মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৫ জানুয়ারী ২০২০ :
নওগাঁয় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা জমজমাট। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতার কারণে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স নিতে আসা রোগীরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, ‘গ’ সিরিয়ালে প্রাইভেটকার এবং ‘ঠ’ সিরিয়ালে পিকআপের রেজিস্ট্রেশন হয়। এছাড়া ‘ছ’ সিরিয়ালে হয় অ্যাম্বুলেন্স রেজিস্ট্রেশন। আর ‘ছ’ সিরিয়ালে ‘৭১ ও ৭৪’ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর হবে। এ সিরিয়ালে যেসব অ্যাম্বুলেন্স থাকবে না সেগুলো মাইক্রোবাস বা অন্যকোনো যানবহন কেটে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যা বেআইনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ সদরে ২৬টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর শয্যা, চিকিৎসক বসার ব্যবস্থা, অক্সিজেন সিলিন্ডার-মাস্ক, স্ট্রেচার ও সাইরেন থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ অ্যাম্বুলেন্সে এসব নেই। ফিটনেসবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়েছে। মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে রোগী পরিবহণের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দুই হাজার ৯০০ টাকা এবং সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া প্রায় দুই হাজার টাকা। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো না পাওয়ায় রোগীদের কাছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সই ভরসা। তবে এসব অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের শোবার সিটও নেই। এমনকি রোগীর স্বজনদের কষ্ট করে বসতে হয়। এসব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
রোগীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, নওগাঁ সদর হাসপাতালে একটি মাত্র সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। প্রায় সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে এটি। এ সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে। যারা সেবার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এসব অনিয়মের কোন প্রতিকার নেই।
সদর উপজেলার নিন্দইন গ্রামের আশরাফুল ইসলাম রতন বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ১৫ ডিসেম্বর আমার সাতদিনের মেয়ে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসক। তখন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নিয়ে ঘণ্টাখানেক দর-কষাকষি হয়। অবশেষে সরকারি একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার কথাবার্তা চলতেই আমার শিশুটি মারা যায়।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক বিপ্লব বলেন, আমি নওগাঁর ল্যাবএইড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স চালক। আমার অ্যাম্বুলেন্সটি আগে মাইক্রোবাস ছিল। মাইক্রোবাস পুরাতন হয়ে যাওয়ায় সেটিকে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়। তবে লাইসেন্স রয়েছে মাইক্রোবাসের নামে। আমাদের যে সমিতি আছে আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালকরাই সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করি। নওগাঁ থেকে রাজশাহীতে ভাড়া দুই হাজার ৯০০ টাকা। অক্সিজেন লাগলে বা না লাগলেও একই ভাড়া। যা ভাড়া সেটাই আমরা নেই। কোন ধরনের সিন্ডিকেট আমরা করি না বা রোগীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলি না।
নওগাঁর ল্যাবএইড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জমিস উদ্দিন বলেন, আগে মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ -১৩-৬৪৮১) ছিল। পরে সেটিকে মেরামত করে অ্যাম্বুলেন্স করা হয়। চার মাস আগে অ্যাম্বুলেন্সটি বানানো হয়েছে। তবে লাইসেন্স রয়েছে মাইক্রোবাসের নামে। রোগী আনা-নেয়ার সুবিধার্থে এমনটি করা হয়েছে। যা ভাড়া সেটাই নেয়া হয়।
নওগাঁ শহরের অ্যাম্বুলেন্স মালিক মিলন হোসেন বলেন, এক বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি কিনেছি। যা প্রকৃতপক্ষে অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা-মেট্রো-ছ-৭৪-০০৪০)। জেলায় প্রায় ২৬টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। যার মধ্যে বৈধ অ্যাম্বুলেন্স আছে ১৩টি। যারা মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স করেছেন তারা অবৈধভাবে করেছেন।
নওগাঁর কার-মাইক্রোবাস চালক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন রহমান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করেন। কিছু অ্যাম্বুলেন্স আছে যেগুলোতে রোগী যেতে ইচ্ছুক না। কিন্তু সিরিয়ালের কারণে ওই অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যেতে বাধ্য হন। এটা একটা সিন্ডিকেট, যা অমানবিক। পুরাতন মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো অবৈধ।
বিআরটিএ নওগাঁর সহকারী মোটরযান পরিদর্শক মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, যে মাইক্রোবাসটি ইমপোর্ট হয়ে আসে সেটাকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করা যায় না। কারণ রেজিস্ট্রেশন একবারই হয়। মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি অবৈধ। অবৈধভাবে অ্যাম্বুলেন্স তৈরির বিষয়টি আমরা অবগত নই। অসাধু চক্র এটি করতে পারে। মাইক্রোবাস কেটে যদি অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করা হয় তাহলে ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন না থাকা অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। #