প্রকাশের সময় :
০১:০১:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩
৮৭৬
Spread the love
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১৮ মার্চ ২০২৩ :
উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার নামে খ্যাত নওগাঁর ১১ উপজেলায় এবার বোরো ধান উৎপাদনের খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদিত ধানের দাম বাড়েনি। চাষিরা বলছেন, ডিজেল, সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরিসহ বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে এবার। ফলে ধানের দাম মণপ্রতি দেড় হাজার থেকে এক হাজার ছয়শ’ টাকা না হলে চরম বেকায়দায় পড়বেন তারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বর্গাচাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে জেলার সদর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দা, বদলগাছী, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় এবার মোট এক লাখ ৮৯ হাজার একশ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব উপজেলায় এবার চিকন ধান জিরাশাইল, কাটারিভোগ, সম্পা কাটারি, ব্রি-২৮, ২৯, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীর মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। বোরো ক্ষেতে সবুজের সমারোহ নজর কাড়ব সবার। বোরো ক্ষেত পরিচর্যায় তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আত্রাই উপজেলার দমদমা গ্রামের পোস্ট মাস্টার আব্দুল লতিফ চাকরির পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। এবার তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। বেড়েছে কীটনাশকের দাম। জমি চাষ, লাগানো, নিড়ানিসহ বিভিন্ন খরচ গত বছরের চেয়ে এবার বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। প্রতি মণ ধান ১৫০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকায় বিক্রি না হলে লোকসান গুণতে হবে।’
বদলগাছী উপজেলার চাংলা গ্রামের চাষি ওয়াহেদ আলী এবার সাড়ে ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতবছর ৭০০-৮০০ টাকা বিঘা হিসেবে শ্রমিকের মজুরি ছিল। এবার তা বেড়ে ১৫০০ টাকা হয়েছে। গতবছর সেচ খরচ ছিল বিঘাপ্রতি ১৫০০ টাকা। এবার নিচ্ছে ১৮০০ টাকা। এখন একজন শ্রমিক এক বেলা খাওয়া দিয়ে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান পাবো ২০ মণ। এর মধ্যে জমির মালিককে বিঘাতে ৭ মণ করে ধান দিতে হবে। তাহলে ধান চাষ করে কী লাভ হবে। এবার ধানের মণ ৩০০-৪০০ টাকা বেশি না হলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়বো।’
রানীনগর উপজেলার মিরাট গ্রামের চাষি শুকবর আলী বলেন, ‘এবছর ধার-দেনা করে ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘা বোরো আবাদের শুরুতেই খরচ বেড়েছে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি গতবছর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকায়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সেচ ও জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করায় খরচ বেড়েছে। এই ধার-দেনার টাকায় ধান কাটার পরেই তা বিক্রি করতে হয়। তখন আবার ধানের দামও পাওয়া যায় না। ধান ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিকদেরকে বেশি টাকা দিয়ে ধান কাটাতে হয়। তাই এবার ধানের দাম না বাড়লে চাষিরা মাঠে মারা যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মঞ্জুরে মাওলা জানান, ইতিমধ্যেই জেলায় ৯৯ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। যেসব জমিতে সরিষা ও আলু রয়েছে সেগুলো তোলার পরই ধান রোপণ করা হবে। আশা করা হচ্ছে এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, ‘এবছর বিদ্যুৎ খরচ ও সেচ খরচ বেড়েছে। যেকোনো বিষয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লে সেটি শেষ পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে বেড়ে যায়। সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করার সময় বর্তমান বাজার দরের সমন্বয় করবেন। তবে বাজারে ধানের দামও ভালো আছে। কৃষক ধান বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা এই কৃষি কর্মকর্তার।#