নওগাঁ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

আজকের সম্পাদকীয় : হাটে হাড়ি ভেঙ্গেছেন ইমাম সাহেব<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৭ জুলাই ২০২১ :

একদম হাটে হাড়ি ভেঙ্গেছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাজার জামেহ মসজিদের পেশ ইমাম, উপজেলা ইমাম ওলামা কমিটির সভাপতি ও জোয়ানপুর ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো: জিল্লুর রহমান।

এমন অবস্থা অবশ্য দুসপ্তাহ আগেও ছিলনা। এর শানে নজুল হলো : গত ৯ জুন করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে জারি করা নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তির ১৩নং ধারায় বলা হয়েছে,‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমসংখ্যক ব্যক্তি প্রার্থনা/উপাসনা করতে পারবেন।’

এটি একটি সরকারি আদেশ। কিন্তু এই আদেশ মানছিলেননা কেউ। দুসপ্তাহ আগেও এই মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম, খাদেম কেউই মাস্ক ব্যবহার করতেন না। ইমাম সাহেব প্রতি নামাজের আগে সরকারি ঘোষণা ঠিকই পাঠ করে শুনাতেন। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। কিন্তু প্রতি ওয়াক্তেই ২০ জনের অনেক বেশি মুসল্লি অংশ নিতেন। বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিলনা। দূরত্বও মানা হতোনা। উপজেলার গ্রামের মসজিদগুলোরও একই অবস্থা।

দুসপ্তাহ আগের জুম্মাবারে দেখেছি শুধুমাত্র ইমাম সাহেবের মুখে মাস্ক আছে। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম,‘হুজুর, আপনার মোয়াজ্জেম আর খাদেমের মুখে মাস্ক নেই কেন?’

গত সপ্তাহে তাদের মুখে মাস্ক দেখেছি। এদিন (২ জুলাই) জুম্মার নামাজের আগে দেয়া বাংলা খুৎবায় ইমাম সাহেব বললেন,‘আল্লাহ আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, সরকারি নির্দেশ আমরা মানছিনা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ তো মানতে হবে।

তিনি বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের নাফরমানি বেড়ে গেলে তিনি এলাকাভিত্তিক গজব নাযেল করেন। অতীতে বহু জাতিকে তিনি ধংস করে দিয়েছেন। কিন্তু তার দেয়া গজব কখনোই প্রকৃত মোমিনদেরকে ধংস করার জন্য নয়। বরং আল্লাহ মোমিনদেরকে বালা মুসিবতে ফেলেন তাদের ইমানকে পরীক্ষা করার জন্য। ইমান মজবুত করার জন্য।

ইমাম সাহেব বলেন, বর্তমানের করোনাভাইরাস নি:সন্দেহে আল্লাহর একটি গজব নাফরমানদের জন্য। মোমিনদের জন্য এটা ইমানী পরীক্ষা। এ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে তার অর্থে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আল্লাহর হুকুম। এটা আমাদেরকে মানতে হবে। অনেকেই রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মানছেননা। তারা বলছেন, করোনা আল্লাহ দিয়েছেন, আল্লাহই হেফাজত করবেন। আল্লাহ করোনা দিতে চাইলে মাস্ক করোনা ঠেকাতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশতো মানতেই হবে।

তিনি বলেন, আমরা মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের আগে ঘোষণা দিচ্ছি মাস্ক ব্যবহার করি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। অনেকেই তা মানছেননা। কিন্তু আল্লাহ যে সতর্ক হতে বলেছেন তা অনেকেই জানিনা। তাই তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

নামাজ শেষে ইমাম সাহেবকে আবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম,‘হুজুর আল্লাহ আমাদেরকে কোন বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন?’ তিনি বললেন,‘আয়াতটি নাজিল হয়েছে যুদ্ধের সময়ে। কিন্তু আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রেই এই নির্দেশ প্রযোজ্য।’

