মহাদেবপুর দর্পণ, মাহমুদুন নবী বেলাল, স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ :
নওগাঁয় সারা দেশের মতো মাঘের ঘনকুয়াশা আর শৈতপ্রবাহের কারণে গ্রামীণ জনপদে জেঁকে বসেছে কনকনে তীব্র শীত। দিনের শুরুতে সূর্যের সোনালী আলোর মুখ তেমন দেখা না মিললেও শেষ বিকেলের দিকে উকি মারা আলোর সোনালী আভা দেখতে দেখতে ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিগন্তে। গা গরম হতে না হতেই সন্ধ্যার পরেই শীতের দাপটে ছিন্নমূল অসহায় হতদরিদ্র শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ ঘরে ঢুকে সাধ্যমতো গরম কাপড় ও লেপ মুড়িয়ে বসে থাকছেন।
শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে লেপ-তোষক কেনার ধূম পড়েছে। খাদ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এই জনপদে বর্তমান ইরি-বোরো রোপনের কাজ শুরু হলেও ঠান্ডা আর কুয়াশা জনতি কারণে যথা সময়ে জমিতে শ্রমিকরা নামতে পারছেন না। ফলে তীব্র শীতের কারণে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো চাষ শুরুতেই থমকে দাঁড়াচ্ছে।
তীব্র ঠান্ডা নিবারনের জন্য ছিন্নমূল মানুষদের পর্যাপ্ত পরিমান গরম কাপড় না থাকলেও সামর্থবানরা চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেপ তৈরি করতে লেপ-তোষকের দোকানে ভির করছেন। নওগাঁয় তৈরি লেপ-তোষকগুলো কম দামে মান সম্পন্ন হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উত্তর জনপদের শীত প্রবন জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নিলফামারী, দক্ষিন জনপদের চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, নড়াইল ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাগুলোতে ট্রাক যোগে প্রতিদিন পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন।
শীতের কারণে গতবছরের তুলনায় ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরণের মাপ অনুযায়ী এ বছর লেপ প্রতি ২শ’ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। চাহিদার পরিমাণ বেশি হওয়ায় স্থানীয় লেপের দোকানীরা অর্ডার নিয়ে যথা সময়ে সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
ছয় ঋতুর এই দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তা ঋতুর সাথে তাল মিলছেনা। গ্রাম-বাংলার প্রবাদ আছে মাঘের শীতে নাকি বনের বাঘ কাঁদে। মাঝারী ধরণের শৈতপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশার কারণে অনেক বাসা-বাড়িতে শীত নিবারণের প্রস্তুতি যেন শেষ হচ্ছেনা।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীত জেঁকে বসায় তা মোকাবেলা করার জন্য অধিকাংশ মানুষ বাহিরের দোকান থেকে লেপ তৈরি করছেন। দিন যতই গড়ছে শীত কমার কথা থাকলেও উল্টো চিত্র হওয়ায় শীত বেশি পড়ার আশংকায় উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষেরা নতুন নতুন লেপ তৈরি করছেন। লেপ তৈরির অর্ডার দিতে আশা মানুষের তারাহুরার কারণে রানীনগর উপজেলার কোবরাতলী, বিএনপি’র মোড়, স্টেশন রোড, কুজাইল, বেতগাড়ী বাজার ও আবাদপুকুর হাটের শো-রুমের পার্শের ফাকা জায়গায় ক্রেতাদের উপস্থিতি আর কারিগরদের ধনুক দিয়ে তুলা ফাটানোর সরগরমই যেন বলে দিচ্ছে লেপ তৈরির নতুন করে ধূম পড়েছে।
তীব্র শীতের কারণে তুলার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্রিমোহনী-কুবরাতলী এলাকায় ১১ টি তুলার মিলে উৎপাদিত মান সম্পন্ন তুলা দোকানীদের কাছে সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি কেজি শিমুল তুলা ২৮০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা, মিলের তুলা ভাল মানের সাদা ১০০ টাকা, কারপাস তুলা ২৮০ টাকার বেশি বিক্রয় হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণী ভেদে তুলার দাম মিল মালিকরা বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
একটি ৪ হাত বাই ৫ হাত লেপ তৈরি করতে সাদা তুলার প্রায় ১৩শ’ টাকা লাগছে, যা গতবছর ছিল ১১শ’ টাকার কিছু বেশি বলে জানিয়েছেন রাণীনগর উপজেলার কুবরাতলি গ্রামের আরিফ তুলা ঘরের স্বত্তাধিকারী মো: জহির আলী পোদ্দার।
লেপ-তোষক পাইকারী ব্যবসায়ী আব্বাছ আলী বলেন, ‘শীত আসলে আমি কুবরাতলী থেকে তৈরি লেপ নানা মাপের বিভিন্ন দামে কিনে নিয়ে ট্রাক যোগে শীত প্রবণ জেলা কুড়িগ্রামে পাইকারী সরবারহ করি। এছাড়া নওগাঁ সদরের শহরের তুলাপট্রি বাজারে চলছে রাতদিন লেপ-তোষক তৈরি ও বেচাকেনা চলছে।#