মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ :
বুধবার সন্ধ্যায় নওগাঁর মহাদেবপুরে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর ওরাও, মুন্ডা ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের (আদিবাসী) ধর্মীয় প্রধান অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাল পুঁজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। সমাপনী দিনে উপজেলার নাটশাল ফুটবল মাঠে বিভিন্ন দলে দলে ঢোল মাদলের তালে নৃত্য-গীত আর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে বিকেল ৩ টায় উৎসব মেলার উদ্বোধন করেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।
উদ্বোধন পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। এতে নওগাঁর মহাদেবপুর, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা থেকে আসা বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন মেলায় অংশ নেয়।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত পরিসরে সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের বছর গুলোতে ৩০ থেকে ৪০ টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে নাটশাল মাঠে নাচ-গান পরিবেশন করলেও এবার ২০ টি সাংস্কৃতিক দল একসঙ্গে নাচ-গান পরিবেশন করে। নাচে-গানে ও ঢোল-মাদলের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় নাটশালে আসা নারী-পুরুষরা।
সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন এতে প্রধান অতিথি এবং ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বিষয়ক গবেষক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী এতে প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
নাটশাল কারাম মন্দিরের পুরোহিত কার্তিক ওঁরাও এতে সভাপতিত্ব করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবিব ভোদন, জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরকোর নির্বাহী পরিচালক সজল কুমার চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তারা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান।
তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ওপর সকল অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম বন্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
আলোচনা শেষে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। আগের দিন সন্ধ্যায় নাটশাল ও বকাপুর গ্রামে কারাম পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতভর গ্রামের আখড়ায় পুঁতে রাখা কারাম (খিল কদম) ডালকে ঘিরে নাচ-গান অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে আখড়া থেকে কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শেষে গ্রামের পুকুরে বিসর্জন দেয়।
কারাম উৎসবকে ঘিরে ওঁরাও গ্রামগুলোতে প্রস্ততি চলে ১৫ থেকে ২০ দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত নাচ-গান চলে। ওঁরাও, মুন্ডাসহ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এ উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে।
কারাম উৎসব কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা বলেন, ঐতিহাসিক ভাবেই আদিবাসীরা প্রকৃতি পূজারী। আদিবাসীদের ধর্মীয় প্রধান ও কৃষিভিত্তিক ও ফসলমুখী পূজা হলো কারাম পূজা। প্রতিবছর ভাদ্র মাসে এর তিথি আসে।
কারাম একটি গাছের নাম। যাকে আমরা খিল কদম নামে চিনে থাকি। আদিবাসীদের মতে পবিত্র গাছটি তাঁদের মঙ্গলের প্রতিক।#