নওগাঁ ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

মহাদেবপুরে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু রাখার ভীড় (ভিডিও)<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ :

নওগাঁর মহাদেবপুরে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু রাখার জন্য চাষীরা ভীড় জমাচ্ছেন। এবার আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় চাষীরা ভবিষ্যতের জন্য তড়িঘড়ি করে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করছেন।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভীমপুর নামক স্থানে উপজেলার একমাত্র ফয়েজ উদ্দীন কোল্ড ষ্টোরেজ (প্রা:) লি: এ গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে ভুটভুটি, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, মিনি ট্রাকের সাড়ি। সবগুলোই আলুতে ভর্তি। দূর-দুরান্ত থেকে আলু এনেছেন তারা। কয়েকজন চাষীর সাথে কথা হয় সেখানে।

উপজেলার ভীমপুর ইউনয়নের চকগৌরী গ্রামের আলুচাষী খোদাবক্সের ছেলে হারুন অর রশিদ জানান, তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ৭০ মণ আলু তুলেছেন। এরমধ্যে কিছু বাজারে বিক্রি করেছেন। বাকি ৬০ বস্তা আলু এনেছেন এই কোল্ড ষ্টোরেজে রাখতে।

পত্নীতলা উপজেলার বাকরইল ইউনিয়নের চান্দইল গ্রামের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম জানান, তিনি এবার তার তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ২শ’ মণ আলু পেয়েছেন। তার ও প্রতিবেসীদের মোট ৬শ’ বস্তা আলু এই কোল্ড ষ্টোরেজে রাখার জন্য এনেছেন।
ধামইরহাট উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের ঝড়ু মন্ডলের ছেলে মোতাররফ হোসেন মন্ডল জানালেন, তিনি নিজের ২৫ বস্তাসহ প্রতিবেসীদের মোট ২১০ বস্তা আলু এখানে সংরক্ষণের জন্য এনেছেন।

তাদের মতে, গতবার আশেপাশের প্রতিটি কোল্ড ষ্টোর আলুতে পরিপূর্ণ ছিল। তারপরও আলুর সংকট দেখা দেয়। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় আলু। তাই চাষীরা এবার অনেক বেশী জমিতে আলুর চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভাল। একসাথে বেশী আলু বাজারে ওঠায় আলুর দাম কমে ১০ টাকা কেজিতে নেমেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে তারা এবার আলু সংরক্ষণ করছেন।

হিসেব কষে তারা জানান, এখন আলু বিক্রি করলে তাদের উৎপাদন খরচই উঠবেনা। কিন্তু উৎপাদন খরচসহ ছয় মাস পর এই কোল্ড ষ্টোর থেকে আলু বের করতে কেজিতে মোট খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৬ টাকা। কিন্তু সেসময় আলু বিক্রি হবে প্রতি কেজি কমপক্ষে ৩০ টাকায়। কখনোবা আরও বাড়তে পারে। ফলে তাদের লাভ হবে দ্বিগুণ বা তারও বেশী।

এই প্রতিষ্ঠানটি গড়েছিলেন নওগাঁর গণ-মানুষের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিল। নাম রেখেছেন তার মরহুম পিতার নামে। এটি এখন পরিচালনা করেন তাঁর ছেলে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।

এর ম্যানেজার আব্দুল মালেক মোল্লা জানালেন, এই কোল্ড ষ্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখ বস্তা। ইতিমধ্যেই এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৮ বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য চাষীরা বুকিং দিয়েছেন। আলু নেয়া শুরু হয়েছে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী। ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আলু নেয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৪৮ বস্তা। আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই সব আলু সংরক্ষণের জন্য নেয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।

