মহাদেবপুর দর্পণ, মাহমুদুন নবী বেলাল, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ, ১২ মার্চ ২০২২ :

নওগাঁ শহর যানজটমুক্ত ও মাদকমুক্ত করতে পার-নওগাঁ মহল্লার টিএনটি পাড়ার আবাসিক এলাকায় ট্রাক-সিএনজি টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সেখানে শেখ রাশেল মিনি স্টেডিয়াম বা শিশুদের বিনোদনের জন্য জননেতা আব্দুল জলিল শিশুপার্ক নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের পার-নওগাঁ টিএনটি পাড়া সিএমবি ইটভাটা এলাকায় পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনসাধারণ এর আয়োজন করেন। ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, নওগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সারোয়ার তানজীদ সম্রাট, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিউল ইসলাম রুবেল, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর, উত্তরাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান, স্থানীয় বাসিন্দা মিতা খাতুন, জাভেদ হোসেন প্রমুখ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

প্যানেল মেয়র সারোয়ার তানভীর সম্রাট বলেন, ‘এটি একটি আবাসিক এলাকা। এখানে ট্রাক ও সিএনজি টার্মিনাল গড়ে তোলা হলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। কারণ যারা ড্রাইভার বা হেলপার তারা অনেকেই মাদক গ্রহণ করে থাকে। এখানে অনেক মানুষের সমাগম হবে। যা আবাসিক এলাকার সার্বিক পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ।’

তিনি বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি ১৪ বিঘা সরকারি জমিতে ট্রাক ও সিএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। এলাকার মানুষ এটার বিরোধিতা করে আসছেন। তবুও এটি নির্মানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে টার্নিমাল নির্মাণ বন্ধ করা হোক। প্রয়োজনে এখানে পার্ক বা কবরস্থান নির্মাণ করা হোক।’

রবিউল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘এখানে ট্রাক ও সিএনজি টার্মিনাল নির্মাণ অযৌক্তিক। কিভাবে জেলা প্রশাসন সরকারি জমিতে অনুমতি দিলো বুঝলাম না। যদি এটি বন্ধ না করা হয়, তবে আগামীতে এলাকাবাসী তীব্র আন্দোলনে নামবে।’

জানতে চাইলে জেলা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসিকুজ্জামান আশিক বলেন, ‘এখানে ১৪ বিঘা জমি জেলা ট্রাক পরিবহণ মালিক গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন সাবেক জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ। বর্তমানে মাটি ভরাট করে ট্রাক ও সিএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ চলছে। শহরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন যারা বাঁধা দিচ্ছেন বা আপত্তি জানাচ্ছেন তাদের হয়তো কোন অসৎ উদ্দেশ্যে আছে।’

জেলা ট্রাক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘শহরের ভিতর দিয়ে যে প্রধান রাস্তা তা অনেক ছোট। এজন্য শহরে যানজট দেখা যায়। শহরের মধ্যে কোন টার্মিনাল না থাকায় রাস্তার ধারে ট্রাক ও সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন রাখার জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়। এ টার্মিনালটি চালু হলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে যাবে। গুটিকয়েক মানুষ কেন আপত্তি জানাচ্ছেন তা বুঝলাম না। শুধু আমাদের সুবিধার জন্য নয়, শহরবাসী যাতে যানজট থেকে মুক্তি পায় তার জন্য টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।’

নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসের শুরুতে পার-নওগাঁ টিএ্যান্ডটি অফিসের পাশে সরকারি ১৪ বিঘা জমি জেলা ট্রাক পরিবহণ মালিক গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শহরের যানজট নিরসনে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়েই জায়গাটি হস্তান্তর করা হয়। সে সময় তো এলাকাবাসীর কোন বাঁধা বা আপত্তি ছিলনা। এখন যদি এলাকাবাসীর আপত্তি থাকে তাহলে আমাদের লিখিতভাবে জানালে পরবর্তী কি প্রদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’#