মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ১৪ মে ২০২১ :
শুক্রবার (১৪ মে) দুপুরে নওগাঁর মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ উপজেলা সদরের আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত রাবেয়া পল্লীতে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে খাবর বিতরণ করেন।
দুপুর ১২টায় এ উপলক্ষে সেখানে আয়োজিত সমাবেশে ওসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দেড় শতাধিক প্রতিবন্ধীর মধ্যে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করে তাদের সাথে পবিত্র ঈদের অনাবিল আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
রাবেয়া পল্লীর পরিচালক ওবায়দুল হক বাচ্চু এতে সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে মহাদেবপুর থানার এসআই এএসএম রায়হান আলম সরদার, এসআই জাহাঙ্গীর আলম, এসআই সামসুল আলম প্রমুখ তার সঙ্গে ছিলেন।
ওসি জানান, পবিত্র ঈদের আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের সাথে কিছুটা ভাল সময় কাটালেন। মহাদেবপুর থানার মানবিক পুলিশ সদস্যরা তাদের নিজেদের অর্থে সমাজের এই অবহেলিত অসহায় জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য ঈদ আনন্দের আয়োজন করেছেন। তাদের উন্নয়নে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো: আব্দুল মান্নান মিয়া বিপিএম এর নির্দেশনায় পবিত্র রমজান মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন মহাদেবপুর থানার পুলিশ সদস্যরা তাদের নিজেদের অর্থে দু:স্থদের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র ঈদের দিন এই আয়োজন করা হয়।
বাবেয়া পল্লীর পরিচালক ওবায়দুল হক বাচ্চু বলেন, তিনি প্রথম ১৯৯৭ সালে বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তোলেন। জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে ২০০০ সালে সেটি নিবন্ধন পায়। সেই সুবাদে তিনি জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হবার পর বুঝতে পারেন যে, প্রতিবন্ধীরা সমাজে অসহায়, অবহেলিত, অনগ্রসর, সুবিধা বঞ্চিত, আদর ভালবাসাহীন মানুষ। এই শিশুদের শিক্ষার মূল ধারায় আনার জন্য ২০১১ সালে তিনি মহাদেবপুর অটিষ্টিক প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নওগাঁ জেলায় এটি প্রথম প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যে অটিষ্টিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন, সেই আলোকেই এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে দুটো ভাগ রয়েছে। একটি এনডিডি ও অপরটি নন এনডিডি। তাঁদের এই বিদ্যালয়টি এনডিডি। অর্থাৎ নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার। চার ক্যাটাগরির প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে এই বিদ্যালয়। অটিজম, কাউন্ট সিন্ডোম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও সেরিরাল পারসি। এখানে ১৪২ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। ১৭ জন শিক্ষক তাদেরকে পাঠদান করে থাকেন। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার মূল ধারায় আনার জন্য এখানে প্র্যাক প্রাথমিক, প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজের বোঝা না হন, সেজন্য তাদেরকে মিষ্টির ঠোঙা তৈরি, সেলাইয়ের কাজ শেখানো প্রভৃতির মাধ্যমে সম্মানজনক জীবিকার সাথে তাদেরকে সম্পৃক্ত করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় ও তাদের অনুরুপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ওবায়দুল হক বাচ্চু বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার। স্থানীয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তার বিদ্যালয়ের ৪৬ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পায়। তিনি বলেন, এই প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই স্বজন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা এই স্কুলে আসেন। তাদের আনা নেয়ার জন্য পরিবহণের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি দেশে বিদেশের সুভাকাঙ্খীদের প্রতি আহ্বান জানান।#