মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ :
অবশেষে মহাদেবপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দুই কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের বিষয় তদন্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় তদন্ত কমিটি উপজেলা শিক্ষা অফিসে এর তদন্ত করবে। কিন্তু এই তদন্তের বিষয় কোন সাংবাদিককে জানানো হয়নি।
জানতে চাইলে, নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইউসুফ রেজা জানান, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালক বৃহস্পতিবার মহাদেবপুর আসবেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তদন্তের জন্য উভয় পক্ষকে মহাদেবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে উপস্থিত থাকার জন্য অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একটি পক্ষ মহাদেবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্টরা, আর অপর পক্ষ সাংবাদিক।
দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
দৈনিক জনকন্ঠের নওগাঁর নিজস্ব সংবাদদাতা বিশ্বজিৎ সরকার মনি জানান, এখন পর্যন্ত তিনি এ সংক্রান্ত কোন চিঠি বা ফোন পাননি।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই মহাদেবপুর দর্পণসহ দেশের প্রায় সব জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া মহাদেবপুর দর্পণে কয়েকটি লাইভ দেখানো হয়।
প্রকাশিত সংবাদটি হুবহু আবার প্রকাশ করা হলো :
মহাদেবপুরে শিক্ষা অফিসের দুই কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২০ জুলাই ২০২০ :
নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ না করেই ১০০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে ভুয়া ভাউচার দাখিল করা হয়েছে। কাজ করা না হলেও প্রকল্প থেকে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে অবৈধভাবে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রাখা হয়েছে।
প্রকাশ, ২০১৯-‘২০ অর্থবছরে দাতা সংস্থা জাইকা, ইউএসএইড ও ইউকেএইডের অর্থায়নে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ১৩৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুটিন মেরামত কাজের জন্য প্রতিটিতে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ক্ষদ্র মেরামত বাবদ ৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে ৯৪ লাখ টাকা ও ২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা, ১০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক কাজের জন্য প্রত্যেকটিতে ২০ হাজার টাকা করে ২ লাখ টাকা এবং নিয়মিত মেরামত বাবদ স্লিপে ১৩৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের কোনটিতে ৫০ হাজার টাকা ও কোনটিতে ৭০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়।
অর্থবছরের শুরুতেই এই অর্থ বরাদ্দ করা হলেও বিদ্যালয়গুলো নির্বাচন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দীর্ঘ ১০ মাস সময় ব্যয় করে। অর্থবছর শেষ হবার মাত্র দেড় মাস আগে বিদ্যালয় গুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়, নিজের টাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ করে ভাউচার দাখিল করতে হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিয়োাগ করা প্রতিনিধির দেয়া প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়া সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির পর এই অর্থ ছাড় করা হবে।
গত ৩০ জুন এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিধান ছিল। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন প্রকল্পের কাজই সমাপ্ত হয়নি। কোন কোনটির কাজ শুরুই হয়নি। ২৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা থাকলেও একটিতেও শুরু হয়নি। কিন্তু তালিকাভুক্ত বিদ্যালয়গুলো থেকে কাজ একশভাগ সমাপ্ত হয়েছে বলে ভাউচার সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ভুয়া ভাউচার দাখিল করে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বরাদ্দ করা টাকা উত্তোলন করতে বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাজহারুল ইসলাম জানান, ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দ করা টাকা ল্যাপস হয়ে যাবে এবং তা ফেরত পাঠাতে হবে। তাই তিনি অ্যাডভান্স ভাউচার সংগ্রহ করে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে জমা রেখেছেন। প্রকল্প গুলোর কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিল পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এই পরিশোধ দেখানো হবে ব্যাকডেটে, ৩০ জুনের মধ্যে।
নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইউসুফ রেজা জানান, ৩০ জুনের পরে কোনক্রমেই প্রকল্পের কাজ করা যাবে না। প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রাখা বিধিসম্মত নয় বলেও তিনি জানান। তিনি জানান, ৩০ জুনের পর প্রকল্পের অব্যয়িত টাকা ল্যাপস হিসেবে গণ্য হবে এবং তা ফেরত যাবে।
সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মহাদেবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কিভাবে ভুয়া ভাউচার দাখিল করে শতভাগ কাজ সমাপ্তির বিল উত্তোলন করলেন, অর্থবছর শেষ হবার ৩ সপ্তাহ পরেও বরাদ্দ করা টাকা স্কুলগুলোর মধ্যে বিতরণ না করে কিভাবে তিনি একাউন্টে জমা রাখলেন তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
স্থানীয় সুধীমহল বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্ত করে অবৈধভাবে দাখিল করা ভুয়া ভাউচার গুলো সনাক্ত করে বাতিল করে প্রকল্পের অব্যয়িত টাকা ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। #