মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২০ জানুয়ারী ২০২০ :
উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধান রোপনের জন্য কৃষকের জমি প্রস্তুতির কাজ। উত্তরের হিমেল হাওয়া, হাড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই বোরো ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার চাষীরা।
উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, রাইপুর, কালিকাপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর মাঠসহ বিভিন্ন মাঠে চলছে বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ। ধান রোপনে বিলম্ব হওয়ায় ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
প্রচন্ড শীত আর কুয়াশায় বোরো বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে চারা রোপন করা পর্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটছে চাষীদের। নানা সমস্যার মধ্যেও বোরো চারা রোপনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন তারা।
এখন গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ধানের চারা রোপনের কাজ চলছে। কোন জমিতে চলছে চাষ, বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে বীজ, চলছে রোপন। সব মিলিয়ে মাঠে মাঠে জোরেশোরে চলছে বোরো ধান রোপনের কাজ।
চাষীরা বলছেন, এক ফসল বিক্রি করে অন্য ফসল আবাদ করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তবে ধান চাষে বারবার লোকশান হওয়ায় চাষীরা ধান চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
লোকশানের কারণে উপজেলার কৃষকরা পাইকারী হারে কৃষিজমিগুলো লিজ দিয়ে তৈরি করছেন মাছ চাষের পুকুর। এতে করে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলী কৃষি জমি।
বাজারে এখন ধানের দাম কম। অন্যদিকে আবাদের উপকরণের দাম বাড়তি। ফলে চাষীরা নিজেরাও আবাদের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। ধানের দাম না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে আছেন বর্গাচাষীরা।
সাহাগোলা গ্রামের চাষী আবুল কালাম আজাদ সরদার বলেন, গত বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবার করছেন ৫ বিঘা জমিতে। প্রচন্ড শীত আর কুয়াশাকে উপেক্ষা করে প্রায় জমি তৈরির কাজ শেষের দিকে। আর ক’দিনের মধ্যে চারাগাছ রোপন করা শুরু করবো।
তিনি বলেন, লাগাতার ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আবার যতদিন যাচ্ছে আবাদ খরচও বেড়ে যাচ্ছে। গত বছর বিঘা প্রতি আবাদে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এবার বিঘা প্রতি খরচ ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রমিকের মজুরি ৩৫০ টাকার উপরে দিতে হচ্ছে। ড্যাপ সার প্রতি বস্তা ৭৮০ থেকে ৭৯০ টাকা। আমদানী কম হলে দাম বেড়ে যাবে। ইউরিয়া সার বস্তা প্রতি ৮০০ টাকা, এমওপি ৭৫০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য খরচ। এবছর শুধুমাত্র ডিএপি সারের দাম কমেছে। বাকী সারগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এই সারগুলোর দাম কমলে উৎপাদন খরচ কমতো। কীটনাশকের দাম কখন বাড়ে আর কখন কমে তা বলা অসম্ভব।
ভবানীপুর গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী বলেন, পৌষ মাসের শুরুতেই বোরো ধান রোপন করা শেষ হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু প্রচন্ড শীত আর কুয়াশার কারণে কৃষকরা মাঠে নামতে পারেননি। তাই চলতি মৌসুমে বোরো ধান রোপনে কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলো। এতে করে ফলনও একটু ব্যাহত হতে পারে।
এবছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করছেন। গত মৌসুমে তিনি ১৭ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন।
মূলত ধানের দাম না থাকার কারণে আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ধানের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণ বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের এমন দামে আবাদ করলে চাষাবাদের খরচও উঠবে না। বরং ঋণের বোঝা আরও বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন বলেন, ধানের দাম না থাকায় গত কয়েক বছর থেকে বোরো ধানের আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কম হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বোরো ধানে অধিক পরিমাণে সেচ দিতে হয়। আর সেচ দেয়ার জন্য গভীর নলকূপের উপর ভরসা করতে হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি অধিক পরিমাণে উত্তোলনের কারণে পানির স্তরও নীচে নেমে যাচ্ছে। বাড়াতে হবে আমন, আউশ, গম, আলুসহ বিভিন্ন লাভজনক রবি শস্যের আবাদ। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে।
তিনি জানান, উপজেলায় চলতি মওসুমে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮হাজার হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত শতকরা ৪৫ ভাগ জমিতে বোরো ধান রোপন করা সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত পুরো উপজেলার সকল মাঠের জমিতে বোরো ধান রোপন করা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদী। উপজেলার কৃষকদের বোরো বীজতলা তৈরি করা থেকে শুরু করে জমিতে চারা রোপন করা পর্যন্ত সকল পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। কৃষি অফিস যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। #