নওগাঁ সদর উপজেলার ডাফইল মৌজায় সরকারী ‘ক’ গেজেটভূক্ত অর্পিত সম্পত্তি ব্যাক্তি মালিকানায় খারিজ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এর সত্যতা স্বীকারও করেছেন কর্মকর্তারা। এমন কর্মকান্ডে বিভিন্ন মহলে ভূমি কর্মকর্তাদের নিয়ে চরম সমালোচনা তৈরী হয়েছে।
ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষিদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন আরজি নওগাঁর বাসিন্দা সন্তোষ কুমার দাসের ছেলে সঞ্জয় কুমার দাস।
অভিযোগে তিনি জানান, কর্মকর্তারা সরকারী স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ক্ষতি করেছেন। অভিযুক্ত কর্মর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের জোড় দাবি করেছেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার অন্তর্গত হাপানিয়া এর ডাফইল/৬১ মৌজার এসএ ১২৬ আরএস ৭০ নম্বর খতিয়ানভূক্ত এসএ ২২, আরএস ১৩ নম্বর দাগ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, এপ্রিল ৮, ২০১২ তারিখে প্রকাশিত অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তফশীলে ৯৯১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় ৪৭৭ নম্বর ক্রমিকে ৮৮৪/১৯৭৮ নং ভিপি কেসে ২৭ শতক সম্পত্তি ‘ক’ তফশীলে তালিকা ভূক্ত হয়েছে। এবং ৮৮৪/৭৮ নম্বর ভিপি কেসে লীজ প্রদান করা হয়েছে। উক্ত সম্পত্তি সরকারের পক্ষে লীজ দেওয়া হয়। বর্তমানে তা সরকারের পক্ষে লীজ গ্রহিতার দখলে আছে।
উক্ত সম্পত্তির ৭০ নম্বর খতিয়ানের হোল্ডিংয়ে এনিমি প্রপার্টি, ৮৮৪/৭৮ নম্বর ভিপি কেসে লীজ প্রদানের তথ্য ও অর্পিত প্রত্যর্পন ট্রাইবুনালে ৬০৯/১২ মামলা চলমান আছে মর্মে লাল কালি দিয়ে নোট দেওয়া আছে। এছাড়া দীর্ঘকাল যাবত ওই হোল্ডিংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরো জানান, প্রকাশিত ‘ক’ গেজেট ভ‚ক্ত ভিপি লীজ কেস চলমান রয়েছে। সম্পত্তি লীজ গ্রহিতার মাধ্যমে সরকারের দখলে এবং সংশ্লিষ্ট হোল্ডিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকার সত্ত্বেও অবৈধ ভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ন বেআইনীভাবে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে ২২৪৩/২০-২১ নম্বর খারিজ কেসের আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।
অভিযোগের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, ডাফইল মৌজার ২৮০ নম্বর খতিয়ানে ১৩ নম্বর দাগে মোট ২৭ এর মধ্যে ৪ শতাংশ জমি হাট নওগাঁর বাসিন্দা মোমতাজ হোসেনের নামে খারিজ করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলাম আদেশটি দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্বে রয়েছেন।
অবৈধভাবে খারিজ করার জন্য তৎকালীন সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান ও হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনকে দায়ি করেছেন অভিযোগকারী সঞ্জয় কুমার দাস। খারিজের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমতাজ হোসেন পরে জানাবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো: নাজিম উদ্দিন জানান, ভূল বশত প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারী জমিটি খারিজ হয়ে গেছে। সামান্য জমি তাই খুবএকটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তবে বিনিময়ে টাকা গ্রহনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। আর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইতোপূর্বে হয়তো ভূলক্রমে তৎকালীন কর্মকর্তা খারিজটির আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, অতি সম্প্রতি সঞ্জয় কুমার দাসের একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। খারিজটি বাতিল করা হবে। নিয়োগ প্রদানকারী কর্মকর্তা উক্ত অভিযোগের তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানান তিনি।
তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং বর্তমানে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এসিল্যান্ড অফিসে ৮ মাস আগে কর্মরত ছিলাম। ওখানে প্রতিদিন অনেক শুনানি হয়েছে, অনেক কেস হয়েছে। এতোদিন পর এই ধরনের কোন ঘটনার কথা আমার মনে পরছে না, যানাও নেই। কোন অভিযোগও পাইনি।’#