প্রকাশের সময় :
০৬:৪২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুলাই ২০২১
১০১৬
Spread the love
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৬ জুলাই ২০২১ :
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাজার জামেহ মসজিদে গত শুক্রবার (২ জুলাই) জুম্মার নামাজের আগে পেশ ইমাম মাওলানা মো: জিল্লুর রহমান বাংলায় যে খুৎবা দেন, তার সারমর্ম মহাদেবপুর দর্পণের অগণিত পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো :
ইমাম সাহেব এ সপ্তাহের খুৎবায় দুটি বিষয় আলোচনা করেছেন। এর একটি হলো করোনা বিষয়ে সতর্কতা, আর অপরটি কোরবানি। পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে সুরা আল কাউসার পাঠ করে তার বিস্তারিত তাফসির শুনান।
তিনি বলেন, দুনিয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের নাফরমানি বেড়ে গেলে তিনি এলাকাভিত্তিক গজব নাযেল করেন। অতীতে বহু জাতিকে তিনি ধংস করে দিয়েছেন। কিন্তু তার দেয়া গজব কখনোই প্রকৃত মোমিনদেরকে ধংস করার জন্য নয়। বরং আল্লাহ মোমিনদেরকে বালা মুসিবতে ফেলেন তাদের ইমানকে পরীক্ষা করার জন্য। ইমান মজবুত করার জন্য।
ইমাম সাহেব বলেন, বর্তমানের করোনাভাইরাস নি:সন্দেহে আল্লাহর একটি গজব নাফরমানদের জন্য। মোমিনদের জন্য এটা ইমানী পরীক্ষা। এ থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করে তার অর্থে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আল্লাহর হুকুম। এটা আমাদেরকে মানতে হবে। অনেকেই রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মানছেননা। তারা বলছেন, করোনা আল্লাহ দিয়েছেন, আল্লাহই হেফাজত করবেন। আল্লাহ করোনা দিতে চাইলে মাস্ক করোনা ঠেকাতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশতো মানতেই হবে।
তিনি বলেন, আমরা মসজিদে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের আগে ঘোষণা দিচ্ছি মাস্ক ব্যবহার করি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। অনেকেই তা মানছেননা। কিন্তু আল্লাহ যে সতর্ক হতে বলেছেন তা অনেকেই জানিনা। তাই তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
কোরবানি বিষয়ে ইমাম সাহেব বলেছেন, অনেকেই বলেন যে কোরবানি দেয়া বিষয়ে, কোরবানির নিয়তে, গোস্ত বিতরণে অনেকেই নিয়ম মানেননা। অনেকে বলেন যে, তাদের কোরবানি কবুল হয়না। কিন্তু সেসব কথা মোটেও ঠিক নয়। কারণ কোরবানির ব্যাপারে প্রতিটি মানুষ খুবই সচেতন। তিনি বলেন, কোরবানির পশু হতে হবে একদম নিখুত। কোন ব্যক্তি তার বাড়িতে বছর ধরে একটি গরু লালন পালন করেছেন। খুব আদরের সে গরু কোরবানি দিবেন। কিন্তু সে গরুর কান কাটা। তিনি কখনোই এই খুতযুক্ত গরু কোরবানি দিবেননা। হাটে গরু কিনলেও মানুষ নিখুত গরু কেনেন।
তিনি কোরবানির নিয়ত বিষয়ে বলেন, অনেকে তাদের মাতাপিতার নামে কোরবানি দেন। কিন্তু প্রতিটি কোরবানি হবে আল্লাহর নামে। আল্লাহর নামের পরেই মাতাপিতার অথবা নিজের নাম হবে। তিনি বলেন, আল্লাহ সুরা হজ্ব, সুরা কাউসারসহ পবিত্র কোরআনের কয়েকটি জায়গায় কোরবানির কথা বলেছেন। তিনি সুরা কাউসারের তাফসিরে বলেন, আল্লাহ বলেন,‘‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন।’’
ইমাম সাহেব বলেন, তাফসিরকারকরা কাউসার শব্দের দুটি অর্থ করেছেন। প্রথমটি হলো অনেক বেশি। ইসলামের শুরুতে খুব কম সংখ্যক মানুষ মুসলমান হয়েছেন। কিন্তু বিদায় হজ্জের সময় সোয়া লক্ষ সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। একারণে আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে বলেছেন যে, তিনি তাঁকে অনেক দিয়েছেন। অপর অর্থ হলো সরোবর। আল্লাহ মানুষের কৃতকর্মের বিচারের জন্য রোজ হাসরের ময়দানে সব্বাইকে একত্র করবেন। সেখানে মানুষ পিপাসায় কাতর হয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি করবেন। এসময় শুধুমাত্র শেষ নবীর উম্মতদেরকে পান করানো হবে এই হাউজে কাউসারের পানি। এর এক ঢোক পানি পান করলে ৫০ হাজার বছরের বিচার সময়ে আর তৃষ্ণা লাগবেনা।
তিনি বলেন, শেষ নবীর উম্মতদেরকে কিভাবে চেনা যাবে? এটা খুব সহজ। একটা মাঠে যদি হাজার হাজার ঘোড়া থাকে। তার মধ্যে অল্প সংখ্যক সাদা ঘোড়া থাকলেও তাদেরকে চেনা কোন মুসকিল নয়। তেমনি শেষ নবীর উম্মতেরা অযু করার সময় শরীরের যেসব জায়গা পানি দিয়ে ধোয়া হয় সেসব স্থান হাসরের ময়দানে উজ্জল আলোর মত চমকাবে। সেই আলোর ঝিলিক দেখে সহজেই চেনা যাবে শেষ নবীর উম্মতদের।
ইমাম সাহেব বলেন, সুরা কাউসারে আল্লাহ প্রথমে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। তার পরে বলেছেন কোরবানি দিতে।#