নওগাঁ ১১:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

দাদন : নওগাঁর নারীদের নি:স্ব করেছে

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ :

গৃহবধূ রহিমা বিবি। গত ২০১৬ সালে সংসারের কাজের প্রয়োজনে একটি ফাঁকা চেক জমা দিয়ে দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা সুদ হিসেবে এক বছরে ৩৬ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেন। এছাড়া মূল (আসল) টাকার মধ্যে ১৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন। এরপর তিনি সুদ বা আসল কোনো টাকা দিতে পারেননি। ফলে দাদন ব্যবসায়ী আদালতে রহিমা বিবির নামে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। প্রায় দুই বছর মামলা চলার পর রহিমার বিপক্ষে রায় হয়। তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০১৯ সালের ২০ মে তিনি ছয় মাস কারাভোগ শেষে বেরিয়ে আসেন। টাকা পরিশোধের দুশ্চিন্তায় স্বামী বাবু (২৫) স্ট্রোক করে মারা যান। কয়েকদিন আগে আবারও ১৫ দিনের মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য রহিমাকে নোটিশ দেয়া হয়।

এমন ঘটনা শুধু রহিমা বিবির নয়, তার মতো নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের প্রায় ১৫ জন গৃহবধূ দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। কেউ কারাগারে রয়েছেন। আবার কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় চলে গেছেন। দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারা একই গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ রহিমা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে এখন আমি নি:স্ব। ছোট ছেলেকে মাদরাসায় পড়াচ্ছি। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন চাইলেও সুদের টাকা আর দিতে পারবো না। জেল খেটেছি, স্বামী মারা গেছে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন পার করছি। প্রশাসনের কাছে ওই সুদ ব্যবসায়ীর বিচার দাবি করছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে নাটোর জেলা থেকে এক ছেলে রানাকে নিয়ে পিরোজপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন মিলি দেলোয়ারা। এরপর বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি শুরু করেন। এর মাঝে নিজেও একটি এনজিও খুলে বসেন। আর ছেলে রানা নওগাঁ শাখা ‘আইএফআইসি ব্যাংক লি.’ এ চাকরি করছেন কয়েক বছর থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ মা ও ছেলে মিলে গ্রামের অসহায়দের কাছ থেকে ব্যাংকের ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে সুদের ওপর টাকা দেন। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে তারাই সহযোগিতা করেন।

ভুক্তভোগীরা সুদের টাকা দিলেও এক সময় ব্যর্থ হন। পরে তারা ফাঁকা চেকে নিজেদের ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার করে আদালতে মামলা ঠুকে দেন।

পিরোজপুর গ্রামের রবিউলের স্ত্রী ছেফাতুন, ইসলামের স্ত্রী রেশমা, শাহিন আলমের স্ত্রী বানু আক্তারসহ প্রায় ১৫ জন গৃহবধূ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন জেল খেটে বেরিয়ে এসেছেন। গৃহবধু ছেফাতুন জেলে আছেন। দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারা শুধু নারীদের টাকা দিয়ে থাকেন। গরিব ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে উচ্চ সুদে টাকা দিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাড়ি বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করে ঢাকায় চলে গেছেন। ওই দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী ছেফাতুনের শাশুড়ি খাইরুন বিবি বলেন, ছেলে বিদেশে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এদিকে সংসারে টানাপোড়ন। ছেলের বউ দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারার কাছ থেকে দুই দফায় ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ৫ মাসের অগ্রিম ২৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ কেটে নিয়ে বউয়ের হাতে ৫০ হাজার টাকা দেয়। এরপর বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা তুলে ৩ লাখ টাকা সুদ দেয়া হয়। তারপরও সুদ ও আসল টাকা শেষ হয় না। পরে ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে তারা ১০ লাখ টাকার চেকের মামলা দিলে গত ৫ মাস থেকে জেলে আছে। আপসে তারা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার দাবি করেছে। তারপরও আমরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি।

ভুক্তভোগী রেশমা বেগম বলেন, দুটি ফাঁকা চেক দিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। লাভের টাকা দিয়েছি। তারপরও ৮ লাখ টাকার মামলা দেয়। মামলায় তিনদিন জেল খেটে জামিনে আছি।

স্থানীয় আমিনুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম ও আজাদ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, যারা সুদের ওপর টাকা নেয় তারা অত্যন্ত অসহায়। সুদ ব্যবসায়ীরা দরিদ্র পরিবারের নারীদের প্রলোভন দিয়ে সুদের ওপর টাকা দেয়। সুদের টাকা দিতে পারলেও আসল টাকা যেন আর শেষ হয় না। এভাবে চলতেই থাকে। তারা ফাঁকা চেকে ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এটার একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার।

অভিযুক্ত মিলি দেলোয়ারার ছেলে রানা বলেন, আমাদের দক্ষিণ পার-নওগাঁ নামে একটি এনজিও ছিল। সে এনজিও থেকে তারা টাকা নিয়েছে ফাঁকা চেক দিয়ে। তারা টাকা নিলেও দীর্ঘদিনে তা পরিশোধ করেনি। বার বার তাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে। তাদের বলেছি সুদ দেয়ার দরকার নেই। আমাদের আসল টাকাটা ফেরত দেন। কিন্তু কোন ভ্রুপেক্ষ করেনি। পরে নিরুপায় হয়ে আমরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। মূল কথা হচ্ছে টাকা যেন না দিতে হয়, সেই পাঁয়তারা তারা করছেন। #

আপলোডকারীর তথ্য

দাদন : নওগাঁর নারীদের নি:স্ব করেছে

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২০ :

