নওগাঁ ০৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

মহাদেবপুরে স্কুলের সদস্য পদ নিয়ে যুবদল-কৃষকদল নেতার মারামারি

মহাদেবপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৯ জানুয়ারি ২০২৫ : স্কুলের শিশুদের নিয়ে কৃষকদল নেতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

Spread the love
মহাদেবপুর দর্পণ, কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৯ জানুয়ারি ২০২৫ :
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য পদ নিয়ে বিরোধে প্রকাশ্যে যুবদল নেতা-কৃষকদল নেতা ও তাদের লোকজনের মধ্যে মারামারি সংঘটিত হয়েছে। এতে ১০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। থানায় পাল্টা পাল্টি তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এনিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহলে চলছে গুঞ্জন। বিষয়টি এখন মহাদেবপুরে ট্যক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় উপজেলার স্বরুপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের পট পরিবর্তনের পর সব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা হয়। সম্প্রতি আবার এডহক কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। সেই অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা কমিটি উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বিধি অনুযায়ী একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, পাশর্^বর্তী একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইয়াছিন আলী, জমিদাতা সদস্য শাহজাহান ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্চিতা রাণীকে সদস্য করে চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চেরাগপুর ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ইসলাম ওই কমিটির দাতা সদস্য মনোনীত হয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিষয়টি জানতে পেরে ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রাজু আহমেদ জুয়েল ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিনি দাবি করেন যে, স্কুলের জমিদাতা শাহজাহান ইসলামের পূর্বপুরুষ নয়, বরং রাজু আহমেদ জুয়েলের পূর্বপুরুষ। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
এরপর গত ১ জানুয়ারি স্কুলে নতুন বই বিতরণের অনুষ্ঠানে শাহজাহান ইসলামকে ডাকা হয়নি। জানতে পেরে ২ জানুয়ারি সকালে শাহজাহান ইসলাম স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে গালমন্দ করেন। গত ৭ জানুয়ারি এর প্রতিবাদে রাজু আহমেদ জুয়েল পক্ষ বিদ্যালয়ে মানববন্ধনের উদ্যোগ নেয়। এদিন বেলা ১১টায় শাহজাহান ইসলাম স্কুলে গিয়ে দেখতে পান যে রাজু আহমেদ জুয়েল ও অপর যুবদল নেতা আহসান হাবীব প্রধান শিক্ষিকার ঘরে নাস্তা করছেন। এসময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির সূত্রপাত ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের লোকেরা বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে যুবদল নেতা রাজু আহমেদ জুয়েল, আহসান হাবীব, সাজু, উৎসব এবং শাহজাহান ইসলাম এবং তার পক্ষের ইউনিয়ন কৃষকদলের সহ-সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন, সাকিব, আরাফাত, আরমান ও রেশমা আক্তার নামে ১০ জন আহত হন। রেশমা আক্তারকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার মাথায় আটটি সেলাই দিতে হয়েছে। খবর পেয়ে নওহাটা ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর পরই স্কুলে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
জানতে চাইলে শাহজাহান ইসলাম জানান, যুবদল নেতা রাজু আহমেদ জুয়েলের সহযোগিতায় স্কুলের সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন উজ্জলের ছেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য নওরোগ হোসেন উৎসব সকালে নওহাটার মোড় থেকে আগেই মানববন্ধনের ব্যানারটি তৈরি করে আনে। বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন। স্কুলে তার পূর্বপুরুষেরাই জমি দান করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা রাণী সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রাজু আহমেদ জুয়েল ও আহসান হাবীব দলিল দেখাবেন বিষয়টি জানানোর জন্য তার অফিসে এসেছিলেন। তিনি তাদেরকে বিস্কুট খেতে দিয়েছিলেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, লিগ্যাল নোটিশ পাবার পর তিনি মৌখিকভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দাতা সদস্য শাহজাহান ইসলামকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছিলেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাফিয়া আক্তার অপু জানান, স্কুলের এত বিষয় আগে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। মারামারির সময় তাকে জানালে তিনি থানা পুলিশকে অবগত করান।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাশমত আলী জানান, ঘটনার বিষয়ে শাহজাহান ইসলামের পক্ষে দুইটি এবং রাজু আহমেদ জুয়েল পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে বিষয়টি মিমাংশার প্রক্রিয়া চলছে।
শুধুমাত্র একটি লিগ্যাল নোটিশেই কোন সদস্যকে বাদ দেয়া যায়না বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। এজন্য কোন তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। বিষয়টি তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো। তাকে বাদ না দেয়া পর্যন্ত মৌখিকভাবে স্কুলে যেতে নিষেধ করা যায়না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
আপলোডকারীর তথ্য

