মহাদেবপুর দর্পণ, নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ), ৩১ আগষ্ট ২০২০ :
নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি গ্রাম যেন শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালী ছবি। আর এ গ্রাম গুলোতেই জীবিকার খোঁজে পথে প্রান্তরে ছুঁটে চলেছেন আদম্য মানুষটি।
বই বিলানো যেন তার নেশা। তার একটাই প্রত্যাশা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক এই জগৎ। প্রায় দুই যুগ ধরে বই নিয়ে পথে প্রান্তরে ব্যাতিক্রমি এক বইপ্রেমি লোকমান হোসেন।
সমাজের মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়াই যেন তার কাজ। অজো পাড়াগাঁয়ে বসে প্রতিদিন নিত্য নতুন বইয়ের গন্ধ পাওয়া সত্যিই অবাক করার মতো।
কেমন হয়, যদি সকালের নাস্তা সেরে নেওয়ার পরপরই পছন্দের বই নিয়ে কেউ আপনার বাড়ির সামনে হাজির হয়! তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ থেকে শুরু করে কালজয়ী বহু লেখকের বই হাজির আপনার সামনে। আর সেখান থেকে আপনার বেছে নেওয়ার পালা, কোন বইটি পড়বেন আপনি।
উপজেলার আমরুল কসবা গ্রামে বাস্তবেই খুঁজে পেয়েছি এমন একজন বইয়ের ফেরিওয়ালাকে যিনি জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে ২১ বছরই ব্যয় করেছেন এই কাজ করে। তিনি মৃত রমজান আলীর ছেল।
নব্বইয়ের দশক থেকেই ফেরি করে বই বিলিয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। সব বয়সের সব পাঠকের হাতেই তিনি তুলে দিতে চান তার পছন্দের বইটি।
না, অন্য কোনো আশা কিংবা ইচ্ছা থেকে নয়, লোকমান এই কাজ করেন গ্রামের মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখে বই পড়ার আনন্দ বিলিয়ে দেয়ার জন্য।
কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ এমনকি কৃষকরা পর্যন্ত তার পাঠক। পিছিয়ে নেই অন্যরাও। বর্তমানে তার পাঠক সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
প্রতিদিনের মতো তার কাজ করে যাচ্ছিলেন। কাঁধে চিরাচরিত ব্যাগ আর বাইসাইকেলে বাঁধা রয়েছে বেশ কিছু বই। হেঁটে যাওয়ার সময়ই কথা হয় তার সঙ্গে
জানতে চাইলাম তার শুরুর গল্পটা। বই আর পত্র-পত্রিকার সঙ্গে তার সখ্য ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু শখ থাকলেও সাধ্য হতো না। তার গ্রাম তো দূরের কথা আশপাশের ১০-১২ টি গ্রামেও ছিল না কোনো পাঠাগার।
নিজ এলাকায় একটি পাঠাগার করা ও বইকে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন জাগে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পথে-ঘাটে, হাট-বাজারে, পায়ে হেঁটে ও বাইসাইকেল করে ২১ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন।
সারা জীবন এভাবেই বই পড়া আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তিনি। গ্রামের মানুষকে দিতে চান আনন্দময় এক জগতের খোঁজ। যে জগতের খোঁজ তিনি পেয়েছিলেন বইয়ের ছাপানো অক্ষরে। সেই আনন্দের ভাগ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেই তিনি হাঁটেন মাইলের পর মাইল।#