আমরা সবাই মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ পাইনি। ইসলাম বিষয়ে যেকোন পরামর্শ দেয়ার হক হক্কানি আলেমদের। আমরা এবিষয়ে কোন সাজেশন দেয়ার এখতিয়ার রাখিনা। কিন্তু সাধারণভাবে আলোচনা তো করতে পারি।
তাবলিগ জামাতের এক মুরব্বি বলেছিলেন, একদিন রাসুল (সা:) মসজিদে নববিতে বসা ছিলেন। এক সাহাবি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সেখানে এসে ঘোড়াটি মসজিদের বাইরে রেখে রাসুল (সা:) এর নিকট তাশরিফ নিয়া জিজ্ঞাসা করলেন,‘হুজুর ঘোড়াটি কি গাছের সাথে বাঁধবো, নাকি আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দিয়ে রাখবো?’ রাসুল (সা:) জবাবে বলেছিলেন,‘আগে বাঁধো। তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।’

আর এক মুরব্বি বলেছিলেন, এক সাহাবি বাড়িতে একা ছিলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। বাড়ির দরজা খোলা ছিল তা তিনি জানতেন না। দরজা খোলা পেয়ে এক চোর বাড়িতে ঢুকে সাহাবিকে নামাজরত অবস্থায় দেখে নামাজের সামনে থেকে তৈজসপত্র চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। চোরের ধারনা ছিল নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সাহাবি কিছুতেই তাকে ধরার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু ওই সাহাবি নামাজ ছেড়ে দিয়ে ওই চোরকে পাকড়াও করলেন। বিষয়টি তিনি রাসুল (সা:) কে জানালে তিনি বলেছিলেন যে, সাহাবি ঠিক কাজই করেছেন। কেননা নামাজ ছেড়ে দিয়ে চোরকে ধরলে, পরে সে নামাজ আবার পড়া যাবে। এটাও সতর্কতা।

অন্য এক মুরব্বি বলেছিলেন, কোন ইবাদত করতে গিয়ে যদি কারো জীবননাশের সম্ভাবনা থাকে, অথবা রোগ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।

আমরা হযরত নূহ (আ:) এর কিস্সা শুনেছি। আল্লাহ মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর কিস্তিতে (নৌকায়) উঠতে। যারা উঠেছেন তারা বেঁচে গেছেন। এটাও সতর্কতা। আল্লাহ করোনা দিয়েছেন, আল্লাহই তা থেকে হেফাজত করবেন। ‘‘মাস্কের দরকার নেই, দূরত্ব বজায় রাখার দরকার নেই, দরকার নেই হাত ধোয়ারও’’। এধরনের ড্যাম কেয়ার ভাব, আর নির্দেশ অমান্য করে ওই নৌকায় না ওঠা একই কথা।

আমরা করোনবিধি মানতে নারাজ। কিন্তু অসুখ হলে ওষুধ খাওয়া তো সুন্নত। কেউ কিছু মানি আর না মানি, মূমুর্ষ অবস্থায় পতিত হলে আমরা কেউই শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে বাড়িতে বসে থাকিনা। বরং সাধ্যমত চিকিৎসকের কাছে যাই। আল্লাহর রহমতও কামনা করি। দোওয়া চাই আত্মীয় স্বজনের। তখন ওষুধ খাই, অপারেশন করি। উদ্দেশ্য, বেঁচে ওঠা। তখন ডাক্তার যে নির্দেশ দেন তা আমরা মেনে চলতে বাধ্য হই।

সুতরাং সরকারি যে নির্দেশ আল্লাহর নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তা আগে থেকেই মেনে চললে দোষ কোথায়?

