুরনো।

অপর স্থানীয় বৃদ্ধা মমতাজ (৭৫) হোসেন বলেন, এক সময় এখানে ঝোড়-জঙ্গল ছিল। ছোট বেলায় শোনা কথা এখানে কোন এক সময় নবাবের ছাউনি ছিল। আমার বাড়ির পাশে একটি জল কুয়াসহ ছোট ছোট ভাঙ্গা (মাটির) হাঁড়িপাতিলের অংশবিশেষ দেখেছি।

সম্প্রতি ধামইরহাটের পুরাতত্ব ও নদীর ইতিবৃত্ত নিয়ে কাজ করছেন পাগল দেওয়ান ফাজিল মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আ.ন.ম. আফজাল হোসেন তনি বলেন, ‘পাগল দেওয়ান মাদ্রাসায় প্রায় কুড়ি বছর চাকুরীর সুবাদে এই পথ দিয়ে আমি প্রতিদিন যাতায়াত করি। এখানে এমন একটি স্থাপনার অবস্থান কখনই অনুমান করা যায়নি। তবে ইটের গঠন প্রকৃতি নির্ণয়ে স্থাপনাটি মধ্যযুগের বলেই মনে হয়।

তিনি বলেন, ১৭৭৭ মেজর রেনেল তার ম্যাপে এখানে যবুনা নামে একটি নদী চিহ্নিত করেছেন। নদীটি বাংলা ১১৯৪ সালে অর্থাৎ ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিস্তার মহাপ্লাবনে এর উৎসমুখে (সে সময়ের তিস্তা নদীর সোনাহার নামক স্থান) পলি জমা হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রতি আবিস্কৃত এই স্থাপনা যবুনা নদীর পূর্ব শাখার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। ঠিক উত্তরদিকে ১ কিলোমিটার উজানে যবুনা দুটি শাখায় বিভক্ত হওয়ার কারনে নদীর এই ত্রি-মোহনায় টোল আদায় বা অন্য কোন কারনে এমন স্থাপনা থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, আমাদের ধামইরহাট উপজেলা ইতিহাস সমৃদ্ধ। পলি মাটি খননে যে তিনটি স্থাপনা বেরিয়ে এসেছে সে বিষয়ে আমার জানানেই। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এটি সংরক্ষণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনপতি রায় ও ৬ নম্বর জাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করাহলেও মোবাইল রিসিভ না হওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অনাবিষ্কৃত স্থাপনাটি সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের নজরে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণে কামনা করছেন এলাকাবাসি ও অভিজ্ঞ মহল।#

আপলোডকারীর তথ্য

ইতিহাস কথা কয় : ধামইরহাটে বালু খননে বেরিয়ে আসছে মধ্যযুগের স্থাপনা

প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

মহাদেবপুর দর্পণ, এম, এ, মালেক, স্টাফ রিপোর্টার, ধামইরহাট (নওগাঁ), ৬ অক্টোবর ২০২০ :

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা ৬ নং জাহানপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর জাহানপুর গ্রামে হেলাল মেম্বারের বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার পূর্বদিকে আবাদি জমিতে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে পলিমাটির নীচে অন্তত তিনটি ইটের কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পাগল দেওয়ান বিজিবি মোড় ও পাগল দেওয়ান পীরের মাজার থেকে শুরু করে উত্তর দিকে ধামইরহাট-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের নানাইচ বাজার হয়ে দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ এলাকার ভিটে-মাটি খুঁড়ে উৎকৃষ্ট মানের বালির সন্ধান পাওয়া যায়।

জমির মালিকরা এইসব বালি প্রায় তিন দশক ধরে বিক্রিয় করে আসছেন। বালি উত্তোলনের জন্য খনন করতে গিয়ে পলিমাটির নীচে তিনটি ইটের কক্ষ বেরিয়ে আসলে সেখানে মাটির তৈরি জিনিস পত্রের অনেক নিদর্শন পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সব নিদর্শন দেখে অনুমান করা যায় এটি অনেক মধ্যযুগের পুরনো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খননকরা ৭২ শতক সরকারের এই জমিটি নানাইচ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হলে তার চার মেয়ে ও স্ত্রী পলিমাটি খুঁড়ে চাষাবাদের জন্য জমিটি তৈরি করছিলেন ।

২ নম্বর জাহানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক ও লুৎফর রহমান বলেন, আমরা ছোট বেলায় দেখেছি যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এর আশেপাশে অনেক বাংকার খনন করেছিল। তবে ইট এবং তার গাঁথুনী দেখে মনে হচ্ছে এই স্থাপনা অনেক পুরনো।

অপর স্থানীয় বৃদ্ধা মমতাজ (৭৫) হোসেন বলেন, এক সময় এখানে ঝোড়-জঙ্গল ছিল। ছোট বেলায় শোনা কথা এখানে কোন এক সময় নবাবের ছাউনি ছিল। আমার বাড়ির পাশে একটি জল কুয়াসহ ছোট ছোট ভাঙ্গা (মাটির) হাঁড়িপাতিলের অংশবিশেষ দেখেছি।

সম্প্রতি ধামইরহাটের পুরাতত্ব ও নদীর ইতিবৃত্ত নিয়ে কাজ করছেন পাগল দেওয়ান ফাজিল মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আ.ন.ম. আফজাল হোসেন তনি বলেন, ‘পাগল দেওয়ান মাদ্রাসায় প্রায় কুড়ি বছর চাকুরীর সুবাদে এই পথ দিয়ে আমি প্রতিদিন যাতায়াত করি। এখানে এমন একটি স্থাপনার অবস্থান কখনই অনুমান করা যায়নি। তবে ইটের গঠন প্রকৃতি নির্ণয়ে স্থাপনাটি মধ্যযুগের বলেই মনে হয়।

তিনি বলেন, ১৭৭৭ মেজর রেনেল তার ম্যাপে এখানে যবুনা নামে একটি নদী চিহ্নিত করেছেন। নদীটি বাংলা ১১৯৪ সালে অর্থাৎ ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিস্তার মহাপ্লাবনে এর উৎসমুখে (সে সময়ের তিস্তা নদীর সোনাহার নামক স্থান) পলি জমা হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রতি আবিস্কৃত এই স্থাপনা যবুনা নদীর পূর্ব শাখার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। ঠিক উত্তরদিকে ১ কিলোমিটার উজানে যবুনা দুটি শাখায় বিভক্ত হওয়ার কারনে নদীর এই ত্রি-মোহনায় টোল আদায় বা অন্য কোন কারনে এমন স্থাপনা থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, আমাদের ধামইরহাট উপজেলা ইতিহাস সমৃদ্ধ। পলি মাটি খননে যে তিনটি স্থাপনা বেরিয়ে এসেছে সে বিষয়ে আমার জানানেই। তবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এটি সংরক্ষণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গনপতি রায় ও ৬ নম্বর জাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করাহলেও মোবাইল রিসিভ না হওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অনাবিষ্কৃত স্থাপনাটি সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের নজরে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণে কামনা করছেন এলাকাবাসি ও অভিজ্ঞ মহল।#