প্রকাশের সময় :
১০:৩৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
৯০৪
Spread the love
মহাদবেপুর দর্পণ, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ :
আজ শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ১৪৪৪ হিজরি সনের সফর মাসের ১২ তারিখ। মাসের দ্বিতীয় খুৎবা। আজ নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাজার জামেহ মসজিদে পেশ ইমাম, উপজেলা ইমাম ওলামা কমিটির সভাপতি ও জোয়ানপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জিল্লুর রহমান জুম্মার নামাজের আগে বাংলায় যে খুৎবা দেন তার সারাংশ মহাদেবপুর দর্পণের অগণিত পাঠক পাঠিকার জন্য পত্রস্থ করা হলো :
আজ ইমাম সাহেব পবিত্র কোরআন শরীফের গুরুত্ব বুঝিয়ে এটি শুদ্ধভাবে পড়তে হবে এবং পড়তে হলে শিখতে হবে বলে পরামর্শ দেন। বরাবরের মত তিনি পবিত্র কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে সেখান থেকে বিভিন্ন আয়াত পাঠ করে তার তরজমা করেন ও ব্যাখ্যা দেন।
তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ্র বানি। আল্লাহ্র কথা। হযরত জিব্রাইল (আ:) এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন তার কথাগুলো আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (দ:) এর কাছে পাঠিয়েছেন। কোরআনের গুরুত্ব বুঝতে হলে এটি যার বানি আগে তার গুরুত্ব বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, একজন সাহাবী নবী করিম (দ:) কে জিজ্ঞাসা করলেন যখন ওহি নাজেল হয়, তখন কেমন লাগে। রাসুল (দ:) বললেন, যখন জিব্রাইল (আ:) আল্লাহ্র ওহি নিয়ে আসেন তখন কখনো বিকট শব্দ হতে থাকে। আবার কখনো সাধারণ মানুষের বেশে আসেন। মা আয়েশা (রা:) বলেন, শীতের সময় যখন ওহি নাজেল হয়, তখন রাসুল (দ:) এর শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। যখন তিনি উটের উপর সওয়ার থাকেন, তখন ওহি নাজিল হলে ওহির ভরে উট মাটিতে বসে পড়তো। অর্থাৎ আল্লাহর ওহির ওজন অনেক বেশি। দাম অনেক বেশি। গুরুত্ব অনেক বেশি।
ইমাম সাহেব বলেন, আল্লাহর বানির গুরুত্ব বুঝতে হলে আগে আল্লাহকে বুঝতে হবে। তিনি কত বড়, কত দামি তা বুঝতে হবে। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ মহান। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর আরশে আজিম কত বড়। তিনি সব কিছুর মালিক। তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমাদের রিজিক দাতা। আমাদের পালন কর্তা। এটা আমাদেরকে মুখে স্বীকার করতে হবে, অন্তরে বিশ^াস করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তবেই আল্লাহর গুরুত্ব আমরা বুঝতে পারবো।
ইমাম সাহেব বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন আয়াতুল কুরসিতে নিজের পরিচয় নিজেই দিয়েছেন :
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, অর্থাৎ- আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক।
লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম- কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না।
লাহু মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ব- আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ইন্দাহু ইল্লা বিইজনিহ- তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে?
ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম- তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’- তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত।
ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব- তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। ওয়ালা ইয়াউ’দুহু হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম- আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।
ইমাম সাহেব বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই পবিত্র কোরআন সম্পর্কে কোরআন শরীফেই বলেন, য্যা-লিকাল কিতাবু, লা রাইবা ফি-অর্থাৎ এটি আল্লাহর কিতাব। এতে কোনই সন্দেহ নেই। আল্লাহ বলেন, আমি রমজান মাসে কোরআন নাজিল করেছি। ইন্না আনজালনাহু ফি লায়লাতিল ক্কাদর- আমি এ কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আওজিদ আলাইহি ওয়া রাত্তিলিল ক্কুরআনা তারতিলা-অর্থাৎ তদঅপেক্ষা বেশি কোরআন আবৃতি কর, ধীরে ধীরে ও স্পষ্টভাবে।
ইমাম সাহেব বলেন, কোরআন শরীফ শুদ্ধভাবে না পড়লে অনেক সময় তার অর্থ উল্টে যায়। যেমন, ক্কুল শব্দের অর্থ বল। কিন্তু এটিকে উচ্চারণের সময় ক্কুল না বলে কুল বললে তার অর্থ হবে খাও। আমরা মিলাদ শরীফে যে দরুদ পড়ি তার আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সায়্যিদিনা মাওলানা মোহাম্মাদ, ওয়া আলা আলী সায়্যিদিনা সাফিয়ানা মোহাম্মাদ। অর্থ হে আল্লাহ তুমি হযরত মোহাম্মদ (দ:) এর উপর রহমত নাজিল কর, তার বংশধরগণের উপরও রহমত নাজিল কর। কিন্তু আমরা ওয়া আলা আলী না বলে, যদি ওয়ালা আলী বলি তবে তার অর্থ হবে তার বংশধরগণের উপর রহমত নাজিল করোনা।
সুতরাং আমাদেরকে সহি শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন পাঠ করতে হবে। কোরআন ছাড়া আমাদের কোনক্রমেই চলবেনা। কোরআন পড়া না জানলে নামাজ হবেনা। কেননা প্রতি নামাজেই কোরআন পড়তে হয়। সুরা ফাতেহা ছাড়া কোন নামাজই হয়না।
ইমাম সাহেব বলেন, কোরআন চিরন্তন। মহান আল্লাহ যেমন অবিনশ^র। তেমনি তার বানিও অবিনশ^র। কেয়ামত পর্যন্ত কোরআন থাকবে। সুতরাং কোরআনকে কোনক্রমেই অবহেলা করা যাবেনা। হাসরের ময়দানে মহান আল্লাহ কোরআন অবমাননাকারিদের বলবেন তোমরা আমার কোরআন পড়নাই। তাহলে সে চোখ রেখে কি লাভ। কোরআন না পড়া চোখকে তখন ধ্বংস করা হবে। কোরআন অবমাননাকারিদের দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।
সবশেষে ইমাম সাহেব এই মসজিদে প্রতিদিন এশার নামাজের পর পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেয়া হয় বলে জানান। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ছয় মাস মেয়াদী নতুন ব্যাচ ভর্তি করানো হবে। আবালবৃদ্ধবনিতা যে কেউ বিনামূল্যে এখানে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়া শিখতে পারবেন।#