নওগাঁ ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার :
মহাদেবপুর দর্পণ.কম ও সাপ্তাহিক মহাদেবপুর দর্পণের পরীক্সষমূলক সম্প্রচারে আপনাকে স্বাগতম ## আপামর মেহনতি মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত নওগাঁর নিজস্ব পত্রিকা ## নওগাঁর ১১ উপজেলার সব খবর সবার আগে ## মহাদেবপুর দর্পণ একবার পড়ুন, ভালো না লাগলে আর পড়বেন না ## যেখানে অনিয়ম সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ ## যেখানে দূর্নীতি, অন্যায়, অবিচার সেখানেই মহাদেবপুর দর্পণ সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ## মহাদেবপুর দর্পণের ফেসবুক আইডিতে ফলো দিয়ে সঙ্গেই থাকি ##

ইতিহাস কথা কয় : পোরশার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মুসাফিরখানা

মহাদেবপুর দর্পণ, এম, রইচ উদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার, পোরশা (নওগাঁ), ৬ অক্টোবর ২০২০ :

পোরশায় মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ মুসাফিরখানা।
শতবছর পূর্বের কথা। বরেন্দ্র ভুমি ক্ষ্যাত নওগাঁর পোরশা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পোরশা গ্রাম। চারিদিকে শুধু বিভিন্ন গাছগাছড়ার জঙ্গলে ঘেরা। পাঁয়ে হেঁটে চলাই ছিল সে সময়ের একমাত্র উপায়।

পাঁয়ে হেঁটে চলতেই নেমে যেত সন্ধ্যা। ওই সময়ে ছিল চোর-ডাকাত সহ বিভিন্ন অদৃশ্য শক্তির উপদ্রব। যে কোন মানুষ এই এলাকায় এসে সন্ধা নামলেই খুঁজতো আশ্রয়স্থল। এখানে তেমন কোন আবাসিক বাস ভবন না থাকায় কারও ভাগ্যে জুটতো কোন এক মানুষের আবাসস্থলে নিরাপদ আশ্রয়। আবার কারও ভাগ্যে জুটতো ভোগান্তি।

মানুষের এমন ভোগান্তি আর কষ্টের কথা চিন্তা করে প্রায় শতবছর পূর্বে তৎকালীন পোরশা গ্রামের জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ তৈরি করেছিলেন মুসাফিরদের রাত যাপনের জন্য একটি মাটির ঘর। আর তিনি এই মাটির ঘরটির নাম দিয়েছিলেন মুসাফিরখানা।

বিভিন্ন স্থান বা গ্রাম থেকে পোরশায় আশা মানুষ বিপদে আপদে যেন এখানে আশ্রয় পান। মুসাফির বা পথিকদের রাত-দিনে আশ্রয় বা বিশ্রামের জন্যই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ নিজ অর্থে মুসাফির খানায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। আর এটি সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিচালনার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানটির নামে ওয়াকফ্ করে দিয়েছিলেন ৮০বিঘা জমি।

তখন থেকেই ৮০ বিঘা জমি থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে মুসাফিরখানার যাবতীয় খরচ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে মানব দরদী খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ বেঁেচ নেই আছে তার প্রতিষ্ঠিত মুসাফির খানাটি।

উন্নত রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এ যুগেও টিকে রয়েছে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত মুসাফিরখানাটি। এখন আর নেই মাটি দিয়ে নির্মিত ঘরটি বর্তমানে এটি একটি সু-উচ্চ অট্টালিকায় পরিনত হয়েছে। আগের মতই দূর-দূরান্ত থেকে আশা মুসাফির বা পথিকদের স্বাগত জানায় এ মুসাফিরখানাটি।

বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পোরশা উপজেলা। আর মুসাফিরখানাটি পোরশা গ্রামের প্রান কেন্দ্র মিনা বাজারে অবস্থিত। বাজারের প্রধান রাস্তার সাথে লাগানো পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দোতলা ভবন। ভিতরে প্রবেশের আগেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এখানে একসাথে ৬০জন মুসাফির দিন বা রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

এদের সকলের বিনামুল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ মারা যাওয়ার পর সিরাজুল শাহ্ চৌধুরী মুসাফিরখানা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে তিনি অপরগতায় বর্তমানে পোরশা আল জামেয়া আল আরাবিয়া দারুল হেদায়া মাদ্রসার মহা-পরিচালক আলহাজ্ব শাহ্ শরিফুদ্দীন চৌধুরী পরিচালনা করছেন।

