
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ১১ অক্টোবর ২০২০ :
জাহিদুল ইসলাম মানবিক বিভাগে ১৯৯৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর ২০০৪ সালে ভারতের কলকাতা থেকে নিয়েছেন এমবিবিএস পাসের ডিগ্রি। তার রয়েছে গ্রাম ডাক্তারের সনদপত্র। নিজেকে তিনি অভিজ্ঞ ডাক্তার বলে পরিচয় দিচ্ছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখছেন নিয়মিত রোগী। রোগীদের প্রচণ্ড ভীড়। এসব রোগী দেখার নিয়মিত বিরতিতে নিজেই করছেন আলট্রাসনো, ইসিজি এবং এক্সরে। তার একই স্বাক্ষর রয়েছে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি এসব প্রতিটি রিপোর্টে।

তিনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের সুবিদ আলীর ছেলে ও উপজেলার পাহাড়পুর বাজারের একিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক। একই সাথে পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলা সদরের রওশন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এমএলএসএস পদমর্যাদার একজন ওটি বয় (অপারেশন থিয়েটারে সাহায্যকারী) হিসেবে কর্মরত। এখানে তিনি রাতের বেলা ডিউটি করেন। দিনের বেলা ডাক্তার হলেও রাতে তিনি ওর্য়াড বয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাঁচ বছর ধরে অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি চালাচ্ছেন তিনি।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই সেন্টারটির অবস্থান। সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জাহিদুল ইসলামের নিকট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ওটি বয় হিসেবে কাজ করার কথা স্বীকার করেন। নামের আগে ডাক্তার শব্দটি ব্যবহার করেন না বলে তিনি দাবি করেন। তবে উপস্থিত রোগীদের কাছে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
এইচএসসিতে কোন কোন বিষয় অন্তরর্ভূক্ত ছিল এমন প্রশ্নে বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়া অন্যগুলি তিনি মনে করতে পারেন নি। ভারতের শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব অল্টারনেটিভ মেডিসিন কলকাতা থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়েছেন বলে দাবি করলেও বলতে পারেন নি এমবিবিএস এর পুরো অর্থ। মানবিক বিভাগের ছাত্র হয়ে এমবিবিএস বা ডাক্তারি পড়া যায় (?) এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওটাই আমার ভুল হয়েছে’।
বিধি মোতাবেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষাগার হতে হবে ৫৭৬ বর্গফুটের। কালেকশন রুম, স্টোর রুম এবং প্যাথলজিস্ট রুম হতে হবে কমপক্ষে ১৫০ বর্গফুটের। তবে সেদিন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনে গেলে তিনি এসবের কোনটিই দেখাতে পারেন নি। এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন ডাক্তার বা প্যাথলজিস্ট কিংবা সনোলজিস্ট নেই। সবাই অন কলে আসেন অথবা অনলাইনে রিপোর্ট দেখে দেন। অনলাইনে রিপোর্ট দেখা সম্ভব হলেও তাদের স্বাক্ষর কীভাবে নেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তারা আগেই স্বাক্ষর করে রাখেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের রিপোর্ট দেখা এবং স্বাক্ষরের কথা বললেও এখানকার ইসিজি, এক্সরে এবং আলট্রাসনোগ্রামের প্রত্যেকটিতে তিনি নিজেই স্বাক্ষর করেন। নিয়ম অনুযায়ী টেকনোলজিস্ট এবং ডাক্তার না থাকা ও অন্যান্য বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, আশপাশের জেলা ও উপজেলার সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এভাবেই চলে।
তিনি জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রেজিষ্ট্রেশন নবায়নের সময় তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কীভাবে কাজটি করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। তবে সেই বিশেষ ব্যবস্থা কী, তা বিস্তারিত বলেন নি তিনি।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা: এবিএম আবু হানিফ বলেন, একিয়া ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কানিস ফাতিমাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শুধু একিয়া ডায়াগনিস্টিক নয়, জেলার সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে চলছে কি না তা তদন্ত করা হবে।#
