নওগাঁ ১০:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

সাপাহারে বিদেশী ফল রক মেলন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, বাবুল আকতার, স্টাফ রিপোর্টার, সাপাহার (নওগাঁ), ১১ এপ্রিল ২০২১ :

নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র খ্যাত সাপাহার উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে তরুণ উদ্যোক্তা হোসনে মাহফুজ শিবলী সৌদি ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। উপজেলায় প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে তিনি আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন। আগামীতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই রক মেলন ফল চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

হোসনে মাহফুজ শিবলী জানান, ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স সমাপ্ত করেন। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজধানী শহরেই ব্যবসায় করছিলেন। বরেন্দ্রভূমি সাপাহার উপজেলায় বেশ কয়েক বছর ধরে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নীরব বিপ্লব শুরু হয়। অল্প সময়ে দেশের মানুষের নিকট আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতামুলক ভাবে এখানে ফল বাগান তৈরীর হিড়িক পড়ে যায়। এসব দেখে তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মা মাটির টানে শহর ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরী করেন। সেই আম বাগানের মধ্যে এক একর জমিতে পরীক্ষামুলকভাবে তিনি সাথী ফসল হিসেবে বিদেশী ফল ও বিদেশী সব্জির চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি সখের বসে চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও দেশের চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন বা সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করেন ও তার জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে তার ওই এক একর জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন (সৌদী আরবের সাম্মাম ফল) চাইনিজ হলুদ তরমুজ, সাদা ও কালো স্কোয়াস, লাল, সবুজ, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। তবে বাগানে সব্জির তুলনায় বিদেশী ফল রক মেলন (সাম্মাম) আশাব্যঞ্জকভাবে উৎপাদন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে। স্বাদ ও গন্ধেও ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম বিদ্যমান। এ ফল মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতই হয়। বর্তমান বাজারে তরমুজ বাঙ্গির চাইতে কয়েক গুন চাহিদা ও মুল্যে বেশী থাকায় আগামী দিনে এই বিদেশী ফল চাষে আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি শিবলীর ওই রক মেলন (সাম্মাম) বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, রোপণ করা আম গাছের চারার মাঝের সারিতে হালকা মাচার উপর লতানো গাছে ধরে আছে এই খসখসে সাদা সাদা রক মেলন ফল। প্রতিটি ফল এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি এই ফল বাজার জাত করবেন বলেও আশা করছেন।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘বাঙ্গিজাতীয় এ বিদেশী ফলকে রক মেলন (সাম্মাম) বলা হয় । সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এ ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী তার অভিমত ব্যক্ত করে এ প্রতিবেদককে জানান যে, বিদেশী এই ফল ও সব্জি চাষে যদি সরকারিভাবে তাকে সহযোগীতা দেয়া হয় তাহলে তিনি আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে রক মেলন চাষবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তাণী করতে পারবেন। তার মতে বরেন্দ্র ভূমির এই মাটিতে বিদেশী ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। এটি বছরে তিন বার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোন কৃষক বিদেশী এই ফল ও সব্জি চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন।#

আপলোডকারীর তথ্য

সাপাহারে বিদেশী ফল রক মেলন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ১১:২৪:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, বাবুল আকতার, স্টাফ রিপোর্টার, সাপাহার (নওগাঁ), ১১ এপ্রিল ২০২১ :

নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র খ্যাত সাপাহার উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে তরুণ উদ্যোক্তা হোসনে মাহফুজ শিবলী সৌদি ও থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন ‘সাম্মাম’ চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন। উপজেলায় প্রথমবারের মতো ফলটি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে তিনি আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন। আগামীতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই রক মেলন ফল চাষাবাদের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

হোসনে মাহফুজ শিবলী জানান, ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স সমাপ্ত করেন। পড়াশোনা শেষে দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজধানী শহরেই ব্যবসায় করছিলেন। বরেন্দ্রভূমি সাপাহার উপজেলায় বেশ কয়েক বছর ধরে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে কৃষিতে নীরব বিপ্লব শুরু হয়। অল্প সময়ে দেশের মানুষের নিকট আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাপাহার উপজেলা পরিচিতি লাভ করে। প্রতিযোগিতামুলক ভাবে এখানে ফল বাগান তৈরীর হিড়িক পড়ে যায়। এসব দেখে তিনি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মা মাটির টানে শহর ছেড়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। উপজেলার গোয়ালা আটানীপাড়া মাঠে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কয়েক একর জমিতে ধান চাষ না করে তিনি উন্নত জাতের আম বাগান তৈরী করেন। সেই আম বাগানের মধ্যে এক একর জমিতে পরীক্ষামুলকভাবে তিনি সাথী ফসল হিসেবে বিদেশী ফল ও বিদেশী সব্জির চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি সখের বসে চীন থেকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হলুদ তরমুজ বীজ ও দেশের চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া ও ঢাকা থেকে রক মেলন বা সাম্মাম ফলের চারা সংগ্রহ করেন ও তার জমিতে রোপণ করেন। বর্তমানে তার ওই এক একর জমিতে থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ফল রক মেলন (সৌদী আরবের সাম্মাম ফল) চাইনিজ হলুদ তরমুজ, সাদা ও কালো স্কোয়াস, লাল, সবুজ, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। তবে বাগানে সব্জির তুলনায় বিদেশী ফল রক মেলন (সাম্মাম) আশাব্যঞ্জকভাবে উৎপাদন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রাখে। স্বাদ ও গন্ধেও ফলটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি আছে এই ফলে। আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম বিদ্যমান। এ ফল মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নতুন এই ফল চাষে খরচ অন্য ফলের মতই হয়। বর্তমান বাজারে তরমুজ বাঙ্গির চাইতে কয়েক গুন চাহিদা ও মুল্যে বেশী থাকায় আগামী দিনে এই বিদেশী ফল চাষে আশপাশের কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি শিবলীর ওই রক মেলন (সাম্মাম) বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, রোপণ করা আম গাছের চারার মাঝের সারিতে হালকা মাচার উপর লতানো গাছে ধরে আছে এই খসখসে সাদা সাদা রক মেলন ফল। প্রতিটি ফল এক কেজি থেকে তিন কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বাগানে রক মেলন ফল পাকতে শুরু করেছে। রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি এই ফল বাজার জাত করবেন বলেও আশা করছেন।

উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভীদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘বাঙ্গিজাতীয় এ বিদেশী ফলকে রক মেলন (সাম্মাম) বলা হয় । সৌদি আরব ও আশপাশের দেশগুলোতে এ ফলের চাষ হলেও আমাদের দেশের বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফলটির চাষাবাদ অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। তাই সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র মাটিতে এই ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তা শিবলী তার অভিমত ব্যক্ত করে এ প্রতিবেদককে জানান যে, বিদেশী এই ফল ও সব্জি চাষে যদি সরকারিভাবে তাকে সহযোগীতা দেয়া হয় তাহলে তিনি আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে রক মেলন চাষবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তাণী করতে পারবেন। তার মতে বরেন্দ্র ভূমির এই মাটিতে বিদেশী ফলটি খুব ভালোভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব। এটি বছরে তিন বার চাষ করা যায়। দেশের সকল বাজারে ফলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আগামী মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত বীজ ও চারা উৎপাদন করবেন। কোন কৃষক বিদেশী এই ফল ও সব্জি চাষে আগ্রহী হলে তিনি তাকে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন।#