
মহাদেবপুর দর্পণ, কিউ,এম,সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ), ৬ এপ্রিল ২০২০ :

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিদিন নওগাঁর মহাদেবপুর থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

থানা পুলিশ প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলা সদর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লীতে গিয়ে সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বন্ধ রাখা, মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে বাড়ীর বাইরে না আসার প্রচারনা চালানো এবং প্রয়োজনে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।

প্রতিদিন থানা পুলিশ পিকআপ ভ্যান, ভূটভুটি, রিক্সাভ্যান প্রভৃতিতে মাইক টাঙ্গিয়ে রেকর্ড করা শতর্কবানী ও সরকারী আদেশ প্রচার করছে। এছাড়া পুলিশের বহর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হ্যান্ড মাইকের সাহায্যেও প্রচারনা চালাচ্ছে।

থানা পুলিশ কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেলে চেপে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রচারনা সত্ত্বেও অপ্রয়োজনে যারা বাড়ীর বাইরে এসে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভীড় জমাচ্ছেন, তাদেরকে বাড়ী ফেরানোর ব্যবস্থা করছেন। পুলিশের দলগুলো সারাদিন এবং গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অলি গলি গিয়ে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশের এই অব্যাহত তৎপরতায় সাধারণ মানুষ বাড়ীর বাইরে আসা কমিয়েছেন। কমেছে যানবাহন, সিএন্ডজি, অটোরিক্সা, চার্জার ভ্যান চলাচল। প্রায় সারাদিনই বন্ধ থাকছে অপ্রয়োজনীয় দোকান পাট। পুলিশের ভয়ে এখন উঠতি বয়সের তরুণদেরকেও আর মোড়ে মোড়ে দেখা যাচ্ছেনা।

অভিভাবকেরা জানান, স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা এখন যে যার বাড়ীতে এসেছে। কিন্তু উঠতি বয়সের এসব তরুণ তরুণী বেশীরভাগই বাড়ীতে বন্দী হয়ে থাকতে নারাজ। কোন না কোন অজুহাতে তারা বাড়ীর বাইরে যাবার বাহানা ধরতো। পুলিশী তৎপরতা শুরু হওয়ায় এখন সে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

পুলিশ প্রতিটি গলিতে গিয়ে কাউকে বাড়ীর বাইরে দেখলেই ধাওয়া করে তাদেরকে বাড়ীতে ঢুকতে বাধ্য করছেন। অভিভাবকদের অনেকে, এমনকি বাড়ীর মহিলারাও তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডে থানা পুলিশের বহর অবস্থান নিলেই যে দুএকটি যান চলাচল করছিল সেগুলোও পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। পথচারীরাও দ্রুত বাড়ী ফেরেন। তাদের সারাদিনের তৎপরতায় এখন বেশীরভাগ সময়ই যানশুণ্য দেখা যায় বাসস্ট্যান্ড।

গ্রামের মানুষ তেমন সচেতন ছিলেননা। তারা প্রতিদিনই বিকেলে চলে আসতেন উপজেলা সদরে অথবা গ্রামের কাছাকাছি মোড়ে। পুলিশের কঠোর পদক্ষেপে এখন সে অবস্থারও উন্নতি হয়েছে। গ্রামের মানুষদের মধ্যে এখন করোনাভীতির চেয়ে পুলিশীর ভয়ই বেশী দেখা দিয়েছে। বাজারে বা মোড়ে গেলে করোনায় আক্রান্ত হবার ভয় নয় বরং পুলিশ ধাওয়া করবে এই ভয়েই তারা বাজারে আসা কমিয়েছে।

গত শনিবার থেকে উপজেলা প্রশাসন বিকেল ৫ টার পর শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছে। এসময় কেউ যেন দোকান না খোলেন সে ব্যাপারে প্রথম দিন থেকেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশ উপজেলার অলিগলি গিয়ে যে কোন দোকান খোলা দেখলেই তা বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন সব দোকানই বন্ধ থাকছে।

এছাড়া সরকারী খাবার বিতরণের সময়ও থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপর। প্রতিটি ইউনিয়নে খাবার বিতরণের সময় একজন এসআই সহ পুলিশের কমপক্ষে ২ জন সদস্য উপস্থিত থাকছেন।

এসময় দোকান বন্ধ রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা প্রভৃতি সরকারী নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিদিন যে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে, থানা পুলিশ তাদের সাথে গিয়েও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

শনিবার বিকেলে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ঢাকার বড় বাস যোগে পুলিশের একটি বিশাল দল নওগাঁ জেলা সদর থেকে মহাদেবপুর আসে। তারা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে মানুষকে সচেতন করার প্রচারণা চালান। এসময় এএসপি নিজে হ্যান্ড মাইকযোগে মানুষকে বাড়ী ফিরে যাবার আহ্বান জানান।

তিনি জানান, পুলিশ জনগণের বন্ধু। জনগণের যে কোন প্রয়োজনে পুলিশ নিজের জীবন বাজী রেখে তাদের সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি স্থানীয় জনতাকে নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে, সন্তানদের ভাল রাখতে বাড়ীতে অবস্থানের পরামর্শ দেন।

সোমবার সকালে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে থানা পুলিশ মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, সচেতন হোন, বাড়ীতে অবস্থান করুন, নিজে বাঁচুন, পরিচারকে সুরক্ষিত রাখুন।

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মানুষের এই দু:সময়ে প্রতিটি পুলিশ সদস্য জীবন বাজী রেখে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। নিরলস কাজ করার ফলে অনেকেই কান্ত, অবসন্ন ও অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। কিন্তু তারা সেদিকে খেয়াল না করে প্রতিনিয়ত মানুষের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। তাদের মতে, মানুষ একদিন তাদের এ অকান্ত পরিশ্রমের কথা মনে রাখবেন। #