ম্যানেজার জানান, এই কোল্ড ষ্টোরেজে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, বদলগাছী, ধামইরহাট, পতœীতলা, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলার আলু আনা হয়। এছাড়া জয়পুরহাট জেলা থেকেও আলু আসে। এই ষ্টোরের আলুর মান ভাল থাকায় এখানে মূলত: কৃষকের বীজ আলু রাখা হয়। তবে বিক্রির জন্য আলুও রাখা হয়। গতবছর কক্সবাজার এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে বীজ আলু এখানে রাখা হয়েছিল। এছাড়া রাজশাহীর মোহনপুর ও তানোর থেকেও এখানে ২৫ হাজার বস্তা বীজ আলু রাখা হয়। ২০১১-‘১২ সালে এখান থেকে আলু বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিক্রির জন্য রাখা আলুর ভাড়া নেয়া হয় বস্তাপ্রতি ২১০ টাকা আর বীজ আলু বস্তাপ্রতি ২৬০ টাকা। কারণ বিক্রির আলু বের করা শুরু হয় জুন মাস থেকে। আর বীজ আলু বের করা হয় নভেম্বরে।

ম্যানেজার আব্দুল মালেক মোল্লা অভিযোগ করেন যে, আগে তারা প্রতিবস্তায় ৮৫ কেজি আলু রাখতেন। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে তারা প্রতিটি ৫০ কেজির বস্তাতে আলু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু চাষীরা প্রতি বস্তায় ৫৫ কেজি থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত আনেন। বস্তায় আলু বেশী থাকলেও ভাড়া বেশী নেন না। বাজারে ৫০ কেজি মাপের বস্তা পাওয়া যায়না বলে চাষীরা জানান। সংশ্লিষ্ট জুটমিল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই অধিক মুনাফা লাভের জন্য চটের বড় বস্তা তৈরী করে থাকে। এই বিষয়টি দেখার কেউ নেই বলেও ম্যানেজার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে এখানে কমপক্ষে ১৫ হাজার বস্তা কম ধরবে। এতে কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এখানে আলু বের করে বাছাই করার কাজে অনেক নারী শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। তারা এত বড় বস্তা বইতে পারেন না। তাদের দিয়ে বড় বস্তা বের করাও বেআইনী।#

আপলোডকারীর তথ্য

মহাদেবপুরে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু রাখার ভীড় (ভিডিও)<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ০৩:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১ :

নওগাঁর মহাদেবপুরে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু রাখার জন্য চাষীরা ভীড় জমাচ্ছেন। এবার আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় চাষীরা ভবিষ্যতের জন্য তড়িঘড়ি করে কোল্ড ষ্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করছেন।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভীমপুর নামক স্থানে উপজেলার একমাত্র ফয়েজ উদ্দীন কোল্ড ষ্টোরেজ (প্রা:) লি: এ গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশে ভুটভুটি, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, মিনি ট্রাকের সাড়ি। সবগুলোই আলুতে ভর্তি। দূর-দুরান্ত থেকে আলু এনেছেন তারা। কয়েকজন চাষীর সাথে কথা হয় সেখানে।

উপজেলার ভীমপুর ইউনয়নের চকগৌরী গ্রামের আলুচাষী খোদাবক্সের ছেলে হারুন অর রশিদ জানান, তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ৭০ মণ আলু তুলেছেন। এরমধ্যে কিছু বাজারে বিক্রি করেছেন। বাকি ৬০ বস্তা আলু এনেছেন এই কোল্ড ষ্টোরেজে রাখতে।

পত্নীতলা উপজেলার বাকরইল ইউনিয়নের চান্দইল গ্রামের মৃত সামসুদ্দিনের ছেলে আবুল কালাম জানান, তিনি এবার তার তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ২শ’ মণ আলু পেয়েছেন। তার ও প্রতিবেসীদের মোট ৬শ’ বস্তা আলু এই কোল্ড ষ্টোরেজে রাখার জন্য এনেছেন।
ধামইরহাট উপজেলার রাঙ্গামাটি গ্রামের ঝড়ু মন্ডলের ছেলে মোতাররফ হোসেন মন্ডল জানালেন, তিনি নিজের ২৫ বস্তাসহ প্রতিবেসীদের মোট ২১০ বস্তা আলু এখানে সংরক্ষণের জন্য এনেছেন।