আর এক মুরব্বি বলেছিলেন, মহান আল্লাহ রাব্বিল আ’লামিন সবকিছু করেন একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে। তিনি ইচ্ছা করলেই দিনকে রাত, রাতকে দিন, পাহাড়কে দরিয়া, দরিয়াকে পাহাড়, ফকিরকে বাদশাহ আর বাদশাহকে ফকির বানাতে পারেন। আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখি। এটা একটা সিস্টেম।

কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তা পশ্চিম দিক থেকে ওঠাতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে এক নিমিষেই পৃথিবীর সব মানুষকে হেদায়েত দিতে পারেন। কিন্তু তিনি হেদায়েতের জন্য সিস্টেম করেছেন দাওয়াত দেয়ার। দাওয়াত দিতে গিয়ে তার দোস্ত, যাকে সৃষ্টি না করলে তামাম জাহান কিছুই সৃষ্টি করতেননা, সেই দোস্তের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছেন।

আমরা প্রায়ই দেখি এক্সিডেন্টে মৃত্যু। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোন কারণ ছাড়াই যে কোন মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারেন। কিন্তু তিনি সিস্টেম করে কোন না কোন অছিলা দিয়ে মৃত্যু ঘটান।

আল্লাহ যাদেরকে করোনা থেকে বাঁচাবেন, তারা কোন প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা না নিলেও তাদেরকে বাঁচাবেন। মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এটা একটা সিস্টেম। এই কাজগুলো করা কি শেরেক? আমরা জ্বর হলে মাথায় পানি পট্টি দিই। পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে দিই। এসব করা কি ইসলামে নিষেধ? তবে মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখা আর হাত ধোয়াতে কেন এত বিতর্ক?

আমরা কঠিন অসুখে পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে অনেক হালাল খাবারও গ্রহণ করিনা। ডায়াবেটিস হলে চিনি, হাইপ্রেসার হলে কাঁচা লবন ইত্যাদি। এগুলো না খাওয়া কি শেরেক হবে? কক্খনোই না।

সো, প্লিজ বি পজিটিভ।—————-কিউ, এম, সাঈদ টিটো

আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সম্পাদকীয় : হাটে হাড়ি ভেঙ্গেছেন ইমাম সাহেব<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ১০:১৫:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৭ জুলাই ২০২১ :

একদম হাটে হাড়ি ভেঙ্গেছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাজার জামেহ মসজিদের পেশ ইমাম, উপজেলা ইমাম ওলামা কমিটির সভাপতি ও জোয়ানপুর ফাজিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো: জিল্লুর রহমান।

এমন অবস্থা অবশ্য দুসপ্তাহ আগেও ছিলনা। এর শানে নজুল হলো : গত ৯ জুন করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে জারি করা নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তির ১৩নং ধারায় বলা হয়েছে,‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমসংখ্যক ব্যক্তি প্রার্থনা/উপাসনা করতে পারবেন।’

এটি একটি সরকারি আদেশ। কিন্তু এই আদেশ মানছিলেননা কেউ। দুসপ্তাহ আগেও এই মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম, খাদেম কেউই মাস্ক ব্যবহার করতেন না। ইমাম সাহেব প্রতি নামাজের আগে সরকারি ঘোষণা ঠিকই পাঠ করে শুনাতেন। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। কিন্তু প্রতি ওয়াক্তেই ২০ জনের অনেক বেশি মুসল্লি অংশ নিতেন। বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিলনা। দূরত্বও মানা হতোনা। উপজেলার গ্রামের মসজিদগুলোরও একই অবস্থা।

দুসপ্তাহ আগের জুম্মাবারে দেখেছি শুধুমাত্র ইমাম সাহেবের মুখে মাস্ক আছে। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম,‘হুজুর, আপনার মোয়াজ্জেম আর খাদেমের মুখে মাস্ক নেই কেন?’