এখানে একটি শক্তিসালী কমিটি ছাড়াও একজন ম্যানেজার ও একজন কর্মচারী মুসাফিরখানাটি দেখভাল করেন। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৫০০খ্রিস্টাব্দের পরে তৎকালীন বাদশা আলমগীরের আমলে ইরান থেকে হিজরত করতে বাংলাদেশের বরিশালে আসেন কয়েকজন শাহ্ বংশের মুরব্বী। এ

দের মধ্যে ফাজেল শাহ্, দ্বীন মোহাম্মদ শাহ্, ভাদু শাহ্, মুহিদ শাহ্, জান মোহাম্মদ শাহ্, খান মোহাম্মদ শাহ্ অন্যতম। পরবর্তীতে বরিশাল থেকে তারা আসেন বর্তমান পোরশা নাম গ্রামে। যদিও সে সময় এখানে কোন বসতবাড়ি ছিলনা। চারিদিকে ছিল শুধু বন-জঙ্গল। তারপরেও এলাকটি ভাল লাগায় তারা এখানে ঘর বাড়ি নির্মান করে বসবাস শুরু করেন।

এখানে বসবাস করার সুবাদে এই এলাকার জমি জমা নিয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখানে জমিদারী করেন। তাদেরই বংশধর খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ যিনি এই মুসাফিরখানাটি নির্মান করেছিলেন। ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি এখানে প্রায় ২৫বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিনি এখানে দুর-দুরান্ত থেকে আশা মানুষ থাকে। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ৬০জন মানুষ একসাথে এখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান।

মুসাফিরখানা পরিচালনা কমিটির প্রধান আলহাজ্ব শাহ্ শরিফুদ্দীন চৌধুরী জানান, ১৯০৮খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ্য ৮০ বছর মাটির ঘরেই এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। পরে ১৯৮৮খ্রিষ্টাব্দে মুসাফিরখানার জমি হতে আয় দিয়েই বর্তমান ভবনটি নির্মান করা হয়েছে।

বর্তমানে আমাদের এ এলাকায় কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় প্রতিদিন এখানে মুসাফির হিসাবে অনেক মানুষ থাকে। আমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করি। তবে বছরের অনান্য দিনের তুলনায় রমজান মাসে এখানে আলেম-ওলামা সহ মানুষের ব্যাপক ভিড় হয় বলে তিনি জানান।#

আপলোডকারীর তথ্য

ইতিহাস কথা কয় : পোরশার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মুসাফিরখানা

প্রকাশের সময় : ০২:০৩:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

মহাদেবপুর দর্পণ, এম, রইচ উদ্দিন, স্টাফ রিপোর্টার, পোরশা (নওগাঁ), ৬ অক্টোবর ২০২০ :

পোরশায় মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ মুসাফিরখানা।
শতবছর পূর্বের কথা। বরেন্দ্র ভুমি ক্ষ্যাত নওগাঁর পোরশা উপজেলার প্রাণকেন্দ্র পোরশা গ্রাম। চারিদিকে শুধু বিভিন্ন গাছগাছড়ার জঙ্গলে ঘেরা। পাঁয়ে হেঁটে চলাই ছিল সে সময়ের একমাত্র উপায়।

পাঁয়ে হেঁটে চলতেই নেমে যেত সন্ধ্যা। ওই সময়ে ছিল চোর-ডাকাত সহ বিভিন্ন অদৃশ্য শক্তির উপদ্রব। যে কোন মানুষ এই এলাকায় এসে সন্ধা নামলেই খুঁজতো আশ্রয়স্থল। এখানে তেমন কোন আবাসিক বাস ভবন না থাকায় কারও ভাগ্যে জুটতো কোন এক মানুষের আবাসস্থলে নিরাপদ আশ্রয়। আবার কারও ভাগ্যে জুটতো ভোগান্তি।

মানুষের এমন ভোগান্তি আর কষ্টের কথা চিন্তা করে প্রায় শতবছর পূর্বে তৎকালীন পোরশা গ্রামের জমিদার খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ তৈরি করেছিলেন মুসাফিরদের রাত যাপনের জন্য একটি মাটির ঘর। আর তিনি এই মাটির ঘরটির নাম দিয়েছিলেন মুসাফিরখানা।

