তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন মার্চের ২০ তারিখ। আর স্বাস্থ্য কর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করলো এপ্রিলের ২৪। মাঝের এই ১ মাস ৪ দিন তো বটেই, বরং যেদিন তার করোনা পজেটিভ রেজাল্ট আসলো সেদিন সকাল পর্যন্ত ইচ্ছামত ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কেউ তাকে বাধা দেয়নি। নিজেও ঘরে থাকেননি। ২৯ এপ্রিল সকালে তিনি মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে সেলুনে চুল কেটেছেন।
প্রশাসন অবশ্য ওই সেলুন লকডাউন করেছে। ৪ নরসুন্দরসহ ১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনেও পাঠিয়েছে। শুধু এই শেষ দিনের ব্যবস্থা নিলেন। কিন্তু আগের ১ মাস ৮ দিনে যাদের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কি হবে ?
মেয়েটির বেলায়ও তাই। তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন ৭ এপ্রিল। স্বাস্থ্য কর্মীরা ২২ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করেন। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। এদিনই জানা গেল তার করোনা পজেটিভ।
ভাবা যায় ? এই দুজন আরো কত জনের ক্ষতির কারণ হয়েছেন ! স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, সংশ্লিষ্টরা যদি সময়মত তাদের নমুনা সংগ্রহ করতেন, তবে তারা এত বেপরোয়া ঘুরে বেড়াতে পারতেন না। অন্য মানুষদের সংস্পর্শেও আসতেন না।
এই চরম কান্ডজ্ঞানহীন কাজের পুরস্কার কি হবে ? কে দেবে সে পুরস্কার ?
মহাদেবপুরের প্রশাসন প্রথম থেকেই তাদের প্রতি খুবই সমীহবান। একবার আমরা ক’জন সাংবাদিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখতে পাই, একজন মা তার কোলের বাচ্চাকে নিয়ে কাঁদছেন, আর টিউবওয়েলের পারে বসে বাচ্চাকে পটাশের পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে ভূল করে কীটনাশক পান করেছে। কিন্তু এখানকার ডাক্তাররা তাকে দেখতেও চাচ্ছেন না। তাকে নিয়ে নওগাঁ যেতে বলেছেন। বিষয়টি আমরা লাইভ দেখাতে লাগলে বাধ্য হয়ে তাকে ভর্তি করে নেয়া হয়।
এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কাছে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফোন আসতে থাকে, সে লাইভ ভিডিওটি রিমুভ করার জন্য। যুক্তি দেখানো হয়, করোনার সময় স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সব রকমভাবে উৎসাহীত করতে হবে।
নিশ্চয়ই। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং সারা বিশ্বেই করোনা রোগীদের সেবা করতে গিয়ে ডাক্তাররা আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন। মহৎ তারাই। বীর তারাই। উই সেলুট দেম। এইতো আমাদের রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও নার্স, স্বামী সন্তান, ড্রাইভার, এমএলএসএস আক্রান্ত হয়েছেন। তারা কাজ করেছেন জন্যই আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু যারা স্বভাব সুলভভাবে ফাঁকি দিচ্ছেন, আর এই ফাঁকির জন্যই সুস্থ্য মানুষেরা শংকায় পড়ছেন, সেসব কর্মীদের জন্য শ্রদ্ধা, ভক্তি, সম্মান, ভালবাসা, নাকি অন্য কিছু পাওনা থাকছে ?
আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমাদের একটি অত্যন্ত শক্তিশালী, দু:সাহসী স্বাস্থ্য বাহিনী চাই। যাদের থাকতে হবে দেশপ্রেম আর মানুষের মত মমতা। যারা দায়িত্ব, কর্তব্যের উর্ধে উঠে, মানবিক হয়ে উঠবেন। আর এমন কর্মীদের জন্য অবশ্যই সার্বিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে।
মহাদেবপুরে করোনা এসে গেছে। একে এখন আর অবহেলা করার সুযোগ নাই। যে কোন মূল্যে প্রয়োজনীয় সকলের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবারাহ করা হোক। ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি আমাদের হয়েছে, এখন অতি কঠোরতার মাধ্যমে তা পুশিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
—-কিউ,এম,স্ঈাদ টিটো ১/৫/২০২০