মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ৪ মে ২০২০ :
করোনা ভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে জীবন-যাত্রা। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক চাকা। বেকার হয়ে পড়েছে লাখ লাখ কেটে-খাওয়া দিনমজুররা। আমাদের এই দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির একটি অংশ আদিবাসী সম্প্রদায়।
সরকার থেকে শুরু করে সমাজে বেকার হওয়া সকল মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমিহীন এই আদিবাসীদের প্রতি নজর নেই কারোর। কর্ম না থাকায় এই সম্প্রদায়ের মানুষরা অনেকটাই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। ঠিক তখনই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই সম্প্রদায়ের পাশে প্রয়োজনীয় মানবিক খাদ্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে এনআরডি নামের এক অরাজনৈতিক ফাউন্ডেশন।
এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামের আয়োজনে এবং ওয়ান স্প্রিয়া ফার্মার্স লিমিটেডের পরিচালক আদনান খানের অর্থায়নে বৃহত্তর নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভূমিহীন ও কর্মহীন শ্রমজীবী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাঝে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার উপজেলার উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে ২ শতাধিক আদিবাসীর মাঝে এই মানবিক খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রতি জনকে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২টি করে সাবান বিতরণ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক আমজাদ হোসেন মন্ডল, ওসমান গনি কাজল প্রমুখ।
খাবার সামগ্রী নিতে আসা সুদেব ওরাও, পাহান দেবনাথসহ আরো অনেকেই জানান, সরকার ত্রাণ দিলে তা আমাদের ভাগ্যে জোটে না। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কাজ-কর্ম সকল কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আয়-রোজগার হারিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা না খেয়েই থাকতে হচ্ছে আমাদের। মেম্বার-চেয়ারম্যানদের দৃষ্টি আমাদের উপর পড়ে না। তাই আজ এই খাদ্য সহায়তা পেয়ে আমরা অনেক খুশি। এভাবে যদি সমাজের অন্যান্য বিত্তবানরা আমাদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতো তাহলে এই সম্প্রদায়ের লোকদের অনেক উপকার হতো।
এনআরডির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সব সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের পাশে সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। তারই ধারাবাহিকতায় জেলার মান্দা উপজেলার কিছু ইউনিয়নের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাঝে মানবিক খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। আশা রাখি অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত এই সম্প্রদায়ের মানুষরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। শুধু আমরাই নই, এই মহামারি সময়ে সমাজের সকল বিত্তবানরা যদি একটু একটু করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে আমাদের এই ছোট্ট দেশের কর্মহীন দিনমজুরদের বাড়িতে খাবার সামগ্রী রাখার জায়গা পাবেন না।
সেবামূলক সংগঠন ‘সেবাই ধর্ম’ এর প্রতিষ্ঠাতা রতন প্রসাদ ফনি বলেন, জীবে দয়া পরম ধর্ম। ভোগেই নয় ত্যাগে বড় সুখ। মৃত্যুর পর সম্পদ সঙ্গে যাবে না। তাই জীবনে অর্জিত সম্পদের কিছু অংশ যদি সমাজের গরীব, অসহায়, দু:স্থ্য, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেবার মাধ্যমে রেখে যেতে না পারি তাহলে সেই অর্থ অর্জনের সার্থকতা রইলো কোথায়। কিন্তু আমরা করছি উল্টোটি। তাতে লাভ কি। আজ যারা এখানে অবহেলিত এই সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে সাধ্যমত খাবার সামগ্রী বিতরণ করলো, তাদের কাছ থেকে সমাজের বিত্তবানদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত এবং জাতির এই ক্রান্তিকালে তাদের পাশে সহযোগিতার বার্তা নিয়ে দাঁড়ানো উচিত। কারণ বিন্দু বিন্দু জলেই গড়ে ওঠে সিন্ধু। তাই আসুন এই মহাবিপদের সময় সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা নিয়ে আমরা এই সব মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। #