মহাদেবপুর দর্পণ, এমদাদুল হক দুলু, বদলগাছী (নওগাঁ), ২৩ এপ্রিল ২০২১ :
নওগাঁর বদলগাছীতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামেও সন্তুষ্ট কৃষক। তবে শ্রমিক সংকটের আশঙ্কায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। দুয়েকজন কৃষক ধান কাটতে শুরু করলেও সপ্তাহ খানেক পরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।
বদলগাছী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১০ হাজার নয়শ ৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্জিত হয়েছে ১১ হাজার সাতশ ৫০ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাতশ ৬০ হেক্টর বেশি। এ উপজেলায় ১৪ টি জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়। তবে ব্রিধান-৮১, ২৮, ১৫, ৫০, জিরা, কাটারি ও গোল্ডেন আতব জাতের বোরো ধান কৃষকেরা বেশি পরিমাণে চাষাবাদ করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্থানীয় ও বহিরাগত মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক এ উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে থাকে। এর মধ্যে স্থানীয় শ্রমিক রয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার। আর বহিরাগত শ্রমিক আসে আট থেকে নয় হাজার। সাধারণত চাপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রংপুর ও নিলফামারির ডোমার উপজেলা থেকে শ্রমিকরা এ উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে আসেন।
বদলগাছী সদর ইউনিয়নের জিয়ল গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম হালিম বলেন, ‘আমি আট বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ফলন আলহামদুলিল্লাহ বাম্পার হয়েছে। আট থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে। আকাশ ভালো থাকলে বিঘা প্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ হারে ধান ঘরে তুলতে পারবো।
তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে কাঁচা ধানের মূল্য মণপ্রতি এক হাজার টাকা। এই দামে যদি ধান বিক্রয় করা যায় তবে লাভ খুব ভালো হবে। কিন্তু ধান কাটা শ্রমিক নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছি। প্রতি মণে সাত থেকে নয় কেজি ধান মজুরি দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করাতে হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখনো বাহিরের শ্রমিক আসতে পারেনি। বাহিরের শ্রমিক না আসলে অতিরিক্ত মজুরী দিয়েও ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।’
বালুভরা ইউনিয়নের কোমারপুর গ্রামের আনোয়ারুল হক সরদার জানান, তিনি চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করান। লকডাউনের কারণে শ্রমিক আসতে পারবে কি-না তা নিয়ে তিনি ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। সময় মতো শ্রমিক না আসলে মাথায় বাজ পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমের আবহাওয়া বোরো ধান চাষের অনুকূলে ছিল। তাই ফলনও বাম্পার হয়েছে। লকডাউনের কারণে বাহিরের শ্রমিক আসায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর আট হাজার ছয়শ ৩০ জন ধানকাটা শ্রমিকের চাহিদা দেওয়া আছে। বাহিরের শ্রমিক আসলে ধান কাটা মাড়াইয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কৃষি অফিসের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর ধানকাটা শ্রমিকের চাহিদা দেওয়া আছে। তারা আসলে বিভিন্ন স্কুলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রয়োজনে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হবে।#