নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর ও বিভিন্ন প্রত্যন্ত পল্লীর বাজারগুলোতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ভূয়া ব্যান্ডরোলযুক্ত নকল গোল্ডলিফ সিগারেট। সাধারণ ক্রেতাদের চোখ ফাকি দিয়ে একটি প্রতারক চক্র নকল সিগারেটের রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা চলে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। আর বৈধ সিগারেট কোম্পানীগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। ইমেজ নষ্ট হচ্ছে তাদের ব্র্যান্ডের। দিন দিন এ অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভোক্তাদের।
নকল গোল্ডলিফ সিগারেটের বিকিকিনি নিয়ে ক্রেতাদের সাথে বিক্রেতাদের প্রায়ই বচসা হয়। সম্প্রতি উপজেলা সদরের মডেল স্কুল গেট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে হট্টগোল শুনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নকল সিগারেট বিক্রি নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন ক্রেতা অভিযোগ করেন যে, সুব্রত এর চায়ের দোকান থেকে ২১০ টাকা দিয়ে ২০ শলাকার এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেট কেনেন। কিন্তু দোকানি তাকে নকল সিগারেট দিয়েছেন। আসল প্যাকেটের নিচের অংশ খোদাই করে একটি নম্বর লেখা থাকে। দোকানি তাকে যে সিগারেটের প্যাকেট দিয়েছেন তাতে সেই নম্বর নেই। জানতে চাইলে ওই চা দোকানি জানান, উপজেলা সদরের দুলালপাড়া এলাকার কর্ণফুলী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এর মাঠকর্মীর কাছ থেকে সিগারেটগুলো কিনেছেন।
ওই সমিতির অফিসে গেলে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মোকলেছার রহমান নিজেকে সাবেক সেনা ও র্যাব সদস্য দাবি করে জানান, লাভের আশায় তারা গোল্ডলিফ সিগারেট কিনে রেখেছিলেন। এখন তা কর্মীদের মাধ্যমে বাজারজাত করছেন। তবে কোথায় থেকে সিগারেটগুলো কিনেছেন তা জানাতে পারেননি। ওই সমিতিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফুল ইসলাম জানান, তাদের মাঠকর্মীরা ঋণ আদায়ের পাশাপাশি সিগারেট, গুল ও চা প্রভৃতি বাজারজাত করেন।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ও তাদের পরিবেশকের মহাদেবপুর প্রতিনিধি সাব্বির আহমেদ জানান, নকল সিগারেটের শলাকা হাতে নিলে দেখা যায় ব্র্যান্ডের নাম লেখা অমসৃণ ও গাঢ় রঙয়ের। আঙুল দিয়ে নকল শলাকায় চাপ দিলে বোঝা যায় আাসল শলাকার চেয়ে নরম। আসল প্যাকেটের নিচের অংশ খোদাই করে একটি নম্বর লেখা থাকে। কিন্তু নকল প্যাকেটে তা থাকেনা।
দোকানীরা জানান, দামে সস্তা হওয়ায় তারা ওই সমিতির মাঠকর্মীদের কাছ থেকে সিগারেট কেনেন। কয়েকজন ভোক্তা জানান, হুবহু আসল প্যাকেট থেকে নকল সিগারেটের শলাকা বের করে দেওয়া হয়। তাই সহজে বোঝা যায় না।
জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হীরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুল হাকিম জানান, এমনিতেই তামাক শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তার উপর নিম্নমানের তামাক দিয়ে তৈরি নকল সিগারেট স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।#