নওগাঁ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

মান্দায় ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান পানির নিচে<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ), ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ :

নওগাঁর মান্দায় মাঘের শেষে হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিলমান্দায়। এ বিলে অন্তত ৫ হাজার জমির ধান এখন পানির নিচে। বরেন্দ্র অঞ্চলের খাড়ি দিয়ে নেমে আসা পানিতে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এ ছাড়া ছাতড়া বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠের নিচু এলাকায় একইভাবে তলিয়ে গেছে আরও অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির ধান।

কৃষকদের অভিযোগ, বরেন্দ্র অঞ্চলের ১৮টি খাড়ির (ক্যানেল) সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দাতে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব খাড়ি দিয়ে পানি অনায়াসে চলে আসে মান্দার বিলে। আর এতেই তলিয়ে যায় বিলের বোরো আবাদ।

তাঁরা বলছেন, বিলমান্দার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে শিবনদ। কিন্তু নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদের বুকেও চাষ হয় বোরো ধানের। এটি খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে নিচের দিকে। তাহলে একমাত্র ফসল নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না তাঁদের।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রোপনকৃত ধানে সার, কীটনাশকসহ আগাছা পরিষ্কারের কাজ শেষ করেছেন কৃষকরা। আগামীতে দু’একবার কীটনাশক প্রয়োগ করলেই ঘরে উঠবে তাঁদের কাঙ্খিত সোনালী ধান।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে মান্দার বিলে নিয়ামতপুর উপজেলার দারাজপুর ও বিলজাওন এবং মান্দা উপজেলার পরানপুর, চেরাগপুর, ছুটিপুর, কোঁচড়া, বাদলঘাটা, বিলমান্দা, হলুদঘর, দাওয়াইল, সগুনিয়া, শ্রীকলা, গাগড়া, চাকদহসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে মূহুর্তেই তাঁদের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোনা, কুরকুচি, বিলহিলনা, বিলউথরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠে নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

কসবামান্দা গ্রামের কৃষক মাইনুল শেখ বলেন, এবারে বিলে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। জমিতে এরইমধ্যে সার-কীটনাশক দেওয়ার কাজ শেষ করেছেন। হালচাষ থেকে এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতে তাঁর সবশেষ হয়ে গেছে।

বাদলঘাটা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, বিলের ৭ বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান চাষ করেছিলেন। অনেক আশা নিয়ে এবার তিনি মাঠে নামেন। এসব জমিতে এখন প্রচুর পানি। তাঁদের রোপনকৃত জমির ওপর দিয়ে এখন নৌকা চলছে। বৃষ্টিতে তাঁকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর, বেনিপুর, শিশা, দরগাপাড়াসহ এ উপজেলার ১৮টি খাড়ি সংস্কার করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে। এসব খাড়ির সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দায়। একটু বৃষ্টি হলেই বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি এসব খাড়ি দিয়ে বিলমান্দায় অনায়াসে চলে আসে। তলিয়ে যায় বিলমান্দায় রোপনকৃত ফসল। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় বন্যার। এবারের বৃষ্টিতে এ বিলে কৃষকদের অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

তাঁদের দাবি, কালামারা সেতু থেকে চৌবাড়িয়া সেতু পর্যন্ত শিবনদ খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে। তাহলে বোরো ধান নিয়ে তাঁদের আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবেনা। বর্ষা মৌসুমেও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবেন এ অঞ্চলের মানুষ।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বিলমান্দা ও ছাতড়ার বিলে ১১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, শিবনদ ভরাট হওয়ার কারণে বিলমান্দায় প্রতিবছর সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নদটি খনন করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। #

আপলোডকারীর তথ্য

মান্দায় ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান পানির নিচে<<মহাদেবপুর দর্পণ>>

প্রকাশের সময় : ১০:১১:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
Spread the love

মহাদেবপুর দর্পণ, জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ), ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ :

নওগাঁর মান্দায় মাঘের শেষে হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিলমান্দায়। এ বিলে অন্তত ৫ হাজার জমির ধান এখন পানির নিচে। বরেন্দ্র অঞ্চলের খাড়ি দিয়ে নেমে আসা পানিতে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। এ ছাড়া ছাতড়া বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠের নিচু এলাকায় একইভাবে তলিয়ে গেছে আরও অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির ধান।

কৃষকদের অভিযোগ, বরেন্দ্র অঞ্চলের ১৮টি খাড়ির (ক্যানেল) সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দাতে। একটু বৃষ্টি হলেই এসব খাড়ি দিয়ে পানি অনায়াসে চলে আসে মান্দার বিলে। আর এতেই তলিয়ে যায় বিলের বোরো আবাদ।

তাঁরা বলছেন, বিলমান্দার ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে শিবনদ। কিন্তু নদটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদের বুকেও চাষ হয় বোরো ধানের। এটি খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে নিচের দিকে। তাহলে একমাত্র ফসল নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না তাঁদের।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রোপনকৃত ধানে সার, কীটনাশকসহ আগাছা পরিষ্কারের কাজ শেষ করেছেন কৃষকরা। আগামীতে দু’একবার কীটনাশক প্রয়োগ করলেই ঘরে উঠবে তাঁদের কাঙ্খিত সোনালী ধান।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে মান্দার বিলে নিয়ামতপুর উপজেলার দারাজপুর ও বিলজাওন এবং মান্দা উপজেলার পরানপুর, চেরাগপুর, ছুটিপুর, কোঁচড়া, বাদলঘাটা, বিলমান্দা, হলুদঘর, দাওয়াইল, সগুনিয়া, শ্রীকলা, গাগড়া, চাকদহসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে মূহুর্তেই তাঁদের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোনা, কুরকুচি, বিলহিলনা, বিলউথরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠে নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

কসবামান্দা গ্রামের কৃষক মাইনুল শেখ বলেন, এবারে বিলে ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেন। জমিতে এরইমধ্যে সার-কীটনাশক দেওয়ার কাজ শেষ করেছেন। হালচাষ থেকে এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু একদিনের বৃষ্টিতে তাঁর সবশেষ হয়ে গেছে।

বাদলঘাটা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম বলেন, বিলের ৭ বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধান চাষ করেছিলেন। অনেক আশা নিয়ে এবার তিনি মাঠে নামেন। এসব জমিতে এখন প্রচুর পানি। তাঁদের রোপনকৃত জমির ওপর দিয়ে এখন নৌকা চলছে। বৃষ্টিতে তাঁকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের অভিযোগ, নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর, বেনিপুর, শিশা, দরগাপাড়াসহ এ উপজেলার ১৮টি খাড়ি সংস্কার করে পানিপ্রবাহ বাড়ানো হয়েছে। এসব খাড়ির সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে বিলমান্দায়। একটু বৃষ্টি হলেই বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি এসব খাড়ি দিয়ে বিলমান্দায় অনায়াসে চলে আসে। তলিয়ে যায় বিলমান্দায় রোপনকৃত ফসল। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় বন্যার। এবারের বৃষ্টিতে এ বিলে কৃষকদের অন্তত ৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

তাঁদের দাবি, কালামারা সেতু থেকে চৌবাড়িয়া সেতু পর্যন্ত শিবনদ খনন করা হলে বৃষ্টির পানি অনায়াসে নেমে যাবে। তাহলে বোরো ধান নিয়ে তাঁদের আর দুঃশ্চিন্তা করতে হবেনা। বর্ষা মৌসুমেও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবেন এ অঞ্চলের মানুষ।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বিলমান্দা ও ছাতড়ার বিলে ১১৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, শিবনদ ভরাট হওয়ার কারণে বিলমান্দায় প্রতিবছর সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নদটি খনন করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। #