গত সপ্তাহে তাদের মুখে মাস্ক দেখেছি। এদিন (২ জুলাই) জুম্মার নামাজের আগে দেয়া বাংলা খুৎবায় ইমাম সাহেব বললেন,‘আল্লাহ আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, সরকারি নির্দেশ আমরা মানছিনা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ তো মানতে হবে।

তিনি বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের নাফরমানি বেড়ে গেলে তিনি এলাকাভিত্তিক গজব নাযেল করেন। অতীতে বহু জাতিকে তিনি ধংস করে দিয়েছেন। কিন্তু তার দেয়া গজব কখনোই প্রকৃত মোমিনদেরকে ধংস করার জন্য নয়। বরং আল্লাহ মোমিনদেরকে বালা মুসিবতে ফেলেন তাদের ইমানকে পরীক্ষা করার জন্য। ইমান মজবুত করার জন্য।

ইমাম সাহেব বলেন, বর্তমানের করোনাভাইরাস নি:সন্দেহে আল্লাহর একটি গজব নাফরমানদের জন্য। মোমিনদের জন্য এটা ইমানী পরীক্ষা। এ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে তার অর্থে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আল্লাহর হুকুম। এটা আমাদেরকে মানতে হবে। অনেকেই রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মানছেননা। তারা বলছেন, করোনা আল্লাহ দিয়েছেন, আল্লাহই হেফাজত করবেন। আল্লাহ করোনা দিতে চাইলে মাস্ক করোনা ঠেকাতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশতো মানতেই হবে।

তিনি বলেন, আমরা মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের আগে ঘোষণা দিচ্ছি মাস্ক ব্যবহার করি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। অনেকেই তা মানছেননা। কিন্তু আল্লাহ যে সতর্ক হতে বলেছেন তা অনেকেই জানিনা। তাই তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

নামাজ শেষে ইমাম সাহেবকে আবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম,‘হুজুর আল্লাহ আমাদেরকে কোন বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন?’ তিনি বললেন,‘আয়াতটি নাজিল হয়েছে যুদ্ধের সময়ে। কিন্তু আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রেই এই নির্দেশ প্রযোজ্য।’

আমরা সবাই মাদ্রাসায় পড়ার সুযোগ পাইনি। ইসলাম বিষয়ে যেকোন পরামর্শ দেয়ার হক হক্কানি আলেমদের। আমরা এবিষয়ে কোন সাজেশন দেয়ার এখতিয়ার রাখিনা। কিন্তু সাধারণভাবে আলোচনা তো করতে পারি।
তাবলিগ জামাতের এক মুরব্বি বলেছিলেন, একদিন রাসুল (সা:) মসজিদে নববিতে বসা ছিলেন। এক সাহাবি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সেখানে এসে ঘোড়াটি মসজিদের বাইরে রেখে রাসুল (সা:) এর নিকট তাশরিফ নিয়া জিজ্ঞাসা করলেন,‘হুজুর ঘোড়াটি কি গাছের সাথে বাঁধবো, নাকি আল্লাহর ওয়াস্তে ছেড়ে দিয়ে রাখবো?’ রাসুল (সা:) জবাবে বলেছিলেন,‘আগে বাঁধো। তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।’

আর এক মুরব্বি বলেছিলেন, এক সাহাবি বাড়িতে একা ছিলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। বাড়ির দরজা খোলা ছিল তা তিনি জানতেন না। দরজা খোলা পেয়ে এক চোর বাড়িতে ঢুকে সাহাবিকে নামাজরত অবস্থায় দেখে নামাজের সামনে থেকে তৈজসপত্র চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। চোরের ধারনা ছিল নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সাহাবি কিছুতেই তাকে ধরার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু ওই সাহাবি নামাজ ছেড়ে দিয়ে ওই চোরকে পাকড়াও করলেন। বিষয়টি তিনি রাসুল (সা:) কে জানালে তিনি বলেছিলেন যে, সাহাবি ঠিক কাজই করেছেন। কেননা নামাজ ছেড়ে দিয়ে চোরকে ধরলে, পরে সে নামাজ আবার পড়া যাবে। এটাও সতর্কতা।

অন্য এক মুরব্বি বলেছিলেন, কোন ইবাদত করতে গিয়ে যদি কারো জীবননাশের সম্ভাবনা থাকে, অথবা রোগ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।