গৃহবধূ রহিমা বিবি। গত ২০১৬ সালে সংসারের কাজের প্রয়োজনে একটি ফাঁকা চেক জমা দিয়ে দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা সুদ হিসেবে এক বছরে ৩৬ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেন। এছাড়া মূল (আসল) টাকার মধ্যে ১৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করেন। এরপর তিনি সুদ বা আসল কোনো টাকা দিতে পারেননি। ফলে দাদন ব্যবসায়ী আদালতে রহিমা বিবির নামে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। প্রায় দুই বছর মামলা চলার পর রহিমার বিপক্ষে রায় হয়। তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

২০১৯ সালের ২০ মে তিনি ছয় মাস কারাভোগ শেষে বেরিয়ে আসেন। টাকা পরিশোধের দুশ্চিন্তায় স্বামী বাবু (২৫) স্ট্রোক করে মারা যান। কয়েকদিন আগে আবারও ১৫ দিনের মধ্যে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার জন্য রহিমাকে নোটিশ দেয়া হয়।

এমন ঘটনা শুধু রহিমা বিবির নয়, তার মতো নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের প্রায় ১৫ জন গৃহবধূ দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। কেউ কারাগারে রয়েছেন। আবার কেউ বাড়িঘর বিক্রি করে ঢাকায় চলে গেছেন। দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারা একই গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ রহিমা বিবি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামীকে হারিয়ে এখন আমি নি:স্ব। ছোট ছেলেকে মাদরাসায় পড়াচ্ছি। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন চাইলেও সুদের টাকা আর দিতে পারবো না। জেল খেটেছি, স্বামী মারা গেছে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন পার করছি। প্রশাসনের কাছে ওই সুদ ব্যবসায়ীর বিচার দাবি করছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে নাটোর জেলা থেকে এক ছেলে রানাকে নিয়ে পিরোজপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন মিলি দেলোয়ারা। এরপর বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি শুরু করেন। এর মাঝে নিজেও একটি এনজিও খুলে বসেন। আর ছেলে রানা নওগাঁ শাখা ‘আইএফআইসি ব্যাংক লি.’ এ চাকরি করছেন কয়েক বছর থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ মা ও ছেলে মিলে গ্রামের অসহায়দের কাছ থেকে ব্যাংকের ফাঁকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে সুদের ওপর টাকা দেন। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে তারাই সহযোগিতা করেন।

ভুক্তভোগীরা সুদের টাকা দিলেও এক সময় ব্যর্থ হন। পরে তারা ফাঁকা চেকে নিজেদের ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে ব্যাংক থেকে চেক ডিজঅনার করে আদালতে মামলা ঠুকে দেন।

পিরোজপুর গ্রামের রবিউলের স্ত্রী ছেফাতুন, ইসলামের স্ত্রী রেশমা, শাহিন আলমের স্ত্রী বানু আক্তারসহ প্রায় ১৫ জন গৃহবধূ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন জেল খেটে বেরিয়ে এসেছেন। গৃহবধু ছেফাতুন জেলে আছেন। দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারা শুধু নারীদের টাকা দিয়ে থাকেন। গরিব ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে উচ্চ সুদে টাকা দিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাড়ি বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করে ঢাকায় চলে গেছেন। ওই দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পর থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী ছেফাতুনের শাশুড়ি খাইরুন বিবি বলেন, ছেলে বিদেশে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এদিকে সংসারে টানাপোড়ন। ছেলের বউ দাদন ব্যবসায়ী মিলি দেলোয়ারার কাছ থেকে দুই দফায় ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে ৫ মাসের অগ্রিম ২৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ কেটে নিয়ে বউয়ের হাতে ৫০ হাজার টাকা দেয়। এরপর বিভিন্ন এনজিও থেকে টাকা তুলে ৩ লাখ টাকা সুদ দেয়া হয়। তারপরও সুদ ও আসল টাকা শেষ হয় না। পরে ছেলের বউয়ের বিরুদ্ধে তারা ১০ লাখ টাকার চেকের মামলা দিলে গত ৫ মাস থেকে জেলে আছে। আপসে তারা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার দাবি করেছে। তারপরও আমরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি।

ভুক্তভোগী রেশমা বেগম বলেন, দুটি ফাঁকা চেক দিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। লাভের টাকা দিয়েছি। তারপরও ৮ লাখ টাকার মামলা দেয়। মামলায় তিনদিন জেল খেটে জামিনে আছি।

স্থানীয় আমিনুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম ও আজাদ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, যারা সুদের ওপর টাকা নেয় তারা অত্যন্ত অসহায়। সুদ ব্যবসায়ীরা দরিদ্র পরিবারের নারীদের প্রলোভন দিয়ে সুদের ওপর টাকা দেয়। সুদের টাকা দিতে পারলেও আসল টাকা যেন আর শেষ হয় না। এভাবে চলতেই থাকে। তারা ফাঁকা চেকে ইচ্ছেমত টাকার অঙ্ক বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এটার একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার।

অভিযুক্ত মিলি দেলোয়ারার ছেলে রানা বলেন, আমাদের দক্ষিণ পার-নওগাঁ নামে একটি এনজিও ছিল। সে এনজিও থেকে তারা টাকা নিয়েছে ফাঁকা চেক দিয়ে। তারা টাকা নিলেও দীর্ঘদিনে তা পরিশোধ করেনি। বার বার তাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে। তাদের বলেছি সুদ দেয়ার দরকার নেই। আমাদের আসল টাকাটা ফেরত দেন। কিন্তু কোন ভ্রুপেক্ষ করেনি। পরে নিরুপায় হয়ে আমরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। মূল কথা হচ্ছে টাকা যেন না দিতে হয়, সেই পাঁয়তারা তারা করছেন। #