মহাদেবপুরে স্কুলের সদস্য পদ নিয়ে যুবদল-কৃষকদল নেতার মারামারি

প্রকাশের সময় : ০১:৩৩:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
Spread the love
মহাদেবপুর দর্পণ, কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৯ জানুয়ারি ২০২৫ :
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য পদ নিয়ে বিরোধে প্রকাশ্যে যুবদল নেতা-কৃষকদল নেতা ও তাদের লোকজনের মধ্যে মারামারি সংঘটিত হয়েছে। এতে ১০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। থানায় পাল্টা পাল্টি তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এনিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহলে চলছে গুঞ্জন। বিষয়টি এখন মহাদেবপুরে ট্যক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় উপজেলার স্বরুপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের পট পরিবর্তনের পর সব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা হয়। সম্প্রতি আবার এডহক কমিটি গঠন শুরু হয়েছে। সেই অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা কমিটি উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বিধি অনুযায়ী একজন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, পাশর্^বর্তী একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইয়াছিন আলী, জমিদাতা সদস্য শাহজাহান ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্চিতা রাণীকে সদস্য করে চার সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি গঠন করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চেরাগপুর ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ইসলাম ওই কমিটির দাতা সদস্য মনোনীত হয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিষয়টি জানতে পেরে ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রাজু আহমেদ জুয়েল ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিনি দাবি করেন যে, স্কুলের জমিদাতা শাহজাহান ইসলামের পূর্বপুরুষ নয়, বরং রাজু আহমেদ জুয়েলের পূর্বপুরুষ। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।
এরপর গত ১ জানুয়ারি স্কুলে নতুন বই বিতরণের অনুষ্ঠানে শাহজাহান ইসলামকে ডাকা হয়নি। জানতে পেরে ২ জানুয়ারি সকালে শাহজাহান ইসলাম স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে গালমন্দ করেন। গত ৭ জানুয়ারি এর প্রতিবাদে রাজু আহমেদ জুয়েল পক্ষ বিদ্যালয়ে মানববন্ধনের উদ্যোগ নেয়। এদিন বেলা ১১টায় শাহজাহান ইসলাম স্কুলে গিয়ে দেখতে পান যে রাজু আহমেদ জুয়েল ও অপর যুবদল নেতা আহসান হাবীব প্রধান শিক্ষিকার ঘরে নাস্তা করছেন। এসময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির সূত্রপাত ঘটে। এসময় উভয় পক্ষের লোকেরা বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে যুবদল নেতা রাজু আহমেদ জুয়েল, আহসান হাবীব, সাজু, উৎসব এবং শাহজাহান ইসলাম এবং তার পক্ষের ইউনিয়ন কৃষকদলের সহ-সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন, সাকিব, আরাফাত, আরমান ও রেশমা আক্তার নামে ১০ জন আহত হন। রেশমা আক্তারকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার মাথায় আটটি সেলাই দিতে হয়েছে। খবর পেয়ে নওহাটা ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর পরই স্কুলে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
জানতে চাইলে শাহজাহান ইসলাম জানান, যুবদল নেতা রাজু আহমেদ জুয়েলের সহযোগিতায় স্কুলের সাবেক সভাপতি ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন উজ্জলের ছেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য নওরোগ হোসেন উৎসব সকালে নওহাটার মোড় থেকে আগেই মানববন্ধনের ব্যানারটি তৈরি করে আনে। বিষয়টি জানতে পেরেই তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন। স্কুলে তার পূর্বপুরুষেরাই জমি দান করেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা রাণী সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রাজু আহমেদ জুয়েল ও আহসান হাবীব দলিল দেখাবেন বিষয়টি জানানোর জন্য তার অফিসে এসেছিলেন। তিনি তাদেরকে বিস্কুট খেতে দিয়েছিলেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, লিগ্যাল নোটিশ পাবার পর তিনি মৌখিকভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দাতা সদস্য শাহজাহান ইসলামকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছিলেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাফিয়া আক্তার অপু জানান, স্কুলের এত বিষয় আগে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। মারামারির সময় তাকে জানালে তিনি থানা পুলিশকে অবগত করান।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাশমত আলী জানান, ঘটনার বিষয়ে শাহজাহান ইসলামের পক্ষে দুইটি এবং রাজু আহমেদ জুয়েল পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে বিষয়টি মিমাংশার প্রক্রিয়া চলছে।
শুধুমাত্র একটি লিগ্যাল নোটিশেই কোন সদস্যকে বাদ দেয়া যায়না বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা। এজন্য কোন তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। বিষয়টি তদন্তের পরই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতো। তাকে বাদ না দেয়া পর্যন্ত মৌখিকভাবে স্কুলে যেতে নিষেধ করা যায়না বলেও মন্তব্য করেন তারা।