মহাদেবপুর দর্পণ, জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ), ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ :
নওগাঁর মান্দায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি পাকা রাস্তা বর্ধিতকরণ ও নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে।
বালির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো রঙের মাটিযুক্ত নিম্নমানের ভরাট বালু ও নিম্নমানের ইট। মানা হচ্ছে না খোয়া ও বালুর অনুপাত। রাস্তার কার্পেটিং তুলে সেখানেই রোলার করে দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার কাজ তদারকির দায়িত্বে সড়ক ও জনপদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও দেখা মিলছে না। রাস্তার অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত টাঙানো হয়নি সাইনবোর্ড। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজটি সম্পাদনের পাঁয়তারা করছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট থেকে ফতেপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তার দুইধার বর্ধিতকরণ ও কার্পেটিং কাজের জন্য দরপত্র আহবান করে নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগ। নওগাঁর আমিনুল ইসলাম প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির ওয়ার্কঅর্ডার পায়। চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি রাস্তা বর্ধিতকরণ ও কার্পেটিং এর কাজ শুরু করে।
আত্রাই নদীর ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ এ বাঁধটি আশির দশকে নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর রাস্তাটি আর সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে রাস্তাটিতে অনেক খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক স্থানে দুইধার ভেঙে সংকচিত হয়েছে রাস্তাটি। পুরাতন এ রাস্তায় ইঁদুরের আবাসস্থল গড়ে উঠায় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বাঁধটি। তখন রাত জেগে পাহারা বসিয়ে বাঁধটি টিকিয়ে রাখে স্থানীয় জনগণ। এ অবস্থায় এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে রাস্তাটি বর্ধিতকরণসহ নতুন করে কার্পেটিং কাজ শুরু করে সওজ।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কালো রঙের মাটিযুক্ত ভরাট বালু। এ ভরাট বালুর সঙ্গে নিম্নমানের ইটের খোয়া মিশিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একটি ইট ৩ থেকে ৪ টুকরো করে বড়বড় সেইসব খোয়া নিম্নমানের বালুর সঙ্গে মিশিয়ে রাস্তায় বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।
দরপত্রে ৬০ ভাগ খোয়া ও ৪০ ভাগ বালুর মিশ্রণ অনুপাত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এছাড়া ভেকু মেশিনের সাহায্যে রাস্তার আগের কার্পেটিং তুলে সেখানেই মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে ঠিকাদারের লোকজনকে জানিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, রাস্তার দুধারে বন বিভাগের লাগানো গাছ কেটে নেওয়া হলেও মোথা (শিকড় ও মুল) তুলে নেয়া হয়নি। এসব মোথা পচে গেলে সেসব স্থানে আবারও গর্তের সৃষ্টি হবে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে বাঁধটি।
জানতে চাইলে ঠিকাদার মনির হোসেন জানান, ‘আমি অনেক ঝামেলায় আছি। এ কারণে সময়মত সাইনবোর্ড লাগানো হয়নি। খুব শিঘ্রই নির্মাণ কাজের এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙানো হবে।’
রাস্তাটির নির্মাণ কাজ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয় নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হকের সঙ্গে। এসময় ভিডিও’র সাহায্যে ইট ও নিম্নমানের বালুর চিত্র তুলে ধরা হয়। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, লোকবল সংকটের কারণে সবসময় ওই রাস্তাটি দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কাজটি সঠিকভাবে করিয়ে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। #