বিভিন্ন স্থান বা গ্রাম থেকে পোরশায় আশা মানুষ বিপদে আপদে যেন এখানে আশ্রয় পান। মুসাফির বা পথিকদের রাত-দিনে আশ্রয় বা বিশ্রামের জন্যই এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ নিজ অর্থে মুসাফির খানায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। আর এটি সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিচালনার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানটির নামে ওয়াকফ্ করে দিয়েছিলেন ৮০বিঘা জমি।

তখন থেকেই ৮০ বিঘা জমি থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে মুসাফিরখানার যাবতীয় খরচ চালানো হচ্ছে। বর্তমানে মানব দরদী খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ বেঁেচ নেই আছে তার প্রতিষ্ঠিত মুসাফির খানাটি।

উন্নত রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এ যুগেও টিকে রয়েছে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলার পোরশা গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত মুসাফিরখানাটি। এখন আর নেই মাটি দিয়ে নির্মিত ঘরটি বর্তমানে এটি একটি সু-উচ্চ অট্টালিকায় পরিনত হয়েছে। আগের মতই দূর-দূরান্ত থেকে আশা মুসাফির বা পথিকদের স্বাগত জানায় এ মুসাফিরখানাটি।

বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত পোরশা উপজেলা। আর মুসাফিরখানাটি পোরশা গ্রামের প্রান কেন্দ্র মিনা বাজারে অবস্থিত। বাজারের প্রধান রাস্তার সাথে লাগানো পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দোতলা ভবন। ভিতরে প্রবেশের আগেই রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এখানে একসাথে ৬০জন মুসাফির দিন বা রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

এদের সকলের বিনামুল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ মারা যাওয়ার পর সিরাজুল শাহ্ চৌধুরী মুসাফিরখানা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে তিনি অপরগতায় বর্তমানে পোরশা আল জামেয়া আল আরাবিয়া দারুল হেদায়া মাদ্রসার মহা-পরিচালক আলহাজ্ব শাহ্ শরিফুদ্দীন চৌধুরী পরিচালনা করছেন।

এখানে একটি শক্তিসালী কমিটি ছাড়াও একজন ম্যানেজার ও একজন কর্মচারী মুসাফিরখানাটি দেখভাল করেন। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৫০০খ্রিস্টাব্দের পরে তৎকালীন বাদশা আলমগীরের আমলে ইরান থেকে হিজরত করতে বাংলাদেশের বরিশালে আসেন কয়েকজন শাহ্ বংশের মুরব্বী। এ

দের মধ্যে ফাজেল শাহ্, দ্বীন মোহাম্মদ শাহ্, ভাদু শাহ্, মুহিদ শাহ্, জান মোহাম্মদ শাহ্, খান মোহাম্মদ শাহ্ অন্যতম। পরবর্তীতে বরিশাল থেকে তারা আসেন বর্তমান পোরশা নাম গ্রামে। যদিও সে সময় এখানে কোন বসতবাড়ি ছিলনা। চারিদিকে ছিল শুধু বন-জঙ্গল। তারপরেও এলাকটি ভাল লাগায় তারা এখানে ঘর বাড়ি নির্মান করে বসবাস শুরু করেন।

এখানে বসবাস করার সুবাদে এই এলাকার জমি জমা নিয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখানে জমিদারী করেন। তাদেরই বংশধর খাদেম মোহাম্মদ শাহ্ যিনি এই মুসাফিরখানাটি নির্মান করেছিলেন। ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি এখানে প্রায় ২৫বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিনি এখানে দুর-দুরান্ত থেকে আশা মানুষ থাকে। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ৬০জন মানুষ একসাথে এখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান।

মুসাফিরখানা পরিচালনা কমিটির প্রধান আলহাজ্ব শাহ্ শরিফুদ্দীন চৌধুরী জানান, ১৯০৮খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ্য ৮০ বছর মাটির ঘরেই এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। পরে ১৯৮৮খ্রিষ্টাব্দে মুসাফিরখানার জমি হতে আয় দিয়েই বর্তমান ভবনটি নির্মান করা হয়েছে।

বর্তমানে আমাদের এ এলাকায় কোন আবাসিক হোটেল না থাকায় প্রতিদিন এখানে মুসাফির হিসাবে অনেক মানুষ থাকে। আমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করি। তবে বছরের অনান্য দিনের তুলনায় রমজান মাসে এখানে আলেম-ওলামা সহ মানুষের ব্যাপক ভিড় হয় বলে তিনি জানান।#