তাদের মতে, গতবার আশেপাশের প্রতিটি কোল্ড ষ্টোর আলুতে পরিপূর্ণ ছিল। তারপরও আলুর সংকট দেখা দেয়। ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় আলু। তাই চাষীরা এবার অনেক বেশী জমিতে আলুর চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভাল। একসাথে বেশী আলু বাজারে ওঠায় আলুর দাম কমে ১০ টাকা কেজিতে নেমেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে তারা এবার আলু সংরক্ষণ করছেন।

হিসেব কষে তারা জানান, এখন আলু বিক্রি করলে তাদের উৎপাদন খরচই উঠবেনা। কিন্তু উৎপাদন খরচসহ ছয় মাস পর এই কোল্ড ষ্টোর থেকে আলু বের করতে কেজিতে মোট খরচ হবে সর্বোচ্চ ১৬ টাকা। কিন্তু সেসময় আলু বিক্রি হবে প্রতি কেজি কমপক্ষে ৩০ টাকায়। কখনোবা আরও বাড়তে পারে। ফলে তাদের লাভ হবে দ্বিগুণ বা তারও বেশী।

এই প্রতিষ্ঠানটি গড়েছিলেন নওগাঁর গণ-মানুষের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের মহান সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিল। নাম রেখেছেন তার মরহুম পিতার নামে। এটি এখন পরিচালনা করেন তাঁর ছেলে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।

এর ম্যানেজার আব্দুল মালেক মোল্লা জানালেন, এই কোল্ড ষ্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখ বস্তা। ইতিমধ্যেই এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৮ বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য চাষীরা বুকিং দিয়েছেন। আলু নেয়া শুরু হয়েছে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী। ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত আলু নেয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৪৮ বস্তা। আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই সব আলু সংরক্ষণের জন্য নেয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।

ম্যানেজার জানান, এই কোল্ড ষ্টোরেজে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, বদলগাছী, ধামইরহাট, পতœীতলা, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলার আলু আনা হয়। এছাড়া জয়পুরহাট জেলা থেকেও আলু আসে। এই ষ্টোরের আলুর মান ভাল থাকায় এখানে মূলত: কৃষকের বীজ আলু রাখা হয়। তবে বিক্রির জন্য আলুও রাখা হয়। গতবছর কক্সবাজার এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে বীজ আলু এখানে রাখা হয়েছিল। এছাড়া রাজশাহীর মোহনপুর ও তানোর থেকেও এখানে ২৫ হাজার বস্তা বীজ আলু রাখা হয়। ২০১১-‘১২ সালে এখান থেকে আলু বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বিক্রির জন্য রাখা আলুর ভাড়া নেয়া হয় বস্তাপ্রতি ২১০ টাকা আর বীজ আলু বস্তাপ্রতি ২৬০ টাকা। কারণ বিক্রির আলু বের করা শুরু হয় জুন মাস থেকে। আর বীজ আলু বের করা হয় নভেম্বরে।

ম্যানেজার আব্দুল মালেক মোল্লা অভিযোগ করেন যে, আগে তারা প্রতিবস্তায় ৮৫ কেজি আলু রাখতেন। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে তারা প্রতিটি ৫০ কেজির বস্তাতে আলু রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু চাষীরা প্রতি বস্তায় ৫৫ কেজি থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত আনেন। বস্তায় আলু বেশী থাকলেও ভাড়া বেশী নেন না। বাজারে ৫০ কেজি মাপের বস্তা পাওয়া যায়না বলে চাষীরা জানান। সংশ্লিষ্ট জুটমিল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই অধিক মুনাফা লাভের জন্য চটের বড় বস্তা তৈরী করে থাকে। এই বিষয়টি দেখার কেউ নেই বলেও ম্যানেজার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে এখানে কমপক্ষে ১৫ হাজার বস্তা কম ধরবে। এতে কর্তৃপক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এখানে আলু বের করে বাছাই করার কাজে অনেক নারী শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। তারা এত বড় বস্তা বইতে পারেন না। তাদের দিয়ে বড় বস্তা বের করাও বেআইনী।#