মহাদেবপুর দর্পণ, কাজী সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ :
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহাদেবপুর-মাতাজীহাট পাকা সড়কের নাটশাল পার হয়ে মাসুদের অটোবয়লারের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে মাত্র এক কিলোমিটার গেলেই হায়দরাবাদ গ্রাম। গ্রামের প্রায় শেষ মাথায় সুরম্য প্রাসাদসম পাকাভবনে মসজিদ আর একটি মাদ্রাসা। পাশেই ছাত্রদের খেলার জায়গা আর কবরস্থান।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টায় সরেজমিনে সেখানে যেতেই চোখে পড়লো অসংখ্য শিশু শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআন হেফজতে ব্যস্ত। একজনের কাছ থেকে হেফজ করা কোরআন দ্রুত তেলওয়াত করা শুনছিলেন মাদ্রাসার মোহতামিম। খুব অল্প বয়স। কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। তারপর তাকে থামিয়ে দিয়ে কথা বললাম। মান্দা উপজেলার গোটগাড়ি গ্রামের গোলাম মোস্তফা। গত সাত মাস থেকে আগে নাজরানা শিখেছে, এখন শিখছে হেফজ। পাঁচ পাড়া হেফজ হয়ে গেছে তার। বড় হয়ে একজন হুজুর হতে চায় সে। আর একজনের নাম মোহাম্মদ রাকিব। বাড়ি দিনাজপুর। সেখানকার এক হুজুর তাকে এখানে এনে রেখে গেছেন। আট পাড়া কোরআন শরিফ হেফজ করেছে সে। মোস্তাকিম সিয়াম। এসেছে নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর থেকে। ছয় পাড়া হেফজ করেছে। নজিপুরের ছেলে মমিনুল ইসলাম। নাজরানা পড়ে সে। এলাকার শিশুরাও রয়েছে তাদের সাথে।
মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আহসান হাবীব জানালেন গত তিন বছর থেকে তিনি এখানে আছেন। বর্তমানে এখানে ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে আবাসিক। এরা এতিম ও দু:স্থ। এছাড়া প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে অসংখ্য শিশু মকতবে এসে কোরআন শরিফ পড়া শিখে। তিনি জানান, এসব শিশুদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম মোদাচ্ছের আলীর দুই ছেলে মাসুদ রানা ও সাজেদুর রহমান সাজু। গ্রামের লোকেরাও সহযোগিতা করে। গত দুই বছরে মাত্র একবার আট হাজার টাকার সরকারি অনুদান পেয়েছেন। অন্যান্য ক্বওমি মাদ্রাসা ও এতিম খানায় যেমন ক্যাপিটেশন গ্রান্ট বরাদ্দ দেয়া হয়, এখানে তা দেয়া হয়না। এবিষয়ে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
ফেরার সময় রাস্তায় দেখা হলো রেজাউল করিম নামে গ্রামবাসীর সাথে। তিনি জানালেন এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মরহুম মোদাচ্ছের আলী। তার ছেলেরা এটার উন্নয়ন করেছেন। আর মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাই মাসুদ ও সাজু। তারা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি। রেজাউল করিম নিজেকে ওই মাদ্রাসা কমিটির সহ-সেক্রেটারি হিসেবে পরিচয় দিলেন। তিনি জানালেন, মরহুম মোদাচ্ছের আলীর অটো বয়লারের ম্যানেজার ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করে গেছেন। পাশের গ্রামের মসজিদ নির্মাণের সময় ১৮২ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছেন। নির্মাণ করেন গ্রামের নতুন ঈদগাঁহ। তার মৃত্যুর পর মাসুদ ও সাজু আরো জমি কিনে ঈদগাঁহ বড় করেন। গ্রামবাসীও সহাযোগিতা করেন। চারিদিকে সুরম্য ওয়াল তুলে নান্দনিক সুন্দর করে তোলেন এ ঈদগাঁহ। এখন মাদ্রাসার দুই হুজুর আর এক এতিম তার বাসায় খাওয়া দাওয়া করেন। তবে তাদের বেতন দেন মাসুদ ও সাজু। এছাড়া মাদ্রাসার পুরো খরচ বেশিরভাগই চালান দুই ভাই। গ্রামের লোকেরাও সহযোগিতা করেন। মাদ্রাসার নামে জমিও কিনছেন তারা। সেখানে নতুন ভবনও তৈরি হবে। রেজাউল কবির জানালেন, মাসুদ ও সাজু এখনও অনেক মসজিদ মাদ্রাসায় মুক্তহস্তে দান করেন। কয়েকটি মাদ্রাসায় প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল দান করেন।
রাস্তায় দেখা হলো মতিউর রহমান নামে আরো এক গ্রামবাসীর সাথে। তিনি জানালেন, প্রচার বিমুখ হলেও মাসুদ ও সাজু দুই ভাই খুবই সামাজিক, সমাজসেবক আর দানশীল। গ্রামে কোন মেয়ের বিয়ে লাগলে তারা দুই ভাই সবাইকে খাওয়ান। বিয়ের যাবতীয় খরচ করেন। এছাড়া লেখাপড়া চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও প্রচুর দান করেন।