নওগাঁর মহাদেবপুরে হত্যা মামলা দায়েরের মাত্র একদিনের মধ্যেই থানা পুলিশ হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে দুজনকে আটক করেছে।
আটকরা হলো, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের সফাপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে এখলাছ হোসেন (২১) ও হাতুড় ইউনিয়নের বনগ্রাম হটাৎপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে ময়নুল ইসলাম (৩০)। থানা পুলিশের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
মামলার বাদি উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের খোর্দ্দকালনা গ্রামের মৃত জসীম উদ্দিনের ছেলে আহাদ আলী জানান, তার ছেলে হাসান আলী (১৭) গত শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় তার অটোচার্জার ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরদিন সকালে হাতুড় ইউনিয়নের গোফানগর শাবইল মোড়ে সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম বাবুলের বোরো ধান ক্ষেতের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়। আহাদ আলী সোমবার এব্যাপারে মহাদেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে এসআই ছাইফুল ইসলামকে মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় মহাদেবপুর থানার একটি তদন্ত দল মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত দল জানতে পারে যে, সোমবার দুপুরে উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের ছাতুনতলী হাটে রক্তমাখা একটি চার্জার ভ্যান দেখা গেছে। তদন্ত দল সাথে সাথে সেখানে উপস্থিত হয়ে রক্তমাখা চার্জার ভ্যান জব্দ করেন ও এর চালক ময়নুল ইসলামকে আটক করেন। পুলিশকে সে জানায়, এখলাছ হোসেন তাকে ভ্যানটি বিক্রি করার জন্য দিয়েছে। সেটা সে বিক্রি করার জন্য ছাতুনতলী হাটে এনেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোমবার বিকেলে মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের মদনচক গ্রাম থেকে এখলাছকে আটক করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এখলাছ চার্জার ভ্যান চালক হাসান আলীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, সে একজন মাদকসেবি। নেশার টাকা যোগার করতে তার একজন সহযোগীসহ চার্জার ভ্যানটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভাড়া নিয়ে সাবইল মোড়ে নির্জন এলাকায় গিয়ে হাসান আলীকে পিছন থেকে ছুড়ি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। তার মৃতদেহ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাইফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আসামীরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর মাত্র এক মাস আগে ২১ জানুয়ারি থানা পুলিশ বর্তমান ঘটনাস্থলের অদূরে একই ইউনিয়নের মহিষবাথান মোড়ের পাশে হোসেনপুর বালু পয়েন্ট এলাকার একটি হলুদ ক্ষেত থেকে মহসীন আলী (২২) নামে রাইগাঁ ইউনিয়নের আতুড়া গ্রামের অপর এক চার্জার ভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার করে। এর এক সপ্তাহ আগে ১৩ জানুয়ারি তিনি নিখোঁজ হন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করে তার ভ্যান ছিনতাই করা হয়। এই মামলায়ও থানা পুলিশ হত্যাকারী ও ভ্যান ক্রেতাকে আটক করে।
এছাড়া হাসান আলী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের বিষয়েও সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। পুলিশ সুপার এতে বক্তব্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাবিনা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সুরাইয়া খাতুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মহাদেবপুর সার্কেল) এ টি এম মাইনুল ইসলাম, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ, নওগাঁ সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।#