মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ, এম, সাঈদ টিটো, নওগাঁ, ২৯ অক্টোবর ২০২০ :
বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে খ্যাত নওগাঁর পোরশা উপজেলাসহ এর আশপাশ উপজেলাগুলোতে এক সময় যে জমিতে শুধুমাত্র ধান চাষ হতো, এখন ধানের পাশাপাশি ঐ একই জমিতে চাষ হচ্ছে আম।
ধান চাষের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বড় বড় আমের বাগান। একই জমিতে ধানের পাশাপাশি আমের বাগান এখন সবুজ দৃষ্টিনন্দন উচুঁ নিচু বরেন্দ্রভূমি। দিন যতই যাচ্ছে এ অঞ্চলে আমের আবাদ ততই বাড়ছে। আমের ফলনও হচ্ছে ব্যাপক। আবাদী জমিতে সারি সারি আম গাছের বাগান যেন সৌন্দর্যের পাশাপাশি সবুজ ছাঁয়া এনে দিয়েছে।
ধান চাষের পাশাপাশি আম নিয়ে এখন নতুন আশায় বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক। চলতি মৌসুমে কৃষকরা ধান নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কিছুদিন পরেই ঝুঁকে পড়বেন আমে।
এখন কৃষক আমন ধানে কীটনাশক স্প্রে আর ধানের পরিচর্যা করা নিয়ে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মাস খানেক পরেই আমন কেটে ঘরে তোলা আর মাড়াইয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়বেন এ অঞ্চলের কৃষক। ধান ঘরে তোলা হলেই একই জমির আম গাছগুলোতে ভিটামিন ও কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যাস্ত হবেন চাষীরা। ইতোমধ্যে গাছের খাদ্য হিসাবে বাগানের প্রতিটি গাছের গোড়ায় বিভিন্ন প্রকারের সার প্রয়োগ করেছেন। এখন শোভা পাচ্ছে আম গাছের নিচে ধান গাছ।
পোরশা উপজেলার চারিদিকে এখন শুধু গাছ আর গাছ। এক একেকটি বড় বড় আম বাগান। রাস্তার দু’ধারে তাকালেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন এইসব আমের বাগান। বাগানের দিকে তাকালেই যেন নজর কাড়ে সবার। মৌসুমে প্রতিবছর এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা হয় পোরশার আম।
বর্তমানে পোরশায় অসংখ্য জাতের আম উৎপাদন হচ্ছে। সবগুলোই বাহারি রসালো এবং অনেক সুস্বাধু ও সুমিষ্ট। আমগুলোর মধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, ফজলি, আ¤্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি খিরসা, লখনা, মহোনভোগ, বারি-থ্রী ও বারি-ফোর অন্যতম।
আমকে ঘিরে আমের মৌসুমে এলাকায় বেশ আনন্দ উৎসব তৈরি হয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজার এবং মোড়ে গড়ে উঠে কয়েকশ আমের আড়ৎ। সরাসরি গাছ থেকে বা বিক্রেতাদের নিকট থেকে আম কেনার জন্য এখানে আসেন রাজধানী ঢাকা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। স্থানীয় বেকারদের কয়েকমাসের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কাজ না থাকা দিনমজুরদের কাজের সুযোগ মিলে। সব মিলিয়ে আমের মৌসুমে এলাকায় যেন আনন্দ উৎসবের আমেজ দেখা দেয়।
উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে প্রায় ২০বছর পূর্ব থেকে আমগাছ রোপন করা শুরু হয়। এতে সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়ে ২০০৫ সাল নাগাত থেকে এ উপজেলার কৃষকরা ব্যাপকভাবে আম গাছ রোপন করা শুরু করেন। বর্তমান সময়েও কৃষকরা ব্যাপকভাবে আমগাছ রোপন করা অব্যাহত রেখেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমন চাষ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বন্যায় ৮৩ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। চলতি মৌসুমে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৬টন ধান। যার সর্বমোট ধান উৎপাদন হবে ১ লক্ষ টন।
অপরদিকে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আম চাষ হয়েছে প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছে ১লক্ষ ২০হাজার মেট্রিক টন আম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহফুজ আলম জানান, যেমন এ এলাকা ধানের জন্য বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত ধান দেশের সকল স্থানের খাদ্যের চাহিদা মিটায়। ঠিক তেমনি এ উপজেলা আমের জন্যও বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত আম দেশের সকল জেলার মানুষের চাহিদা মিটাবে। তিনি মনে করেন, পোরশা উপজেলায় এক সময় শতভাগ জমিতে আম চাষ হবে। এখানকার মাটি আমের জন্য বেশ উপযোগী। এ উপজেলার আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের সকল জেলায় এর চাহিদা ভাল রয়েছে বলেও তিনি জানান।#