আমরা হযরত নূহ (আ:) এর কিস্সা শুনেছি। আল্লাহ মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর কিস্তিতে (নৌকায়) উঠতে। যারা উঠেছেন তারা বেঁচে গেছেন। এটাও সতর্কতা। আল্লাহ করোনা দিয়েছেন, আল্লাহই তা থেকে হেফাজত করবেন। ‘‘মাস্কের দরকার নেই, দূরত্ব বজায় রাখার দরকার নেই, দরকার নেই হাত ধোয়ারও’’। এধরনের ড্যাম কেয়ার ভাব, আর নির্দেশ অমান্য করে ওই নৌকায় না ওঠা একই কথা।

আমরা করোনবিধি মানতে নারাজ। কিন্তু অসুখ হলে ওষুধ খাওয়া তো সুন্নত। কেউ কিছু মানি আর না মানি, মূমুর্ষ অবস্থায় পতিত হলে আমরা কেউই শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে বাড়িতে বসে থাকিনা। বরং সাধ্যমত চিকিৎসকের কাছে যাই। আল্লাহর রহমতও কামনা করি। দোওয়া চাই আত্মীয় স্বজনের। তখন ওষুধ খাই, অপারেশন করি। উদ্দেশ্য, বেঁচে ওঠা। তখন ডাক্তার যে নির্দেশ দেন তা আমরা মেনে চলতে বাধ্য হই।

সুতরাং সরকারি যে নির্দেশ আল্লাহর নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তা আগে থেকেই মেনে চললে দোষ কোথায়?

আর এক মুরব্বি বলেছিলেন, মহান আল্লাহ রাব্বিল আ’লামিন সবকিছু করেন একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে। তিনি ইচ্ছা করলেই দিনকে রাত, রাতকে দিন, পাহাড়কে দরিয়া, দরিয়াকে পাহাড়, ফকিরকে বাদশাহ আর বাদশাহকে ফকির বানাতে পারেন। আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখি। এটা একটা সিস্টেম।

কিন্তু আল্লাহ ইচ্ছা করলেই তা পশ্চিম দিক থেকে ওঠাতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে এক নিমিষেই পৃথিবীর সব মানুষকে হেদায়েত দিতে পারেন। কিন্তু তিনি হেদায়েতের জন্য সিস্টেম করেছেন দাওয়াত দেয়ার। দাওয়াত দিতে গিয়ে তার দোস্ত, যাকে সৃষ্টি না করলে তামাম জাহান কিছুই সৃষ্টি করতেননা, সেই দোস্তের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছেন।

আমরা প্রায়ই দেখি এক্সিডেন্টে মৃত্যু। আল্লাহ ইচ্ছা করলে কোন কারণ ছাড়াই যে কোন মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারেন। কিন্তু তিনি সিস্টেম করে কোন না কোন অছিলা দিয়ে মৃত্যু ঘটান।

আল্লাহ যাদেরকে করোনা থেকে বাঁচাবেন, তারা কোন প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা না নিলেও তাদেরকে বাঁচাবেন। মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এটা একটা সিস্টেম। এই কাজগুলো করা কি শেরেক? আমরা জ্বর হলে মাথায় পানি পট্টি দিই। পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে দিই। এসব করা কি ইসলামে নিষেধ? তবে মাস্ক ব্যবহার, দূরত্ব বজায় রাখা আর হাত ধোয়াতে কেন এত বিতর্ক?

আমরা কঠিন অসুখে পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে অনেক হালাল খাবারও গ্রহণ করিনা। ডায়াবেটিস হলে চিনি, হাইপ্রেসার হলে কাঁচা লবন ইত্যাদি। এগুলো না খাওয়া কি শেরেক হবে? কক্খনোই না।

সো, প্লিজ বি পজিটিভ।—————-কিউ, এম, সাঈদ টিটো